আরিফ কিছু না বলে চুপ করে রইল।
কিরে, কি বলছিস না কেন?
এখন আবার কি বলব! যা বলার তো আগেই বলেছি।
এর কয়েক দিন পর গোফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগম সমেশপুরে ফিরে গেলেন।
এদিকে খালেক ও মালেক ফিরে এসে সাজ্জাদকে টাকা ফেরত দিয়ে বলল, বাকি টাকা কিছু দিনের মধ্যে দিয়ে দেব। যে কাজের জন্য টাকা নিয়েছিলাম, তা আমরা করতে পারব না।
সাজ্জাদ রেগে উঠে বলল, কেন?
খালেক বলল, কেনর উত্তর দিতে পারব না। তবে শুধু একটা কথা বলতে পারি, আরিফ সাহেব আমাদের মত সাধারণ মানুষ নন। আপনিই তো বলেছেন, তিনি পরীর ছেলে। আমাদের মত দুচারজন কেন, যদি শতশত মানুষও তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে, তবু সফল হবে না।
সাজ্জাদ তাদের কথা শুনে বলল, কি এমন ঘটনা ঘটল যে, তোরা এরকম কথা বলছিস?
মালেক বলল, আরিফ সাহেব ঢাকায় না গিয়ে সমেশপুরের কবরস্থানের পাশের জঙ্গলে গিয়ে একটা কবর জিয়ারত করল। তারপর যখন সে ফিরে আসছিল তখন প্রথমে আমরা তাকে ড্যাগার মেরে শেষ করতে চাইলাম, কিন্তু কেউ যেন আমাদের ড্যাগারসহ হাত ধরে রাখল। কিছুক্ষণ পর হাত ছেড়ে দিল। আমরা তখন দুজন দুটো পিস্তল দিয়ে তার বুকে গুলি করি। গুলির নিশানা ঠিকমত লাগলেও তার কিছু হল না। বরং উগো আমাদেরকে এমন মার মেরেছে যে মানের কথা আমরা জানি না। কি দারুণ ক্ষমতা আরিফ সাহেবের, যা আমরা কল্পনা করতে পারি নাই। আমাদের পিল কেড়ে নিয়ে আমাদেরকেই মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমরা কান্নাকাটি করে তার কাছে ওয়াদা করেছি, জীবনে আর কোন দিন কোন অন্যায় করব না। তাই আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন।
সাজ্জাদ আরিফের অলৌকিক ক্ষমতার কথা ছোটবেলায় মায়ের কাছে শুনেছে। এখন এদের কথা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবল, মাকে ঘটনাটা জানিয়ে যা করার করা যাবে। ওদের বলল, তোরা কাপুরুষ, তা না হলে এমন কথা বলতে পারতিস না। এত খুন-খারাবি করে বেড়স, আর সামান্য একটা ছেলের কাছে মার খেয়ে ফিরে এলি। বুঝতে পারছি, তোদের দ্বারা এ কাজ হবে না। আমাকে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। ঠিক আছে, তোরা এখন যা।
সেদিন সাজ্জাদ ঘরে এসে মাকে গুণ্ডাদের কথা বলল।
নিহারবানু আক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, আমার বিশ্বাস আরিফের সঙ্গে জীন থাকে। ওকে এখানকার কেউ মারতে পারবে না। তুই যদি সিরাজগঞ্জের গুণ্ডাদের হাত করতে পারি, তাহলে তারা হয়তো কাজটা করতে পারে।
সাজ্জাদ বলল, সে ব্যবস্থা আমি করতে পারব। আমার মনে হয় আরিফ সিরাজগঞ্জ কোর্টে নিশ্চয় আসবে। সেই সময় যা করার করতে হবে।
নিহারবানু বললেন, তাই কর। কিন্তু আরিফ কখন আসবে তুই জানবি কি করে?
সাজ্জাদ বলল, সে ব্যবস্থা আমি করব।
আরিফ যেদিন রফিকের সঙ্গে সম্পত্তির ব্যাপারে আলাপ করল; সেদিন রফিক আরিফের কথাগুলো আব্বাকে জানাল।
সামসু বাঁকা হাসি হেসে বললেন। আরিফ খুব চালাক। সে তোকে বোকা বানিয়েছে। আমি তার চালাকি ধরে ফেলেছি। কবে গোফরান আর তার বৌ মরবে তা কি কেউ জানে নাকি? আসলে এ কথা বলে তাকে বশে আনতে চেয়েছে। তুই এক কাজ কর, তোর সাথে তো আরিফের চাচাতো ভাই সাজ্জাদের জানান আছে। সে তার চাচার সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছে। সেও আরিফের দুশমন। দুই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তোরা দুজনে মিলে আরিফকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা
রফিক বলল, তুমি ঠিক কথা বলেছ আব্বা। আমি দুএকদিনের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করব।
সামস বললেন, যাই করিস না কেন খুব সাবধানে করবি। কেউ যেন তোদের সন্দেহ করতে না পারে।
দুদিন পর রফিক এনায়েতপুরে এসে সাজ্জাদের সঙ্গে দেখা করে তার মনের ইচ্ছার কথা জানাল।
সাজ্জাদ রফিকের কথা শুনে খুশি হল। বলল, মাঝে মাঝে এসো, দরকার পড়লে আমিও তোমার সঙ্গে গোপনে দেখা করব। তারপর কিভাবে কি করবে বলল।
রফিক বলল, তোমার প্ল্যান খুব ভাল। গুদের সঙ্গে যত টাকার কাঠ হবে, তার অর্ধেক আমি দেব।
সাজ্জাদ বলল, ঠিক আছে, তাই দিয়ে; কিন্তু খুব সাবধান—এসব কথা দ্বিতীয় কোন লোকের কানে যেন না যায়।
রফিক বলল, সে কথা তোমাকে বলে দিতে হবে না। তারপর তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
গোফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগম চলে যাবার কয়েক দিন পর আরিফ উকিলের চিঠি পেল। পড়ে দেখল, সবকিছু রেডী। তাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন। আরিফ একদিন ভার্সিটিতে ফাল্গুনীর সঙ্গে দেখা করে বলল, তোমার মন এত শক্ত কেন?
প্রমাণ করতে পারবে?
নিশ্চয়।
কর।
এই বেচারার প্রতি নির্মম ব্যবহারটাই তার প্রমাণ। ফায়ুনী মৃদু হেসে বলল, নির্মম হলে বিয়েতে রাজি হতাম না।
কিন্তু আজ পাঁচ-ছয়দিন তোমার পাত্তা নেই, আমার কষ্ট হয়নি বুঝি?
একই প্রশ্ন যদি আমি করি?
: তা করতে পার; তবে আমার মনে হয় দুজনেরই প্রশ্নের উত্তর হবে, লজ্জা তাই না?
ফাল্গুনী হাসতে হাসতেই বলল, জী তাই।
আরিফ বলল, কাল আমাকে দেশের বাড়ি যেতে হচ্ছে। ফিরতে কয়েকদিন দেরি। হতে পারে। তাই লজ্জার মাথা খেয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। এখন তুমিও কি লজ্জার মাথা খেয়ে আমার বাসায় যাবে?
ফাল্গুনী বলল, বেশ তো চল, তুমি যখন খেতে পেরেছ তখন আমার খেতে দোষ কি?
সেদিন ফাল্গুনী আরিফের বাসায় এসে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বিকেল পর্যন্ত গল্প করে কাটাল। তারপর বিকেলে আরিফ তাকে তাদের বাড়িতে পেীছে দিয়ে এল।