ছেলেটা লোলুপ দৃষ্টিতে রাফিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলল, বেশ করছি মেরেছি, তাতে আপনার কি? নিজের কাজে যান।
আশফাক কঠিন স্বরে বলল, ওর ভাড়া দিয়ে মাফ চেয়ে নিন।
সঙ্গের ছেলে দুটো একটু এগিয়ে গিয়েছিল। আশফাকের কথা শুনতে পেয়ে ফিরে এসে একজন বলল, সঙ্গে মেয়ে আছে বলে কিছু বললাম না, নচেৎ আমাদের ব্যাপারে নাক গলানর মজা বুঝিয়ে দিতাম।
আশফাক তার কথা গ্রাহ্য না করে আবার ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে একইস্বরে বলল, কি হল? ভাড়াটা দিয়ে মাফ চেয়ে নিন।
ছেলেটা সঙ্গিদের উদ্দেশ্যে বলল, ধরতো শালাকে আমাদের সঙ্গে লাগার মজা বুঝিয়ে দিই। তারপর এগিয়ে এসে মুখে ঘুষি চালাল।
হালিম একটু আগে মার্কেটিং করতে এসে ঘটনাটা দেখছিল। এবার দ্রুত এগিয়ে এসে ছেলেটার ঘুষি একহাতে ধরে অন্য হাতে তারই মুখে প্রচণ্ড জোরে কয়েকটা ঘুষি মারল। তারপর তাকে শূন্যে তুলে সঙ্গি দু’জনের গায়ে ছুঁড়ে দিল।
ছেলে তিনজন এই এলাকার মাস্তান। মার্কেটের ও আশপাশের দোকানদারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে। এদেরকে এই এলাকার সবাই চিনে। তাই ঘটনাটা সবাই দেখলেও কেউ এগিয়ে এল না। শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
মাস্তান তিনজনের কাছে রিভলবার আছে। আহত মাস্তানটা তাদের উপর এসে পড়লে তারা তাকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে দু’জনেই রিভলবার বের করল।
ততক্ষণে হালিম ওদের কাছে পৌঁছে গিয়ে একজনের রিভলবার ধরা হাতে কিক মারল। রিভলবারটা শূন্যে উড়ে কিছুটা দূরে ঠকাশ করে পড়ল। হালিম তাকে সামনে ধরে রেখে অন্য মাস্তানের দিকে এগোল। ফলে ঐ মাস্টানটা গুলি করতে পারল না। হালিম আরো কাছে এসে ধরা মাস্তানকে নিয়ে শুয়ে পড়ে রিভলবার ধরা মাস্তানকে ল্যাং মারল।
মাস্তানটা পড়ে গেলেও তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে উঠে পরপর দু’টো ফায়ার করল।
ঐ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হালিম ধরে রাখা মাস্তানকে সামনে আড়াল করেছিল, কিন্তু তার আগেই প্রথম গুলিটা হালিমের একটা হাতের বাজুতে ঢুকে গেল। আর দ্বিতীয় গুলিটা ঐ মাস্তানের বুকে ফুটে করে ঢুকে গেল। বাজুতে গুলি খেয়েও হালিম দমল না। ধরে থাকা মাস্তানকে ছেড়ে দিয়ে রিভলবার ধরা মাস্তানকে আবার ল্যাং মারতে আবার সেও পড়ে গেল। হালিম দ্রুত উঠে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রিভলবার কেড়ে নিয়ে তার দিকে তাক করে বলল, নড়লেই গুলি করব।
দোকানদাররা এতক্ষণ এগিয়ে না এলেও যে সব কাস্টোমার ও পথচারিরা ঘটনাটা দেখছিল, তারা এবার এগিয়ে এসে মাস্তানটাকে উত্তম মধ্যম দিতে লাগল। এমন সময় সিভিল ড্রেসে একটা জীপে আর্মি যাচ্ছিল। তারা গুলির শব্দ শুনে গাড়ি পার্ক করল। তারপর সেখানে এসে সবাইকে সরে যেতে বলল।
তাদেরকে দেখে আশফাক কাছে গিয়ে ঘটনাটা বলল।
হালিম আর্মিদের চিনতে পেরে রিভলবার সেখানেই ফেলে দিয়ে লোকজনের সঙ্গে মিশে গেল।
আর্মিরা পাবলিকদের সরিয়ে তিনটে পিস্তলসহ মাস্তানদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।
তাদের আগেই হালিম একটা স্কুটারে উঠে, ড্রাইভারকে মেডিকেলে যেতে বলল।
রাফিয়া এতক্ষণ হালিমের সাহস ও মাস্তানদের সঙ্গে লড়াই দেখে এত অবাক হয়েছিল যে, আর্মিরা কখন মাস্তানদের নিয়ে চলে গেছে খেয়াল নেই। আশফাক যখন বলল, হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকবি, বাসায় যারি না–তখন বাস্তবে ফিরে এল। বলল, জান ভাইয়া, যে ছেলেটা মাস্তানদের সঙ্গে লড়াই করছিল তাকে আমি চিনি। ভার্সিটিতে আমাদের সঙ্গে পড়ে। ওর নাম হালিম।
আশফাক হালিমকে মাস্তানদের সঙ্গে অকুতভয়ে লড়তে দেখে খুব অবাক হয়ে ভেবেছিল ছেলেটা মাস্তানের হাতটা ধরতে আর একটু দেরি হলেই ঘুষিটা তার নাকে পড়তে। এখন রাফিয়ার কথা শুনে আর একবার অবাক হল। বলল, তাই নাকি? তা হলে তো ছেলেটার খোঁজ নিতে হয়। তুই একটু দাঁড়া, আমি আসছি বলে হালিমকে খুঁজতে লাগল। না পেয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করল, যে ছেলেটা মাস্তানদের সঙ্গে লড়াই করছিল তাকে দেখেছেন?
লোকটা বলল, উনিতো একটু আগে স্কুটারে উঠে চলে গেলেন। জামা কাপড়ে অনেক রক্ত দেখলাম। মনে হয় ওনাকেও গুলি লেগেছে। তাই হয়তো মেডিকেলে গেছেন।
আশফাক ফিরে এসে রাফিয়াকে লোকটার কথা বলে বলল, আমারও মনে হচ্ছে মেডিকেলে গেছে। ওখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বাসায় ফিরব কি বলিস?
রাফিয়া বলল, তাই চল।
ওরা মেডিকেলে পৌঁছে জানতে পারল, হালিমকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে হালিমকে বেডে নিয়ে এলে আশফাক রাফিয়াকে নিয়ে সেখানে এল।
তাদেরকে দেখে নার্স জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি রোগীর আত্মীয়?
আশফাক বলল, না, তবে পরিচিত।
নার্স আবার জিজ্ঞেস করল, ইনার বাসার ঠিকানা জানেন? পকেটে মানিব্যাগ পাওয়া গেছে। তাতে কিছু টাকা ও একটা কাগজে হলের ঠিকানা রয়েছে।
আশফাক রাফিয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
রাফিয়া বুঝতে পেরে নার্সকে বলল, বাসার ঠিকানা জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করল, ওনার অবস্থা এখন কেমন?
নার্স বলল, মোটামুটি ভালো। হাতের বাজুতে গুলি ছিল। বের করা হয়েছে। চার পাঁচ ঘণ্টার আগে জ্ঞান ফিরবে না। আপনারা এখন যান।
আশফাক বাইরে এসে রাফিয়াকে বলল, এখন বাসায় যাই চল, বিকেলে না হয় আসা যাবে।
রাফিয়া বলল, তাই চল।
গাড়িতে উঠে আশফাক বলল, ছেলেটা আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বিপদে পড়ল ভেবে খুব খারাপ লাগছে। ভাবছি, বিকেলে দেখতে এসে ডাক্তারকে বলব, ওনার চিকিৎসার বিল আমি দেব।