ইলিয়াস সাহেবও চমকে উঠে পেপার পড়ে খুব চিন্তিত হয়ে বললেন, আরিফের সৎ সাহস দেখে খুব অবাক হচ্ছি। দুজন নামকরা গুণ্ডার সঙ্গে মোকাবেলা করা কম সাহসের পরিচয় নয়।
ফাল্গুনী বলল, আবা আরিফকে দেখতে যাবে না?
ইলিয়াস সাহেব বললেন, যাব না মানে! নিশ্চয় যাব! তারপর ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে মেয়েকে বললেন, তুই তৈরি হয়ে নে, আমিও তৈরি হয়ে নিচ্ছি।
বিকেলে তারা সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে এসে পৌঁছাল।
গোফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগম হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিলেন। ইলিয়াস সাহেব সালাম বিনিময় করে আরিফের অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন।
গোফরান সাহেব বললেন, অপারেশন করে গুলি বের করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, ভয়ের কোন কারণ নেই; কিন্তু এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
ফাল্গুনী সবাইকে কদমবুসি করে সুফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে আম্মা একি হল বলে ফুঁপিয়ে উঠল।
সুফিয়া বেগম তার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে প্রবোধ দিতে দিতে ভিজে গলায় বললেন, ধৈর্য ধর মা। আল্লাহ পাক বিপদের সময় ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তার পাক দরবারে দোয়া কর। তিনি যেন আমাদের আরিফকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন।
ওঁরাও একই হোটেলে থেকে গেলেন। পরের দিন বেলা দশটায় আরিফের জ্ঞান ফিরল।
সানোয়ার উকিল ঘটনার দিন শরীফ দারোগার কাছে ঘটনা জানিয়ে ডাইরী করেছিলেন। আরিফের জ্ঞান ফেরার পর শরীফ দারোগা তার মুখ জবানী নোট করার সময় বুঝতে পারলেন, সানোয়ার উকিল সত্য ঘটনা বলে ডাইরী করিয়েছেন। নোট নেয়া শেষ করে তিনি আরিফকে নির্দোষ ঘোষণা করে পুলিশ প্রহরা উঠিয়ে নিলেন।
সুফিয়া বেগম আরিফকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
আরিফ বলল, আম্মা তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহ পাকের অসীম দয়ায় তোমাদের ছেলে এখন বিপদমুক্ত।
গোফরান সাহেব স্ত্রীকে বললেন, অত ভেঙে পড়ছ কেন? আরিফের জ্ঞান ফিরেছে। আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় কর।
সুফিয়া বেগম আরিফকে ছেড়ে দিয়ে উঠে একপাশে সরে বসলেন।
আরিফ সবার দিকে চাইতে গিয়ে দেখল, ফাল্গুনী তার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
এমন সময় একজন ডাক্তার ও একজন নার্স এসে বললেন, আপনারা আর এখানে ভীড় করবেন না, চলে যান। বিকেলে আবার আসবেন। রুগী বিপদমুক্ত হলেও বেশি কথা বলা নিষেধ।
সমাপ্ত