দারোগা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে লোকজনদের চলে যেতে বললেন। সবাই চলে যাওয়ার পর সঙ্গের পুলিশ দু’জনকে বললেন, আপনারা এগোন, আমি একটু পরে আসছি।
পুলিশ দু’জন চলে যাওযার পর মাতব্বর ছেলেকে বললেন, দারোগা সাহেবের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা কর।
রশিদ যেতে উদ্দ্যত হলে দারোগা তাকে নিষেধ করে বললেন, আমি বাইরে কারো বাড়িতে খাই না। দু’একটা কথা বলে চলে যাব। শুনুন, যে লোকটা আপনার ছেলের এই অবস্থা করেছে, তার সন্ধান পাওয়া গেছে।
কথাটা শুনে মাতব্বর আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তাকে এ্যারেস্ট করেছেন?
খবর পেয়ে দু’জন পুলিশ নিয়ে সেখানে গিয়ে লোকটাকে পেয়েও এ্যারেস্ট করতে পারি নি।
এ্যারেস্ট করতে পারলেন না কেন?
ঘটনাটা বলছি শুনুন। লোকটার সন্ধান করার জন্য আমি যে কয়েকজন লোক লাগিয়েছি, তাতো আপনাকে বলেছি। আজ সকাল আটটার সময় তাদের একজন এসে জানাল, আপনার বর্ণনা মতো একজন লোককে এই গ্রামের পাশের গ্রামের দিকে যেতে দেখেছে। আমি দু’জন পুলিশ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা দিলাম।
গ্রামের কাছাকাছি গেছি, এমন সময় লোকটাকে ফিরে আসতে দেখে আমরাও তার দিকে এলোলাম। কাছাকাছি হতে লোকটা আমার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে বলল, দারোগা সাহেব যে? কেমন আছেন?
ভালো আছি বলে আমি তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম।
লোকটা বলল, আমি আল্লাহর এক নাদান বান্দা। আমার আর কোনো পরিচয় নেই।
বললাম, আপনার পরিচয় জানা আমার খুব দরকার।
কেন?
আপনার মতো একজন লোককে আমরা খুঁজছি।
কেন বলুন তো?
লোকটা বহেরচর গ্রামের মাতব্বরের ছেলে রশিদের একটা হাত কেটে দিয়েছে, আর একটা চোখও তুলে নিয়েছে।
লোকটা মৃদু হেসে বলল, আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমিই সেই লোক?
বললাম, নোকমুখে লোকটার যে বর্ণনা পেয়েছি, সেসব আপনার সঙ্গে মিলে গেছে।
লোকটা বলল, ঠিকই বলেছেন। লোকটা অবশ্য আমারই মতো দেখতে। আমি তাকে চিনি এবং কেন সে ঐরকম জঘন্য কাজ করেছে তাও জানি। তবে তার সম্পর্কে যদি কিছু জানতে চান, তা হলে আমি যা করতে বলব, তা করার পর বলব।
বললাম, ঠিক আছে, বলুন কি করতে হবে।
বলল, আপনি একজন শিক্ষিত লোক হয়ে এটা বুঝতে পারছেন না কেন, কেউ শুধু শুধু এরকম জঘন্য কাজ করতে পারে না। নিশ্চয় এর পিছনে বড় কোনো কারণ আছে। আর প্রায় বিশ বাইশ বছর আগে সেই রকম কোনো বড় কারণে মাতব্বর সাহেব পুরুষাঙ্গ হারিয়েছেন। সেই কারণগুলো ওনাদের কাছে থেকে জানুন। তারপর আমিই আপনাকে সেই লোককে এ্যারেস্ট করার জন্য সন্ধান দেব।
তার কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনি? এর আগে আপনাকে তো কখনও দেখি নি।
বলল, বললাম না, আমি আল্লাহর এক নাদান বান্দা?
আমার ধারণা হল, এই লোকই সেই লোক। তাই সঙ্গের পুলিশ দু’জনকে লোকটাকে এ্যারেস্ট করতে বললাম।
তখন লোকটা ঝোলা থেকে একমুঠো বালি নিয়ে আমাদের চোখে মুখে ছুঁড়ে দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগল।
আমরা চোখ মুখ পরিষ্কার করে দেখি লোকটা নেই। মনে হল বাতাসে মিলিয়ে গেছে। হতভম্ব হয়ে চারদিকে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম, অনেক দূর থকে লোকটা যেন বলছে, যা জানতে বললাম জানুন, জানার পর আমি নিজে এসে অপরাধীকে ধরার ব্যবস্থা করে দেব।
শব্দটা আসছিল মাঠের দিক থেকে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু তার গলার শব্দ পেলাম, আহত রশিদের বুকের উপর ঢিল চাপা দেয়া একটা কাগজ ছিল। সেই কাগজটা মাতব্বর সাহেবের কাছে। আছে। তাতে লেখা আছে কেন লোকটা রশিদের এরকম অবস্থা করল।
এখন আপনারা যদি ঘটনার কারণটা বলেন ও সেই কাগজটা দেন, তা হলে আসামীকে ধরতে পারতাম।
মাতব্বর চিন্তা করলেন, আসামীকে ধরার জন্য থানায় কেস করা উচিত হয় নি। তাড়াতাড়ি বললেন, ঘটনার কারণ জানা থাকলে থানায় কেস দিতাম না। আমি নিজেই আসামীকে ধরে যা করার করতাম। আপনারা আসামীকে ধরে তার কাছ থেকে যা কিছু জানার জানবেন। আর কাগজের কথা যে বললেন, তা ঠিক নয়। আমার কাছে কোনো কাগজ নেই। আমার বিশ্বাস যে লোক আপনাদের চোখে বালি ছুঁড়ে পালিয়ে গেল, সেই আসামী। ভালো করে খুঁজলে তাকে ধরতে পারতেন।
দারোগা বললেন, বললাম না, আমারও মনে হয়েছিল ঐ লোকটা আসামী? তাইতো পুলিশ দু’জনকে এ্যারেস্ট করতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, এ্যারেস্ট করতে পরি নি। তবে একথা ঠিক, কতদিন আর পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে থাকবে? একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হবে। ঐ যে কথায় আছে, চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিন। আচ্ছা, এখন আসি তা হলে বলে সালাম বিনিময় করে দারোগা চলে গেলেন।
বাপবেটা দু’জনেই দারোগার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আড়াল হয়ে যেতে মাতব্বর বললেন, মনে হচ্ছে দারোগা গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে।
রশিদ বলল, গ্রামের কারো সাহস হবে না আমাদের কথা দারোগাকে জানাতে। তবে আযীয সেখের সঙ্গে দারোগার খুব খাতির শুনেছি। সে হয়তো জানাতে পারে।
হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়। শুনলাম, লোকজন তাকে মাতব্বর করার জন্য শলাপরামর্শ করছে।
কথাটা শুনে তুমি চুপ করে রয়েছ কেন? থানায় গিয়ে টাকা দিয়ে দারোগাকে হাত করো। তাকে দিয়েই আযীয সেখকে ঢিড করতে হবে।
দারোগা যখন লোকজনকে চলে যেতে বলেন তখন মাতব্বর চামচা শাকিলের কানে কানে বলেছিলেন, “সায়রা কোথায় যায় জেনে এসে বলবি।” তাকে আসতে দেখে ছেলেকে বললেন, চুপ কর, শাকিলকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলাম, কি বলে শুনি।