কীভাবে পান?
নিজেই চিন্তা করে বের করি চাবিটা কোথায় থাকতে পারে। চাবি সেখানেই পাওয়া যায়। লজিক্যাল ডিডাকশন কীভাবে করলাম। আপনাকে বলি।
চাবি দুটা বাবার কোমরের ঘূনসিতে বাধা থাকত। কাজেই চাবি পড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না!
বাবার কথামতো খারাপ জিনিস। তাঁর কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়েছে এও হবার কথা না। বাবা নিজেই লুকিয়ে রেখেছেন।
তার শরীর তখন খুবই খারাপ ছিল। কাজেই দূরে কোথাও লুকাবেন না। বাড়ির ভেতর বা বাড়ির আশপাশে লুকাবেন।
মাটি খুঁড়ে কোথাও লুকাবেন না। মাটি খোড়ার সামৰ্থ্য তাঁর ছিল না। আর খোড়াখুঁড়ি করলেই লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
কাজেই তাঁর চাবি লুকানোর একমাত্র জায়গা-ইঁদারা। বাড়ির পেছনেই ইঁদারা। বাবা অবশ্যই ইন্দারার পানিতে চাবি ফেলে দিয়েছেন। আমাদের বাড়ির ইঁদারার চারপাশ বাঁধানো ছিল। অসুস্থ অবস্থায় বাবা ইদারায় হেলান দিয়ে অনেক সময় কাটাতেন।
ইঁদারা থেকে চাবি উদ্ধারের কাজ মোটেই জটিল হয় নি। ইদারায় বালতি বা বদন পড়ে গেলে তা তোলার জন্য আঁকশি ছিল। জিনিসটা একগোছা মোটা বড়শির মতো। দড়িতে বেঁধে আঁকশি ফেলে নাড়াচাড়া করলেই হত। ডুবন্ত জিনিস বঁড়শিতে আটকাত।
আপনি চাবি পেয়ে গেলেন?
হ্যাঁ।
সিন্দুক খুললেন?
হ্যাঁ।
সিন্দুকে কী ছিল?
মিসির আলি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললেন, সিন্দুক ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা। কিছুই ছিল না।
কিছুই ছিল না?
এক টুকরা কালো সুতাও ছিল না।
এরপরেও কি আপনি সিন্দুকে কান রেখে কথা শোনার চেষ্টা করেছেন?
করেছি। কিছুই শুনি নি। সিন্দুকের গল্পের এখানেই শেষ। যান, বাসায় চলে যান। অনেক রাত হয়েছে।
সোনার মাছি
‘Teleportation’ শব্দটার সঙ্গে কি আপনি পরিচিত?
না।
‘Talekinetics’ শব্দটা শুনেছেন?
না।
Telepathy?
হ্যাঁ শুনেছি। যতদূর জানি এর মনে হচ্ছে মানসিকভাবে একজনের সঙ্গে অন্য আরেকজনের যোগাযোগ।
মিসির আলি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন, ঠিকই শুনেছেন। ধারণা করা হয় যখন মানুষ ভাষা আবিষ্কার করেনি। তখন তারা টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করত। মানুষের কাছে ভাষা আসার পর টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা নষ্ট হতে শুরু করে।
আমি বললাম, আপনি কি টেলিপ্যাথির কোনো গল্প শোনাবেন?
মিসির আলি বললেন, না। আমি একটা সোনার মাছির গল্প শোনাব। এই মাছিটার Teleportation ক্ষমতা ছিল।
সেটা কী?
মিসির আলি বললেন, মনে করুন। আমার এই চায়ের কাপটা বিছানায় রাখলাম। হাত দিয়ে ধরলাম না। মানসিক ক্ষমতা প্রয়োগ করলাম। কাপটা আস্তে আস্তে আমার দিকে আসতে শুরু করল। একে বলে Telekinetics, আবার মনে করুন কাপটা বিছানাতেই আছে, হঠাৎ দেখা গোল কাপটা টেবিলে। একে বলে Teleportation. সায়েন্স ফিকশনে প্রায়ই দেখা যায় এলিয়েনরা একটা জায়গা থেকে অদৃশ্য হয়ে অন্য জায়গায় উদয় হচ্ছেন। পড়েছেন না। এ ধরনের গল্প?
পড়েছি। লেরি নিভানের Window of the Sky বইটিতে আছে।
মিসির আলি বললেন, ম্যাজিশিয়ানরা Telekinetics এবং Teleportation দু’ধরনের খেলাই দেখান। মঞ্চের দু’প্রান্তে দুটা কাঠের খালি বাক্স রাখা হয়েছে। রূপবতী এক তরুণী একটা বাক্সে ঢুকলেন। বাক্স তালা দিয়ে দেয়া হলো। তালা খুলে দেখা গেল মেয়েটি নেই। সে অন্য বাক্সটা থেকে বের হলো। চমৎকার ম্যাজিক। কিন্তু কৌশলটা অতি সহজ।
আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, কৌশলটা কী?
মিসির আলি বললেন, সেটা আপনাকে বলব না। আপনাকে কৌশল বলে দেয়ার অর্থ চমৎকার একটা ম্যাজিকের রহস্য নষ্ট করা। কাজটা ঠিক না। বরং সোনার মাছির গল্প শুনুন।
আমি মিসির আলির বাড়িতে এসেছি নিমন্ত্রিত অতিথি হয়ে। রাতে বিশেষ কোনো খাবার খাব। যা খেয়ে মিসির আলি আনন্দ পেয়েছেন। তিনি আমাকেও সেই আনন্দ দিতে চান। তিনি খুলনার একটা কাজের ছেলে রেখেছেন। বয়স তোর-চৌদ। নাম জামাল। এই ছেলেটি রান্নায় ওস্তাদ। আজ সে রাধবে কলার মোচা এবং চিংড়ি দিয়ে এক ধরনের ভাজি। কাচামরিচ এবং পেঁয়াজের রস দিয়ে মুরগি। মিসির আলির ধারণা পৃথিবীর যে কোনো শ্রেষ্ঠ খাবারের তালিকায় এই দুটি আইটেম আসা উচিত।
আমি বললাম, জামাল ছেলেটাকে বেতন যা দিচ্ছেন তা আরো বাড়িয়ে দিন। যাতে সে থেকে যায়। দুদিন পরে চলে না যায়।
মিসির আলি বললেন, বেতন যতই বাড়ানো হোক এই ছেলে থাকবে না। আমার টেলিভিশনটা চুরি করে পালাবে।
কীভাবে বুঝলেন?
মিসির আলি’ বললেন, ওর দৃষ্টিতে চোরভাব প্রবল। সে টেলিভিশনের দিকে তাকায় চোরের দৃষ্টিতে। টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখার প্রতি তার আগ্রহ নেই। বন্ধ টেলিভিশনটা সে প্রায়ই চোখ সরু করে দেখে। চুরি যদি নাও করে। বেতনও যদি বাড়াই তারপরেও সে বেশি দিন থাকবে না। কেন বলব?
বলুন।
খুব ভালো যারা রাঁধুনি তার রান্নার প্রশংসা শুনতে চায়। এই প্রশংসা তাদের মধ্যে ড্রাগের মতো কাজ করে। তবে একই লোকের প্রশংসা না। তারা নতুন নতুন মানুষের প্রশংসা শুনতে চায়। এই জন্যেই এক বাড়ির কাজ ছেড়ে অন্য বাড়িতে ঢুকে। ওর কথা থাক গল্প শুরু করি?
করুন।
গল্পটা আমার না। আমার Ph.D থিসিসের গাইড প্রফেসর নেসার অ্যালিংটনের।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, আপনার Ph.D ডিগ্রি আছে না-কি?
হ্যাঁ।
কোনোদিন তো বলতে শুনলাম না।
মিসির আলি বললেন, ডিগ্রি বলে বেড়াবার কিছু তো না। Ph.D দামি কোনো ঘড়ি না যে হাতে পরে থাকব। সবাই দেখবে। আপনার নিজেরও তো Ph.D ডিগ্রি আছে। নামের আগে কখনো ব্যবহার করেছেন?