তা জানি; কিন্তু অভিনয় করতে গিয়ে যদি ধরা পড়ে যাস? অথবা তার প্রেমে পড়ে যাস?
দূর, ঐ মোল্লার প্রেমে আমি পড়ব, একথা ভাবতে পারলি? শোন, আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর, প্ল্যানটা সাকসেসফুল করতে পারব।
পারলে তো ভালোই, না পারলে ভবিষ্যতে তোকেই পস্তাতে হবে।
আরে যাহ, পস্তাবার মতো কোনো কাজ করলে তো পস্তাবো।
তা হলে আমার আর কিছু বলার নেই।
এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও যখন হালিম ক্লাশ করতে এল না তখন রাফিয়া চিন্তা করল, তা হলে কি গুলিলাগা হাতে ইনফেকশান হয়েছে? ঐ দিন ফেরার সময় ড্রাইভারকে মেডিকেলে যেতে বলল, সেখানে গিয়ে জানতে পারল, কোনো ইনফেকশান হয় নি। আজ সকালে তাকে ছেড়ে দেয় হয়েছে। পরের সপ্তাহেও যখন এল না তখন ভাবল হয়তো দেশের বাড়িতে গেছে।
আজ তাকে ক্লাশে দেখে স্বস্তি পেল। ক্লাশ শেষ হওয়ার পর বাইরে এসে দেখল, হালিম লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছে। কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন?
হালিম হাঁটতে হাঁটতেই সালামের উত্তর দিয়ে বলল, ভালো। আপনি কেমন আছেন? আপনার ছোট ভাইয়া ভালো আছেন?
রাফিয়া বলল, হ্যাঁ, ভালো। তারপর বলল, একটু সময় হবে, আলাপ করব।
এতক্ষণ হালিম তার দিকে ভালো করে তাকায় নি। আলাপ করার কথা শুনে। থমকে দাঁড়িয়ে দেখল, মাথা রুমাল দিয়ে বাঁধা, সারা শরীর ওড়না দিয়ে ঢাকা। বলল, ঠিক আছে, চলুন ঐ ঘাসের উপর বসি। বসার পর বলল, এবার বলুন কি আলাপ করতে চান।
আমি ইসলামের গোঁড়ামিত্বের ব্যাপারে আলাপ করতে চাই।
আপনি বোধ হয় জানেন না, ইসলামে গোঁড়ামির স্থান নেই। তবু কি কি জিনিস আপনার কাছে গোঁড়ামি বলে মনে হয়?
আমার ধারণা, মোল্লাদের হীন মনোবৃত্তি ও গোঁড়ামির কারণে মুসলমানরা অন্যান্য জাতির চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে নারীরা সমাজ, দেশ। ও দশের জন্য কিছু করতে পারছে না। তারা ঘরে বাইরে সব জায়গায় পুরুষদের কাছে অহরহ নির্যাতিত হচ্ছে।
আপনার ধারণা আংশিক সত্য হলেও পুরোটা নয়।
ব্যাখ্যা করুন।
আসলে মোল্লাদের হীন মনোবৃত্তির কারণে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে না। তারা মেয়েদের পর্দা করতে বলে। কারণ নারীরা কন্যা, জায়া ও জননী। তাই তারা স্নেহ, ভালবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্রী। অশিক্ষা ও কুশিক্ষার ফলে এবং সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে যে অধিকার দিয়েছেন ও তাদের কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সে সব না জানার ফলে নির্যাতিত হচ্ছে। অপরপক্ষে পুরুষদের শক্তি সামর্থ নারীদের তুলনায় বেশি, তারা রুজী-রোজগার করে, তারা সংসারের কর্তা। সৃষ্টিকর্তা নারীদের প্রতি যে কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা তারাও জানে না। ফলে নারীদের উপর যথেচ্ছা অত্যাচার করে। শুধু যে অশিক্ষিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে তা নয়, শিক্ষিত সমাজেও হচ্ছে। এর কারণ শিক্ষিত সমাজের নারী-পুরুষেরা সৃষ্টিকর্তার বিধি বিধান জানেও না, মানেও না। তারা পশ্চাত্য সভ্যতা অনুকরণ-অনুসরণ করতে গিয়ে ধর্মকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নারী পুরুষ উভয়েই যদি আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে যার যা কর্তব্য পালন করত, তা হলে নারীরা নির্যাতিত হত না। তারপর রাফিয়াকে জিজ্ঞেস করল, আপনি তো মুসলমান।
নিশ্চয়।
কুরআন যে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী নিশ্চয় বিশ্বাস করেন?
করি।
কুরআনে মুসলমান নর-নারীর জন্য যেসব বিধি বিধান দিয়েছেন, তা কি জানেন?
না।
কেন জানেন না বলতে পারেন?
রাফিয়া একথার উত্তর দিতে না পেরে চুপ করে রইল।
অল্পক্ষণ অপেক্ষা করে হালিম বলল, আল্লাহ কুরআন পাকে তার বান্দাদের বিশেষ করে মুসলমানদের যা কিছু বলেছেন, সেসব মুসলমান হিসাবে নারী পুরুষ নির্বিশেষে জানা উচিত কিনা বলুন?
হ্যাঁ, উচিত।
তা হলে চিন্তা করে দেখুন, একজন শিক্ষিত মুসলিম নারী হয়েও আপনি উচিত কাজটি করছেন না কেন? আসলে সারা বিশ্বের নর-নারীদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক ছাড়া কেউ-ই উচিত কাজগুলো করছে না। তাই সারা পৃথিবী জুড়ে আজ অশান্তির আগুন জ্বলছে। যেসব দেশ আজ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে চরম উন্নতি সাধন করেছে, সেসব দেশের মানুষও কি শান্তিতে বাস করতে পারছে? পারছে না, বরং সেসব দেশে সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ, সুদ ও ঘুষ আমাদের মতো অল্পশিক্ষিত ও অনুন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। উন্নত দেশগুলোতে নারীদের অবাধ স্বাধীনতার ফলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কুমারী মেয়ে জারজ সন্তান জন্ম দিচ্ছে। উঁচু নিচু সব সমাজের দাম্পত্য জীবনের মধুর সম্পর্ক গরলে পরিণত হয়েছে।
আপনি হয়তো আমার কথা শুনে খুব বিরক্ত হচ্ছেন। তবু আরো দুএকটা কথা বলে পারছি না। নারী স্বাধীনতা মানে উচ্ছঙখল বা বেহায়াপনা নয়। রাস্তা ঘাটে, বাজারে, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে, সভা-সমিতিতে নারীদের রূপ-যৌবন দেখিয়ে বেড়ান যদি নারী স্বাধীনতা ও সভ্য সমাজের পরিচয় হয়, তা হলে সেই স্বাধীনতা ও সভ্যতা শুধু নারীদের নয়, সমাজ ও দেশের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। বরং নারীকে, সমাজকে ও দেশকে অবনতির শেষ ধাপে পৌঁছে দেবে। আর নারীরা পূর্বযুগের মতো চরম নির্যাতিত হবে। ইদানিং তো নারীরা পুরুষদের খেলার সামগ্রীর মতো হয়ে গেছে। এরপর যে কি হবে তা আল্লাহ ভালো জানেন।