রাফিয়া বড়লোকের মেয়ে। চার ভাইয়ের একমাত্র বোন। রূপসী ও ভালো ছাত্রী। উঁচু সোসাইটিতে খুব সুনাম। ভার্সিটিতে ছেলেরা তার সঙ্গে দু’একটা কথা বলতে পারলে ধন্য মনে করে। তাই তার অহঙ্কার থাকা স্বাভাবিক। হালিম। বন্ধুত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিতে বললে অহঙ্কারে আঘাত লাগল, রেগে উঠে বলল, কেন বলুন তো?
সে কথা পরে বলছি। তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার তো বন্ধুর অভাব নেই, তবু কেন এই অভদ্র, ইতর, ছোটলোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছেন?
খুব রেগে ছিল বলে রাফিয়া হালিমের কথার উত্তর দিতে না পেরে চুপ করে রইল।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হালিম আবার বলল, আপনি উত্তর দিতে না পারলেও আমি জানি।
তা হলে জিজ্ঞেস করলেন কেন?
সে কথা না শোনাই ভালো।
নাই ভালো হোক, তবু আমি শুনতে চাই।
আপনি আমার উপর রেগে আছেন। কথাটা শুনলে আরো রেগে যাবেন। তাই বলতে চাচ্ছিলাম না। একান্তই যখন শুনতে চান তখন বলছি শুনুন, দু’টো কারণে কথাটা ফিরিয়ে নিতে বলেছি। তার একটা কারণ বলি, আপনি ছেলে হলে অথবা আমি মেয়ে হলে কোনো আপত্তি করতাম না।
ছেলেমেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হলে দোষ কিসের? বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনে?
এ ব্যাপারে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে এবার অনেক সময়ও লাগবে। আপনি চাইলে পরে একদিন আলাপ করা যাবে। এখন এতটুকু বলতে পারি, পরিণত বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও মেলামেশা করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কুরআন ও হাদিসে নিষেধ করেছেন।
এমন সময় আশফাক কয়েক পদের ফলের দু’তিনটে প্যাকেট নিয়ে এসে বেডের পাশের টেবিলের উপর রাখল।
হালিম সেদিক তাকিয়ে বলল, এটা আপনি ঠিক করলেন না।
আশফাক বলল, ঠিক বেঠিক জানি না। মন চাইল তাই নিয়ে এলাম। তারপর রাফিয়াকে বলল, চল, এবার আমরা যাই।
রাফিয়া উঠে দাঁড়াতে আশফাক আবার বলল, আমি হয়তো আর আসতে পারব না, রাফিয়া এসে দেখে যাবে।
হালিম বলল, কারো আসার প্রয়োজন নেই। কাল হয়তো আমি ছাড়া পেয়ে যাব।
আশফাক বলল, রাফিয়ার সঙ্গে একদিন বাসায় এলে খুশী হব।
হালিম রাফিয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বলল, আপনাকে খুশী করতে পারব কিনা জানি না। তবে আল্লাহ রাজি থাকলে একদিন আসব।
আশফাক আসি বলে রাফিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠল।
হালিম বন্ধুত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বলে রাফিয়ার মন খারাপ।
তাই দেখে গাড়ি চলতে শুরু করার পর আশফাক জিজ্ঞেস করল, তোর মন খারাপ কেন? হালিম কি তোকে তেমন কিছু বলেছেন? ফিরে এসে শুনতে পেলাম, ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও মেলামেশার কথা কি যেন বলছিলেন?
রাফিয়া বলল, আমি বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রহণ করল না। কারণ জিজ্ঞেস করতে কুরআন হাদিসের বাণী শুনিয়ে দিলেন।
তোর মতো মেয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল শুনে খুব অবাক লাগছে।
ভার্সিটিতে পড়লে কি হবে, খুব গোঁড়া ধার্মিক।
তা হতে পারে, তবে ছেলেটা খুব সুন্দর। কথাবার্তাও খুব মার্জিত। গোড়া ধার্মিক বলে তোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় নি, সেজন্য মন খারাপের কি আছে? তা হারে, হালিম ছাত্র হিসাবে কেমন?
ভার্সিটির সেরা ছাত্র। ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষায় আমাকে টপকে গেছে।
আশফাক হেসে উঠে বলল, তাই তো বলি আমার বোনটার কেন মন খারাপ? ওকে টপকাবার জন্য এ বছর নিশ্চয় ভালো করে পড়াশোনা করছিস?
তাতো করছি; কিন্তু টপকাতে পারব বলে মনে হয় না। তবে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারলে হয়তো টপকাতে পারতাম।
মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছু করতে পারে, তুইও কর। বন্ধুত্বও পাবি, টপকাতে ও পারবি।
দু’টোরই জন্য নিশ্চয় চেষ্টা করব। ওকে টপকাতে পারি আর না পারি, ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে গোঁড়ামি ছাড়াবই।
ছোট বোনটা যে খুব জেদী, আশফাক জানে। একবার যে কাজ করবে বলবে, তা সবাই বাধা দিলেও করবেই। তাই আবার হেসে উঠে বলল, দেখিস, বন্ধুত্ব করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়িস না যেন।
কথাটার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে রাফিয়া লজ্জা পেলেও গাল ফুলিয়ে বলল, ছোট বোনকে এরকম কথা বলতে পারলে?
তুই রাগ করছিস কেন? বড় ভাই হিসাবে সাবধান করলাম।
ততক্ষণে গাড়ি বাসায় পৌঁছে গেছে। তাই রাফিয়া আর কিছু বলল না।
.
রাফিয়া ও তার ভাই যেন দেখতে না আসে সে জন্যে হালিম মিথ্যে করে বলেছিল, কাল বাসায় চলে যাবে। মেডিকেলে তাকে এক সপ্তাহ থাকতে হল। তারপর হলে ফিরে ডাক্তারের কথা মতো আরো এক সপ্তাহ রেস্ট নিল। প্রায় পনের দিন পর ক্লাস করতে এল।
.
ঐ দিন মেডিকেল থেকে ফিরে রাফিয়া হালিমকে নিয়ে অনেক চিন্তা করল, কিভাবে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে।
পরের দিন ভার্সিটিতে এসে শবনমকে গতকালের ঘটনা জানিয়ে বলল, ওকে আপমান করার জন্য তোকে নিয়ে যে প্ল্যান করেছিলাম, তা আর সম্ভব নয়। তাই অন্য একটা প্ল্যান করেছি। বলছি শোন, কুরআন-হাদিসে মেয়েদের সম্পর্কে কি বলা হয়েছে সেসব জেনে ধার্মিক মেয়ের অভিনয় করে ওকে কাছে টানার চেষ্টা করব। যখন দেখব, আমাকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়েছে তখন অভিনয় করার কথা বলে অপমান করে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেব। প্ল্যানটা কি রকম বল। দেখি?
শবনম বলল, প্ল্যানটা নিঃসন্দেহে ভালো, কিন্তু তুই যদি হেরে যাস?
রাফিয়া কপাল কুঁচকে বলল, হেরে যাব মানে? তুই তো জানিস, হার কি জিনিস আমি জানি না।