বড়লোকের ছেলে হলেও তাকে দেখলে কেউ তা ভাবতে পারবে না। খুব সিম্পল থাকে। গরিবদের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল। অনেক গরিব ছাত্রকে সাহায্য করে। ভার্সিটিতে অনার্স করার সময় তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। যেমন চেহারা তেমনি তার চরিত্র। এরকম ছেলে হঠাৎ দেখা যায় না। ওর মধ্যে এমন কিছু গুণ আছে, যা তুমি শুনলে খুব অবাক হবে।
যেমন?
ও অনেকের সম্বন্ধে এমন কমেন্ট করে, যা দুদিন আগে হোক আর পরে হোক ঘটবেই। তবে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে খুব রেগে গিয়ে বলেন, আল্লাহ ছাড়া কেউ ভবিষ্যতের কথা বলতে পারে না। কিন্তু মাঝে-মধ্যে ও নিজেই বলে ফেলে। তোমার কথা বলতে বলল, মনে হচ্ছে মেয়েটা ভালই হবে। তাকে বিয়ে করলে তুই সুখী হবি।
: তাই নাকি? তাহলে তো তার সঙ্গে আলাপ করতেই হয়।
তুমি না চাইলেও সে করবে বলেছে। একদিন আলাপ করার ব্যবস্থা করব। এখন তোমাকে একটা কথা বলি- শোন। আমি কিছুদিনের মধ্যে তোমাকে ঘরে নিতে চাই, তোমার কি মত বল?
আমার মতের আগে আপনার বাবা-মা আমাকে দেখে কি বলেন দেখুন।
তুমি তাহলে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না?
আমাকে ভুল বুঝবেন না। উনাদের মতামতেরও একটা দাম আছে।
তা আছে। তবে সেটা আমি বুঝব। আমি শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই, তুমি রাজী আছ কি না।
বেশ আপনার কথাতে আমি রাজি। কিন্তু ভবিষ্যতে আমাকে নিয়ে সংসারে অশান্তি হবে কিনা সে ব্যাপারে আপনাকে একটু চিন্তা করার জন্য অনুরোধ করছি।
তুমি অবশ্য ভাল কথা বলে। তবে আমি আগেই সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করে তোমার কাছে প্রস্তাব রেখেছি। চল, এবার তাহলে উঠা যাক।
হ্যাঁ, তাই চলুন—বলে রীমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনার তো অফিস কামাই করে দিলাম। কোন অসুবিধা হবে না?
না হবে না। তোমার সঙ্গে কথা বলব বলে আজ ছুটি নিয়েছি। কিন্তু তোমার তো অফিস কামাই হল।
তা হল, তবে তেমন অসুবিধা হবে না।
একটা কথা বললে রাগ করবে না তো?।
রীমা অল্পক্ষণ তার মুখের দিকে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করল, তার কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে কি না। কিন্তু সফল হল না। বলল, রাগের কথা শুনলে রাগ করাই তো স্বাভাবিক।
তা ঠিক, বলছিলাম তুমি পাশে বসার অধিকার দিতে চেয়েও আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছ।
রীমা যেন তার কথার মধ্যে নোকামির গন্ধ পেল। ভাবল, আজকালের সব ছেলেরাই কি মুখে মিষ্টি কথা বলে ধোকা দিয়ে নারীদেরকে ভোগ করতে চায়? তার মনে প্রচ মৃণা জন্মাল। সেই সঙ্গে খুব রাগও হল। রাগের সঙ্গেই বলল, আপনাকে অন্য দশটা ছেলের চেয়ে আলাদা মনে করেছিলাম। কিন্তু সে ধারণাটা আমার ভুল। যাক, আর কখনো আমার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন না। এতক্ষণ একটা জানোয়ারের সঙ্গে কথা বলছিলাম জেনে ঘেন্না পালে। কথা শেষ করে সে হনহন করে চলে যেতে লাগল।
আবসার তার কথা শুনে প্রথমে বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তাকে চলে যেতে দেখে দ্রুত হেঁটে এসে তার পথ রোধ করে বলল, আমি কি অন্যায় করলাম, তা না বদলে যেতে দিচ্ছি না।
রীমা রাগে লাল হয়ে বলল, পথ ছাড়ুন, নচেৎ চিৎকার করে লোকজন ডাকব। যারা ছোট লোক, ইতর, তারা লেখাপড়া করলেও তাই থেকে যায়।
আবসার রেগে গেলেও ধৈর্য হারল না। সংযত রে বলল, তুমি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছি। তবু বলব, আমি কি ইতরামি করলাম, তা তোমাকে বলতেই হবে।
আবসারের কথায় রীমার রেগে যাবার কারণ হল- সে দেখতে খারাপ হলেও ছোট বেলা থেকে বেশ স্বাস্থ্যবতী। কিশোর বয়সেই তাকে তরুণী আর তরুণী বয়সে তাকে যুবতী দেখাত। যখন সে ক্লাস টেনে পড়ে তখন বাবা-মার সঙ্গে মাঝে মাঝে দেশের বাড়ী যেত। তখন তারই চাচাতো ভাই জামাল কে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে চুমু খেত। জামাল তখন ভার্সিটিতে পড়ে। সে সময় রীমা তার প্রলোভনে পড়ে কোন বাধা দেয়নি। কিন্তু একদিন যখন জামাল তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে খেতে এক হতে বুকে হাত দিয়ে অন্য হাতে সালওয়ারের ফিতে খুলতে উদ্যত হল, তখন রীমা তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলেছিল, তুমি এত নিচ জামাল ভাই, ছি, ছি, এ আমি কোনদিন ভাবিনি। তুমি একটা জঘন্য ইতর ছেলে বলে ছুটে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে তার ধারে-কাছে আর ঘেষেনি।
আজ আবার আবসারের মুখে সেই রকম ইঙ্গিত পেয়ে রীমার সেই কথা মনে পড়তে ভীষণ রেগে গেছে।
রীমাকে এতক্ষণ তার দিকে চেয়ে ভাবতে দেখে আবসার বলল, মনে হলে আমি কোথাও একটু ভুল করে ফেলেছি। যার ফলে তুমি রেগে গেছ এবং আমার প্রতি তোমার ঘৃণা জন্মেছে। প্লীজ রীমা, শেষবারের মত তোমার কাছে অনুরোধ করছি, আমার সেই ভুলটা তুমি ধরিয়ে দাও। ও রীমা তার কথা শুনে ভাবল, সেদিন জামালও ভুল স্বীকার করে বিয়ের আগে আর কখনো এরকম করবে না বলে ওয়াদা করে আবার কাছে টানতে চেয়েছিল। এখন আবসারের কথাগুলো তার ঐ রকম মনে হল। কোন উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে
আবসার তার একটা হাত খপ করে ধরে বলল, জানি না কি কারণে তুমি আমাকে ইতর ভাবছ। তুমি না চাইলে…..।
আবসার কথাটা আর শেষ করতে পারল না, ততক্ষণে রীমা অন্য হাতে খুব জোরে তার গালে চড় মেরে বলল, অসভ্য, ছোট লোক, ইতর, মেয়েদের পাশে বসতে নেই বলে ভালমানুষ সেজে নির্জনে পেয়ে তার সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে চাচ্ছ। হাত ছাড়াবার চেষ্টা করার সময় আবসার বলল, হেড়ে দিন বলছি, নচেৎ চিৎকার করে লোজন ডেকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করব।