আমার ম্যাজিশিয়ান বন্ধু আমের পুরো ঘটনা শুনে বললেন, হিপিনোটিক সাজেশান হতে পারে। হিপনোটিক সাজেশান মাঝে মাঝে এত গভীর হয় যে সামান্য মাটির দলকে আম বা অন্য যে কোনো ফল মনে হবে। হিপনোটিষ্ট যদি বলেন আমাটা মিষ্টি তাহলে মাটির দলা মুখে দিলে মিষ্টি লাগবে। হিপনোটিষ্ট যদি বলেন, আমাটা টক তাহলে মাটির দলার স্বাদ হবে। টক। তবে এই অবস্থা বেশি সময় থাকবে না। Trance অবস্থা কেটে গেলে মাটির দলাকে মাটির দলাই মনে
হবে।
আমাকে দেয়া আমাটা মাটির দিলা বা অন্যকিছু হয়ে গেল না। আমিই রইল। তৃতীয় দিনে আমি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার করলাম।
সেটা কী?
মিসির আলি বললেন, Fruit Fry বিষয়ে আপনার কোনো জ্ঞান আছে?
আমি বললাম, পাকা ফলের উপর ছোট ছোট যেসব পোকা উড়ে তার কথা বলছেন?
মিসির আলি বললেন, হ্যাঁ। এরা এক ইঞ্চির আট ভাগের এক ভাগ লম্বা। চোখ লাল। শরীরের প্রথম অংশ লালচে, শেষ অংশ কালো। পাকা ফল যা Farmented হচ্ছে তার উপর এরা ডিম পাড়ে। এক একটি স্ত্রী ফ্রুট ফ্লাই পাঁচশ’র মতো ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চ হতে সময় নেয় এক সপ্তাহ। আমার গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটা হচ্ছে তিনদিন পার হবার পরেও আমের উপর কোনো ফ্রুট ফ্লাই উড়ছে না। অর্থাৎ আমে পচন ধরছে না।
যে সময়ের কথা বলছি তখন আমের সিজন না। তবে ফােল চাষে হয়তো কোনো বড় ধরনের বিপ্লব হয়েছে। সব ঋতুতেই সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। আমি বাজার থেকে একটা পাকা আমি কিনে আনলাম। জাদুর আমি থেকে এক ফুট দূরে সেটা রাখলাম। এক ঘণ্টা পার হবার আগেই কেনা আমাকে ঘিরে ফ্রুট ফ্লাই ওড়াউড়ি শুরু করল। এদের কেউ ভুলেও জাদুর আমের কাছে গেল না।
মিসির আলি বড় করে নিশ্বাস ফেললেন। আমি বললাম, গল্প কি শেষ?
মিসির আলি বললেন, একটু বাকি আছে। আজই শুনবেন না-কি অন্য একদিন আসবেন? বৃষ্টি থেমে গেছে। এখন চলে যাওয়াই ভালো। রাত অনেক হয়েছে।
আমি বললাম, শেষটা শুনে যাব। তার আগে না।
মিসির আলি বললেন, আন্টার্কটিকা মহাদেশে একবার উল্কাপাত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে NASA-র জনসন স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানীরা সেই উল্কা পরীক্ষা করেন। উল্কার নম্বর হচ্ছে ALIT84001.
আমি বললাম, নাম্বার মনে রাখলেন কীভাবে?
মিসির আলি বললেন, জাদুর আম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এইসব জানতে হয়েছে। আমার Unsolved খাতায় নাম্বার লেখা আছে।
আমি বললাম, উল্কার সঙ্গে আপনার জাদুর আমের সম্পর্ক কী?
মিসির আলি বললেন, ঘটনাটা বলে শেষ করি। তারপর আপনি বিবেচনা করবেন সম্পর্ক আছে কি-না!
বলুন।
বিজ্ঞানীরা সেই উল্কার কিছু Organic অণু পেলেন। জটিল কোনো অণু না। Polycyclic aormatic hydrocarbon. বিজ্ঞানীরা ঘোযণা করলেন এই অণুগুলি পৃথিবী নামক গ্রহের না, গ্রহের বাইরের। কারণ এরা ছিল Levorotatory, পৃথিবী নামক গ্রহের সব Organic অনু হয় Dextrorotator. অর্থাৎ এরা Plain polarized light ডান দিকে ঘুরায়। বিজ্ঞানীরা অতি সহজ একটা পরীক্ষা থেকে বলতে পারেন কোনো বস্তু এই পৃথিবীর না-কি পৃথিবীর বাইরের।
আমি বললাম, আপনি আমটি পৃথিবীর না পৃথিবীর বাইরের এই পরীক্ষা করলেন?
মিসির আলি বললেন, এই ধরনের পরীক্ষা করার মতো যোগ্যতা বা যন্ত্রপাতি কোনোটাই আমার নেই। তবে আমি আমের শাস সিল করা কৌটায় ইতালির এন্থন ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছিলাম। তারা জানালেন এই ফলটির রস Levorotatory, অর্থাৎ এর Origin পৃথিবী নামক গ্রহ না!
বলেন কী?
মিসির আলি বললেন, একটা ছোট্ট পরীক্ষা অবশ্যি আমি নিজেই করলাম। একটা টবে যত্ন করে আমের আঁটিটা পুতলাম। সেখান থেকে গাছ হয় কি-না তাই দেখার ইচ্ছা।
হয়েছিল?
মিসির আলি বললেন, সেটা বলব না। কিছু রহস্য থাকুক। রহস্য থাকলেই গল্পটা আপনার মনে থাকবে। মানুষ রহস্যপ্রিয় জাতি। সে শুধু রহস্যটাই মনে রাখে, আর কিছু মনে রাখতে চায় না।
মাছ
পৃথিবীর সবচে’ ছোট সাইজের মাছের নাম জানেন?
মলা মাছ?
মলা মাছ তো অনেক বড় মাছ। পৃথিবীর সবচে ছোট সাইজের মাছ এক ইঞ্চির তিন ভাগের এক ভাগ।
বলেন কি?
মিসির আলি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন, এই মাছের নাম Paedocypris fish. বিজ্ঞানীরা এই মাছের সন্ধান পান সুমাত্রার জঙ্গলের জলাভূমিতে। মাছটা কাচের মতো স্বচ্ছ।
আমি বললাম, হঠাৎ মাছ প্ৰসঙ্গ কেন?
মাছ বিষয়ে এক সময় খুব পড়াশোনা করেছি। অদ্ভুত মাছ কি আছে জানার চেষ্টা করেছি। সমুদ্রে এক ধরনের মাছ আছে যাদের গায়ে চৌম্বক শক্তি।
আমি বললাম চুম্বক, শক্তির মাছের কথা জানি না, তবে গায়ে ইলেকট্রিসিটি আছে এমন মাছের কথা পড়েছি- ইল মাছ।
নাম সামছু। উনার গল্প শুনবেন?
গল্প শোনার জন্যেই তো এসেছি।
মিসির আলি কোলে বালিশ টেনে নিয়ে আয়োজন করে গল্প শুরু করলেন।
লেখকরা বিচিত্র চরিত্রের মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন। চরিত্র নির্মাণে তাদের সাহায্য হয়। আমি লেখক না তারপরেও বিচিত্র সব চরিত্রের মুখোমুখি হতে ভালো লাগে। তারা যখন কথা বলে তখন তাদের ভেতরটা দেখতে চেষ্টা করি। কথা বলতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে ফেলেন। সন্দেহ বাভিক গ্রস্ত মানুষ কথা বলবেন চিবিয়ে। দুর্বল চিত্তের মানুষ কথা বলবেন নিচু গলায়। ক্রিমিন্যালরা কথা বলার সময় চোখের দিকে খুব কম তাকাবে।