ছবিগুলি কোথেকে আমার কাছে আসছে তার কোনো হদিস বের করতে পারলাম না। একধরনের ভয় এবং দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলাম। সবচেয়ে ভয় পেলেন আমার মা। তিনি পীর সাহেবের কাছ থেকে তাবিজ এনে গলায় এবং কোমরে প্রালেন।
জামাল সাহেব দিম নেবার জন্যে থামলেন।
আমি বললাম, ছবিগুলি যে একই মেয়ের সেই বিষয়ে আপনি নিশ্চিত?
জি। জেসমিনের ঠোঁটের নিচে বা দিকে একটা লাল তিল ছিল। একই রকম তিল আমার মেয়ে ইথেনের ঠোঁটের নিচেও আছে। জেনেটিক ব্যাপার। যাই হোক, সব মিলিয়ে আমি পাঁচবার মেয়েটিয়া ছবি পাই। আমি যে পাঁচজনকে চা এবং রুটি খাওয়াই তার পেছনে হয়তো অবচেতনভাবে পাঁচ সংখ্যাটি কাজ করেছে।
তিনবার ছবি পাওয়ার ঘটনা শুনলাম। বাকি দু’বার কীভাবে পেলেন বলুন।
জামাল সাহেব বললেন, শেষবারেরটা শুধু বলি- শেষবার যখন ছবি পাই, তখন আমি আমেরিকায়। মোরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এলাকালয়েডের ওপর পিএইচডি ডিগ্রির জন্যে কাজ করছি। জায়গাটা নৰ্থ ডাকোটায়, কানাডার কাছাকাছি। শীতের সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে। টেম্পরেচার শূন্যের অনেক নিচ পর্যন্ত নামে। আমি গরম একটা ওভারকোট কিনেছি। তাতেও শীত আটকায় না। একদিন লাইব্রেরিতে গিয়েছি। লাইব্রেরিয়ানের হাতে ওভারকেটের পকেটে রাখা লাইব্রেরি কার্ড দিলাম। লাইব্রেরিয়ান কার্ড হাতে নিয়ে বলল, Your wife? very pretty, আমি অবাক হয়ে দেখলাম লাইব্রেরি কার্ডের পকেটে জেসমিনের ছবি। এই ছবি কোনো একটা পুরনো বাড়ির ছাদে তোলা। ছাদের রেলিং দেখা যাচ্ছে। রেলিং-এ কিছু কাপড় শুকাতে দেয়া হয়েছে। জেসমিন বসা আছে একটা বেতের মোড়ায়। তার হাতে একটা পিরিচ। মনে হয় পিরিচে আচার। কারণ জেসমিনের চারদিকে অনেকগুলি আচারের শিশি। রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে।
ছবির মেয়েটির সঙ্গে কোনোদিন দেখা হবে ভাবি নি। দেখা হয়ে গেল। দেশে ফিরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছি। একদিন নিউমার্কেটে গিয়েছি ষ্টেশনারি কিছু জিনিসপত্র কিনতে। হঠাৎ একটা বইয়ের দোকানের সামনে মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। মনে হলো এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব। কীভাবে নিজেকে সামলালাম জানি না। আমি লাজুক প্রকৃতির মানুষ। সব লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়ে ছুটে গেলাম! মেয়েটির পাশে দাঁড়ালাম। সে চমকে তাকাল। আমি বললাম, আপনার নাম কি জেসমিন?
মেয়েটি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।
আপনি কি কোনো কারণে আমাকে চেনেন?
সে না-সূচক মাথা নাড়ল। আমি বললাম, আপনার কিছু ছবি আমার কাছে আছে।
আমার ছবি?
হ্যাঁ বিভিন্ন বয়সের আপনার পাঁচটা ছবি।
বলেই দেরি করলাম না। পকেট থেকে মানিব্যাপ বের করলাম। তখন আমি পাঁচটা ছবিই সবসময় সঙ্গে রাখতাম। আমি বললাম, এইগুলি কি আপনার ছবি?
জেসমিন হ্যা-সূচক মাথা নাড়ল। আমার কাছে মনে হলো, তাঁর ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা। আমি বললাম, এই ছবিগুলি আমার কাছে কীভাবে এসেছে আমি জানি না। আপনার কি কোনো ধারণা আছে?
জেসমিন জবাব দিল না।
আমি কি আপনার সঙ্গে কোথাও বসে এক কাপ চা খেতে পারি?
আমি চা খাই না।
তাহলে আসুন আইসক্রিম খাই। এখানে ইগলু আইসক্রিমের একটা দোকান আছে।
আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে না।
আমি বললাম, আপনাকে আইসক্রিম খেতে হবে না। আপনি আইসক্রিম সামনে নিয়ে চুপচাপ বসে থাককেন। প্লিজ, প্লিজ প্লিজ।
জেসমিন বলল, চলুন।
সাতদিনের মাথায় জেসমিনকে বিয়ে করলাম। বাসররাতে সে বলল, ছবিগুলি কীভাবে তোমার কাছে গিয়েছে আমি জানি। কিন্তু তোমাকে বলব না। তুমি জানতে চেও না।
আমি জানতে চাই নি। এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ মেয়েটিকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি, আর কিছুর আমার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া কম জানার ব্যাপারটায় সুখ আছে। Ignorence is bliss. আপনি কি জেসমিনের পাঁচটা ছবি দেখতে চান?
চাই।
ছবি দেখে আপনি চমকবেন।
আমি ছবি দেখলাম এবং চমকালাম। অবিকল ইথেন। দু’জনকে আলাদা করা অসম্ভব বলেই মনে হলো। জামাল সাহেব বললেন, আমি পড়াই বিজ্ঞান। যে বিজ্ঞান রহস্য পছন্দ করে না। কিন্তু আমার জীবন কাটছে রহস্যের মধ্যে। অদ্ভুত না?
অদ্ভুত তো বটেই। আচ্ছা ছাদে জেসমিনের যে ছবিটা তোলা হয়েছে। চারদিকে আচারের বোতল। সেই বাড়িটা কি দেখেছেন।
জামাল সাহেব বললেন, সে রকম কোনো বাড়িতে জেসমিনরা কখনো ছিল না। ছবি বিষয়ে এইটুকুই শুধু জেসমিন বলেছে।
আমি বিদায় নিয়ে ফিরছি। জামাল সাহেব আমাকে গোট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। শেষ মুহুর্তে বললেন, আমার মেয়ে ইথেন কিছুদিন আগে হঠাৎ করে বলল, তার মা’র ছবি কীভাবে আমার কাছে এসেছে তা সে জানে। তবে আমাকে কখনো বলবে না। আমি বলেছি, ঠিক আছে মা, বলতে হবে না।
ফ্রুট ফ্লাই
মিসির আলি সাহেবের পেটমোটা ফাইল আছে। ফাইলের ওপর ইংরেজিতে লেখা— Unsolved. যেসব রহস্যের তিনি মীমাংসা করতে পারেন নি তার প্রতিটির বিবরণ। আমি কয়েকবার তার ফাইল উল্টেপাল্টে দেখেছি। কোনো কিছুই পরিষ্কার করে লেখা নেই। নোটের মতো করে লেখা। উদাহরণ দেই- একটি অমীমাংসিত রহস্যের (নম্বর ১৮) শিরোনাম ‘BRD’, ‘BRD’ কী জিজ্ঞেস করে জানলাম BRD হলো বেলারানী দাস। মিসির আলি লিখেছেন
BRD
বয়স ১৩
বুদ্ধি ৭
বটগাছ ১০০
বজ্ৰপাত ২
BRD বটগাছ Union
কপার অক্সাইড