আবসার বলল, তোর কথাগুলো খুব দামী, তবে তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তুই যেন কতকাল দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছিস। এসব জ্ঞান তুই কোথায় পেলি বলবি?
আরিফ বলল, তোর মাথায় ঘিলু বলতে কিছু নেই, সমাজের দিকে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে অনেক কিছু জানা যায়। অবশ্য সেই সঙ্গে কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যাও পড়তে হবে। তোরা তো শুধু দুনিয়াদারীর জ্ঞান অর্জন করে মনে করেছিস, শিক্ষিত হয়ে গেছিস। সেই সঙ্গে যদি ধীয় বই পুস্তক পড়তিস, তাহলে ঐ কথা বলতিস না।
রীমা বলল, আম আরিফ ভাই, আপনি তো আগাম অনেক কিছু বলতে পারেন, আমরা ভবিষ্যতে সুখী হব কিনা একটু বলবেন?
আরিফ একটু রেগে গিয়ে আবসারকে বলল, তুই নিশ্চয় ওকে এই কথা বলেছিস? তোকে কতবার বলেছি না, একথা বলা হারাম। আল্লাহ পাক ছাড়া ভবিষ্যতের কথা কেউ জানে না, আর কেউ যদি বলে থাকে, তবে সে কথা বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। তারপর রীমাকে বলল, এরকম কথা আর কাউকে জিজ্ঞেস করবেন না। কারণ জিজ্ঞেস করাও কঠিন গোনাহ।
রীমা বলল, তাহলে অনেকে যে হাত দেখে অনেক কিছু বলতে পারে আর সেগুলোর অনেক সত্যও হয়।
আরিফ বলল, হাত দেখা বিদ্যা আছে। তা সব সত্য না হলেও কিছু কিছু সত্য হয়। তবে ইসলামে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, যে হাত দেখে এবং যে হাত দেখায় তাদের দুজনের উপর আল্লাহর লানত। হাদিসে আরো আছে, মসলাহ (দঃ) বলিয়াছেনঃ ভবিষ্যৎ বাগণের নিকট যে ব্যক্তি কিছু জানার জন্য জিজ্ঞাসা করে, তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না। শুধু যেকোন বিদ্যা কেন, এমন কোন কথা বা কাজ যা মানুষের কাছে ভাল মনে হলেও যদি ইসলামে সে সব নিষেধ থাকে, তাহলে সেসব বলা বা করা হারাম, এটা হাদিসের কথা। আল্লাহপাক কোরআন পাকে বলেছেন, গায়েবের কথা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। আমরা মুসলমান হিসেবে মানুষের কথা যত ভাল হোক না কেন তা বিশ্বাস না করে আল্লাহপাকের কথা বিশ্বাস করব। নচেৎ মুসলমান থেকে বাদ হয়ে যাব। তবে যারা আল্লাহপাকের খাসবান্দা তাদেরকে আল্লাহপাক ইলহামের দ্বারা অথবা এমন কিছু এলেম দান করেন, যার দ্বারা ভবিষ্যতের অনেক কিছু জানতে পারেন। সেরকম নেক বান্দা দুনিয়াতে খুব কম আছেন। তারা মানুষকে সাবধান করার জন্য সে সবের কিছু কিছু বলে থাকেন। আর আমার কথা যা শুনেছেন, তা আমি অনুমান করে বলি। তার মধ্যে হয়তো দুএকটা ঠিক হয়ে যায়। এরকম অনেকে বলতে পারে। সেই অনুমানের উপর নির্ভর করে বলতে পারি আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন একরকম সুখের হবে। তবে সে জন্য আপনাদের দুজনকে অনেক সহ-সময় করে চলতে হবে। এবার এসব কথা থাক। তারপর আবসারকে বলল, কিরে তোদের বিয়ে তাহলে কবে হচ্ছে?
আবসার বলল, আমি তো তাড়াতাড়ি আশা করছি। ভাবছি দুএকদিনের মধ্যে আব্বা-আম্মাকে বলব।
আরিফ বলল, তাই বল।
এমন সময় সুফিয়া বেগম এসে বললেন, তোমরা গল্প কর। দুপুরে খাবার খেয়ে যাবে।
আবসার বলল, এখানে এসেছি আমাদের বাড়ীর কেউ জানে না, সবাই চিন্তা করবে। পরে আর একদিন এসে খাব। এখন আমরা আসি। তারপর তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এল।
ফেরার পথে আবসার রীমাকে বলল, ওদেরকে কেমন মনে হল?
রীমা বলল, আরিফ ভাই খুব ধার্মিক ও এক্সট্রা অর্ডিনারী ছেলে। আর ওর আম্মাও খুব ভাল মানুষ। আমার কি মনে হয় জান, আরিফ ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছু জিনিস আছে, যা সাধারণ কোন ছেলের মধ্যে নেই।
আবসার বলল, সে কথা তো আমি আগেই তোমাকে বলেছি।
রীমা বলল, তুমি বিয়ের ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি করছ কেন?
কেন, তোমার কি কোন আপত্তি আছে?
: না আপত্তি নেই তবে একটু চিন্তার বিষয় আছে।
: যেমন?
ও তোমাকে তো বলেছি, আমার উপার্জনে সংসার চলছে। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বার সংসার চালাতে খুব অসুবিধে হবে।
সে ভাবনা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি কি এমনই অমানুষ যে, সে বিষয়ে চিন্তা করব না? তা ছাড়া আল্লাহপাক একটা না একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেবেন। রীমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমার কথা অবশ্য ঠিক। আচ্ছ, বিয়ের পর তুমি কি আমাকে চাকরি করার অনুমতি দিবে?
আবসার বলল, না দেব না। বললাম তো, তোমার বাবা-মার সংসারে যাতে অসুবিধে না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখব। ওসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।
রীমা বলল, বেশ, তুমি যা ভাল বুঝবে করো। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
সেদিন বাড়ীতে এসে আবসার মাকে বলল, তোমরা তো আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছো, তোমাদের যদি কোন মেয়ে দেখা না হয়ে থাকে, তাহলে আমি একটা মেয়ের ঠিকানা। দিচ্ছি, সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পার।
আকলিমা বেগম আনন্দিত হয়ে বললেন, ঠিক আছে ঠিকানা দে, তোর আবার সঙ্গে আমিও দেখতে যাব।
আবসার ঠিকানা লিখে মায়ের হাতে দিয়ে বলল, মেয়েটা দেখতে তেমন ভাল নয়, তোমাদের পছন্দ নাও হতে পারে।
আকলিমা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন, তাহলে আমাদেরকে দেখতে যেতে বললি কেন?
আবসার বলল, আচ্ছা মা, নানা কি খুব বোকা ছিলেন?
এ কথায় তাকে টানছিস কেন? বোকা না চালাক, সে কথা আমার চেয়ে তুই বেশি জানিস।
জানি বলেই তো মাথায় ঢুকছে না। যিনি সব দিকে জুয়েল, তার মেয়ে এত বোকা হলে কি করে?
আকলিমা বেগম ব্যাপারটি বুঝতে পেরে হেসে উঠে বললেন, আমি বোকা মেয়ে তো কি হয়েছে, আমার পেটের ছেলে তো তার নানার মত জুয়েল হয়েছে।