জয়নাল সব কিছু চেপে গিয়ে শুধু বলল, আমাকে উনি চেনেন। তাই সাজ্জাদ সাহেবদের কে কেমন আছে জিজ্ঞেস করছিলেন।
গুণ্ডাটা জয়নালকে বলল, আপনার কাজ শেষ, এখানে আর আপনি আসবেন না। সাজ্জাদ সাহেবকে আমাদের পাওনা টাকা রেডী রাখতে বলবেন। আমরা দুএক দিনের। মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করব।
জয়নাল সেদিন ফিরে এসে সাজ্জাদকে তাদের কথা বলল, তারপর খালেক ও মালেকের সঙ্গে দেখা করে বলল, আমি সিরাজগঞ্জে একটা দরকারে গিয়েছিলাম। সাজ্জাদ সাহেবের চাচাতো ভাই আরিফ সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি তোদেরকে তার সঙ্গে কালই দেখা করতে বলেছেন। সিরাজগঞ্জ রেষ্ট হাউসের পনের। নার রুমে আছেন।
সাজ্জাদ জয়নালের মুখে সবকিছু শুনে একটা চিঠিতে বিস্তারিত সবকিছু লিখে একজন বিশ্বস্ত লোককে সমেশপুরে রফিকের কাছে পাঠাল।
রফিক চিঠি পেয়ে টাকা নিয়ে পরের দিন এনায়েতপুরে সাজ্জাদের সঙ্গে দেখ।
সাজ্জাদ বলল, তুমি দুতিনদিন আমাদের বাড়িতে থাক। কাজ শেষ হবার পর যাবে। চিন্তা করো না, এখানকার সবাই জানবে ঢাকা থেকে আমার এক বন্ধু বেড়াতে এসেছে।
চুনি আর পান্না সিরাজগ টাউনের নামকরা ও। গোটা টাউন তাদের ভয়ে কশমান। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ও খুন-খারাবি তাদের নিত্যদিনের কাজ। ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা তাদেরকে মাসিক চাঁদা দেন। থানার সঙ্গে তাদের শালা দুলা ভাই সম্পর্ক। আরো যে সমস্ত ছোট-খাট আছে, তারাও তাদেরকে মাসোহারা দেয়। এখানকার সব হোটেলের মালিক ও ম্যানেজার তাদেরকে সমীহ করেন। প্রত্যেক মাসে চাঁদাও দেন।
চুনি ফলো করে আরিফের থাকার ঠিকানা জেনে নিয়ে পান্নাকে জানাল।
পান্না বলল, হোটেলে খুন করা যাবে না। বাইরেই কাজটা সারতে হবে। আমরা সব সময় ওকে ফলো করার। তারপর সুযোগ মত কাজ সারব।
আরিফ জয়নালের হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছে, এখানেও কিছু বড় আছে। তাই খুব সাবধান হয়ে গেল। হেটেল থেকে বাইরে বের হল না। হোটেলের ম্যানেজার ও কাদের বলে রাখল, কেউ যদি তার খোঁজ করে, তাহলে তাকে রিলেশনে বসিয়ে আমাকে খবর দেবেন। কাউকেই রুমে যেতে দেবেন না।
পরের দিন বেলা এগারটার সময় খালেক ও মালেক হোটেলে এলে ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলেন, কাকে চান?
খালেক বলল, পনের নাম্বার রুমে আরিফ সাহেব আছেন। উনি আমাদেরকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
ম্যানেজার তাদের বসতে বলে একজন বয়কে আরিফকে ডেকে নিয়ে আসতে লিলেন।
আরিফ অফিস রুমে এসে খালেক ও মালেককে রুমে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে তিন হাজার টাকা দিয়ে বলল। তোমরা এ থেকে আড়াই হাজার সালাদকে দিয়ে দিবে। আর বাকি টাকা তোমাদের ছেলেমেয়েকে মিঠি খেতে দিলাম। তারপর তাদেরকে নাস্তা খাইয়ে বিদায় দেবার সময় জিজ্ঞেস করল, এখানকার নামকরা তাদেরকে তোমরা চন।
মালেক বলল, জী চিনি। তারা হল, চুনি ও পান্না। ওদের সবাই চেনে। এমন দুষ্কর্ম নেই যা ওরা করতে পারে না। ওদের নামে থানায় অনেক কেস আছে। কিন্তু পুলিশদের ওরা হাত করে রেখেছে। আসবার সময় রাস্তার মোড়ে তাদেরকে দেখে এলাম। আপনি সাবধানে থাকবেন।
আরিফ বলল, ঠিক আছে, তোমরা যাও।
খালেক ও মালেক ফিরে এসে সেই দিনই সাজ্জাদকে টাকা দিয়ে দিল।
সাজ্জাদ বলল, তোরা এত টাকা পেলি কোথায়?
খালেক বলল, তা জানার আপনার দরকার কি? আপনি আমার টাকা পেলেন আর আমরাও ঋণমুক্ত হলাম। বলা বাহুল্য সেই থেকে খালেক ও মালেক আরিফের কথামত দৈহিক পরিশ্রম করে সংসার চালায়। ঠিকমত নামাজও পড়ছে। তারপর তারা চলে গেল।
এদিকে চুনি ও পান্না আজ দুদিন হোটেলের অনতিদূরে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে আরিফের বাইরে বেরব্র অপেক্ষায় রয়েছে। তৃতীয় দিন বেলা দশটার দিকে বেরোতে দেখে পিছু নিল। তাদের ইচ্ছা তাকে কিডন্যাপ করে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে খুন করবে। তাই সুযোগ পেয়েও রাস্তায় গুলি করল না।
আরিফের কোর্টের কাজ সারতে প্রায় দুটো বেজে গেল। কোর্ট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় একটা রিক্সায় উঠতে যাবে এমন সময় চুনি ও পান্না জামার ভেতর থেকে তার দু পাশের শরীরে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল, চিৎকার করলে আপনার শরীরে দুটো ফুটো তৈরি হবে। ভাল ছেলের মত ঐ বেবীতে উঠে পড়ুন।
আরিফ ব্যাপার বুঝতে পেরে তড়িৎগতিতে দুজনের থুতনীতে দুহাতের কুনুই চালাল।
চুনি আর পান্না হাত দুই উপরে উঠে ছিটকে পড়ল। কিন্তু তারা টাল সামলে নিয়েই ফায়ার করল। একজনের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। আর একজনের গুলি আরিফের ডান হাতের নিচের পাঁজরে লাগল। সেই অবস্থাতে আরিফ চুনিকে ধরে শূন্যে তুলে পান্নাকে আঘাত করল। পান্না মাটিতে পড়ে গেল, আর তার হাত থেকে পিস্তল হটে গেলে আরিফ তাড়াতাড়ি সেটা কুড়িয়ে নিয়ে চনির দিকে বাগিয়ে ধরে বলল, খবরদার নড়েছ কি তোমার কপাল ফুটো করে দেব। চুনি কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না করে গুলি চালাল, গুলি চালাবার আগে আরিফ তার পিস্তল ধরা হাতের বাজুতে গুলি করেছে। ফলে চুনির গুলিটা আরিফের বাঁ পাঁজর ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। চুনির হাতে গুলি লাগাতে তার। হাতের পিস্তল পড়ে গেছে। চুনি বাঁ হাত দিয়ে পিস্তলটা নিতে গেলে আরিফ বলল, পিকল ধরবে না। ধরলে ঐ হাতটার বাজুও ফুটো করে দেব। চুনি হাত টেনে নিল। আরিফ এগিয়ে এসে পিস্তলটা কুড়িয়ে পিস্তলের বাঁট দিয়ে চুনির গর্দানে খুব জোরে আঘাত করল। মনি মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। ততক্ষণে পান্না সামলে উঠে আরিফকে আক্রমণ করার জন্য ছুটে এল। আরিফ তার বুকে ফ্লাইং কিক মারতে কয়েক হাত দূরে পড়ে গেল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কাজটা ভাল করলেন না আরিফ সাহেব, এর জন্য আপনাকে পস্তাতে হবে। আরিফ তার ডান হাতের বাজুতে গুলি করে বলল, দুজনের শুধু দুটো হাত কেটে দেবার ব্যবস্থা করলাম। আবার যদি শুধু আমার নয় অন্য কারো ক্ষতি কর, তাহলে বাকি দুটো হাতও কেটে দেবার ব্যবস্থা করব।