এবার আমি একটা প্রশ্ন করব, মাইন্ড করবেন না তো?
না করব না, বলুন কি বলবেন?
কোন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেননি?
আগে কখনো করিনি। তবে ইদানিং একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলেছি।
মেয়েটা জানে?
তা এখনো বুঝতে পারিনি। আচ্ছা, আমি যদি আপনাকে ঐ একই প্রশ্ন করি?
তা করতে পারেন। কিন্তু আমার মত মেয়ের দিকে কে নজর দেবে?
যদি কেউ দেয়?
তাহলে ভাববো, তিনি অনুগ্রহ দেখানে। আমি কারো অনুগ্রহের পাত্রী হতে চাই না।
যদি সত্যি সত্যি কেউ ভালবাসে?
সে রকম হলে ভাববো সেটা আমার সৌভাগ্য।
যদি বলি আমি আপনাকে ভালবাসি।
বিদ্রূপ, না ঠাট্টা?
কোনটাই নয়, সত্যি বললাম।
প্রমাণ দেখাতে পারবেন
নিশ্চয়। বলুন কি প্রমাণ দেখতে চান?
এক্ষুনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন?
আবসার এতটা আশা করেনি, কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে হাসিমুখে বলল, আমার কোন আপত্তি নেই, তবে তার আগে বাবা-মাকে জানাতে হবে।
কেন? আপনার ব্যক্তিত্ব নেই?
আছে বলেই তো এক কথায় রাজী হয়ে গেলাম।
তাহলে বাবা-মার কথা বললেন কেন? তারা যদি আমাকে দেখে অপছন্দ করেন?
তারা তো বিয়ে করছে না, করছি আমি।
তবু তাদেরকে জানাতে চাচ্ছেন কেন?
এটা জানান সন্তানের কর্তব্য।
তারা যদি রাজী না হন?
রাজী হবার চান্স নব্বই পার্সেন্ট।
রীমা কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, আমার মত মেয়ের পেছনে লাগলেন কেন? আপনার আত্মীয়রা ছি-ছি করবেন।
সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ব্যক্তিগত ব্যাপারটাই আমি জানতে চাই।
আমার কাছে তুমি, সরি, আপনি আপনার নামের মত অতুলনীয় সুন্দরী।
আমাকে তুমি করেই বলবেন। তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশাস ফেলে বলল, জানি আমার ভাগ্যে কি আছে।
ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। সেটাকে নিয়ে অত দুশ্চিন্তা করছ কেন? আমাকে কী বিশ্বাস করতে পারছ না?
সে কথা পরে বলব, আপনি কি আমাদের ফ্যামিলির খোঁজখবর নিয়েছেন?
না, নিইনি। কারণ সে সবের প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনি।
কথাটা কি ঠিক বললেন? যাকে জীবন সঙ্গিনী করতে চাচ্ছেন, তার সবকিছু জানা উচিত।
তাহলে আমারও সবকিছু তোমার জানা উচিত? প্রথমে তোমারটা বল তারপর আমারটা বলব।
রীমা বলতে শুরু করল, আমার বাবারা পাঁচ ভাই। বড় আর ছোট বেঁচে আছেন। আমার বাবা সকলের ছোট। আমাদের দেশের বাড়ী কিশোরগঞ্জে। বাবা বি.এ. পাস করে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। জমি-জায়গা যা ছিল তাতে বেশ ভালভাবে সংসার চলে। যাচ্ছিল। আমরা পাঁচ বোন তিন ভাই। দুবোন সবার বড়। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারপর বড় ভাই। সে প্রেম করে বিয়ে করেছে। ভাবীর সঙ্গে মায়ের বনিবনা হয় না। তাই সে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকে। সেজ বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। তারপর আমি। আমার পর ছোট দুটো ভাই এক বোন আছে। তারা লেখাপড়া করছে। সংসার বেড়ে যাওয়ার ফলে সংসারে আর্থিক অনটন দেখা দেয়। সেই সময় বাবা তার এক বন্ধুর কথায় ঢাকাতে এসে কন্ট্রাকটারী শুরু করেন। টাকার প্রয়োজনে দেশের বাড়ীর অনেক জমি-জায়গা বিক্রি করে দেন। কিন্তু সেই বন্ধুর খপ্পরে পড়ে বাবা কন্ট্রাকটারী করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। আমি এস. এস. সি. পাস করেছিলাম। ভাগ্যচক্রে এই চাকরিটা পেয়ে যাই। এখন আমার উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে যাবে। অবশ্য বড় ভাই আমাদের বাসাভাড়ার টাকাটা দেয়। মেজ ভাইটাকে পড়া ছাড়িয়ে কয়েক মাস হল আমি আমাদের গার্মেন্টসে লাগিয়েছি। আমার পরিচয় তো শুনলেন, এখন ভেবে দেখুন কি করবেন।
আবসার বলল, আমার ভাববার কিছু নেই। আমি তো তোমার পরিচয় না জেনেই তোমার কথায় রাজি হয়েছি। এবার আমারটা শোন, আমার বাবা একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন। আমরা চার ভাই দুবোন। আমিই বড়। বি. এ. পাস করার পর চাকরি করে বাবাকে সাহায্য করছি। আমার ছোট যে বোন তার বিয়ে হয়ে গেছে। আর বাকি তিন ভাই ও সকলের ছোট বোন সবাই পড়ানা করছে। মা একা সংসার টানতে পারছে না বলে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। মায়ের মুখে বিয়ের কথা শুনে তোমার কথা আমার মানসপটে ভেসে উঠে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই তোমাকে বিয়ে করব।
রীমা বলল, আপনার মত ছেলের কথা শুনলে অনেক ভাল মেয়ের বাবা বিয়ে দিতে আগ্রহী হবে। তাদের কোন মেয়েকে বিয়ে করলে, সুন্দর মেয়ের সঙ্গে আরো অনেক কিছু পাবেন। অপর পক্ষে আমি দেখতে খারাপ এবং আমার বাবা গরিব। তিনি তো কিছুই দিতে পারবেন না।
আবসার বলল, তোমার কথা অবশ্য ঠিক। কিন্তু ওর বাড়ী থেকে কিছু পাওয়ার কথা কোন দিন চিন্তা করিনি। মনে মনে জীবন সঙ্গিনী করার জন্য যে মেয়েকে খুঁজছিলাম, সে তুমি। ব্যাস, তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাই না। তোমাকে পছন্দ হবার পর আমার এক বন্ধুকে জানাই। সে শুনে আমাকে তোমার সনে আলাপ করতে বলে মতামত জানতে বলল। মতামত জানার পর সে তোমার সঙ্গে আলাপ করতে চায়।
রীমা বলল, আপনার বন্ধুর নাম কি?
আরিফ, তুমি এখনো আমাকে আপনি করে বলছ কেন?
রীমা তার কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল, তিনি কি করেন?
এ বছর জুওলজিতে মাস্টার পরীক্ষা দিবে।
বাড়ী কেথায়?
সিরাজগঞ্জ জেলার সমেশপুর গ্রামে। খুব বড়লোকের ছেলে। একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।
তিনি আমার সঙ্গে আলাপ করতে চান কেন?
তোমার কথা বলে আমিই তাকে তোমাকে দেখাতে চেয়েছিলাম। শুনে ঐ কথা বলল।
তিনি বড়লোকের ছেলে, আমাকে দেখলে এক কথায় নাকচ করে দিবেন।