: যে ফাল্গুনী, ফাল্গুনী বাতাসের মত অহরহ আমার হৃদয়ে বয়ে চলেছে, তার সুগন্ধই আমাকে আগাম বার্তা জানিয়ে দিয়েছে। তাই তো আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করলাম।
ফাল্গুনী উঠে এসে আরিফের দুটো হাত ধরে চুমো খেল। তারপর হাত দুটো নিজের দুগালে চেপে ধরে ছলছল চোখে বলল, তুমি আমাকে এ……ত…….ভালবাস?
আরিফ কোন কথা না বলে ফাল্গুনীর দুটো হাত নিয়ে চুমো খেয়ে নিজের দুগালে চেপে ধরে একদৃষ্টে তার মুখের দিকে চেয়ে রইল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার চোখ দুটোও পানিতে ভরে উঠল। ভিজে গলায় বলল, আমরা দুজনে দুজনকে সমান ভালবাসি। তারপর ফাল্গুনীকে আবার খাটে বসিয়ে চোখ মুছে বলল, কাল তোমাকে যে কথা বলব বলে বলেছিলাম, তা তোমার শোনা একান্ত দরকার। বলছি শোন, তোমরা যাদেরকে আমার আব্বা-আম্মা বলে জান, তারা আমার ফুফা-ফুফি। আমার আব্বার নাম মরহুম জাকির হোসেন, আর আমার আম্মার নাম মরহুমা আজ সাদিয়া। আমার বয়স যখন দুবছর তখন আম্মা মারা যান। আর সাড়ে তিন বছরের সময় আব্বা মারা যান। আমার আম্মাকে নিয়ে একটা কিংবদন্তী আছে। তিনি নাকি পরী ছিলেন। তারপর নানা নানী, চাচা-চাচী ও চাচাতো ভাই-বোনদের এবং ফুফা-ফুফির সব কথা বলল, আরো বলল। তার পৈতৃক ও ফুফার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি কি করবে না করবে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, এসব তোমাকে আরো আগে জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সময়-সুযোগের অভাবে তা সব হয়ে উঠেনি। এরপরও কি তুমি আমাকে আগের মত ভালবাসতে পারবে?
ফাল্গুনী কয়েক সেকেন্ড কোন কথা বলতে পারল না। ভালবাসার কথা জিজ্ঞেস করতে তার মনে ভীষণ আঘাত লাগল। সামলে নিয়ে তার দুটো হাত ধরে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল, ভালবাসি বললে তোমাকে অপমান করা হবে। এক কথায় তুমিই আমার প্রাণ। প্রাণহীন দেহ যেমন, তোমাহীন আমি তেমন। তুমি যদি বস্তির গরিব ছেলে হতে, তবু তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতাম না। সবচেয়ে বড় কথা কি জান, আমরা তো বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েদের মত ভালবাসা-বাসি করিনি। আল্লাহপাক তাঁর কুদরতী ইশারায় আমাদের মনে ভালবাসার বীজ বপন করে দিয়েছেন। সেখানে উচ্চ নিচ, গরিব বড়লোকের কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না। বিষয়-সম্পত্তির ব্যাপারে তুমি যা ভাল বুঝে, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তোমার বিবেচনা ও সিদ্ধান্তকে আমি সব সময় সানন্দে গ্রহণ করব। আল্লাহপাক মেহেরবানী করে আমাকে কিছু কিছু দ্বীনি কেতাব পড়ার তওফিক দিয়েছেন। সেই জ্ঞান আমাকে শিক্ষা দিয়েছে, আল্লাহপাকের কাছে পার্থিব ধন-সম্পত্তির মালিকের চেয়ে ধার্মিক ও চরিত্রবান নর-নারী অধিক প্রিয়। তাদের সম্বন্ধে কোরআন ও হাদিসে অনেক সুসংবাদ বর্ণনা করা হয়েছে।
আরিফ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুবহান আল্লাহ বলে বলল, আল্লাহপাক তুমি মহান, তোমার সমতুল্য আকাশমণ্ডলীতে ও ভূমণ্ডলে কেউ নেই। তুমি আমাকে অনেক বড় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলে। সেই জন্য তোমার পাক দরবারে জানাই শতকোটি শুকরিয়া।
এমন সময় সুফিয়া বেগমের ডাক তারা শুনতে পেল, আরিফ ফাল্গুনীকে নিয়ে এ রুমে আয়।
আরিফ ফাল্গুনীর হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখমুখ মুছতে মুছতে বলল, তুমিও মুছে নাও। তারপর আম্মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আসছি আম্মা।
কিছুক্ষণ আগে গোফরান সাহেব এসে, ফাল্গুনী নিয়ে যেতে এসেছে শুনে তৈরি হয়েছেন, সুফিয়া বেগমও তাই।
আরিফ ফাল্গুনীকে নিয়ে তাদের কাছে এলে সুফিয়া বেগম ওমরকে নাস্তা দিতে বলে আরিফকে বললেন, তুইও চল না আমাদের সাথে।
আরিফ এক পলক ফাল্গুনীর দিকে চেয়ে বলল, তোমাদের মেয়ে তোমাদেরকে নিয়ে যেতে এসেছে। আমি যাব কেন?
সুফিয়া বেগম ফাল্গুনীর দিকে চেয়ে তার মুখে হাসি দেখে ছেলে যে দুঃমি করছে বুঝতে পারলেন। বললেন, তুই তোর বাপের মত হয়েছিস। সব সময় দুষ্টুমি, যা গেলে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।
আরিফ গাল ভার করে বলল, বিনা দাওয়াতে আমি কারো বাড়ি যাই না, তোমরা যাও। তারপর নিজের রুমে চলে গেল।
ওমর নাস্তা নিয়ে এলে ফাল্গুনী সামান্য কিছু খেয়ে বলল, চলুন আম্মা, অনেক দেরি হয়ে গেল, আব্বা চিন্তা করছেন।
সেদিন ফাল্গুনীদের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর গোফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগম ইলিয়াস সাহেবের সঙ্গে আরিফ ও ফাল্গুনীর বিয়ের কথাবার্তা পাকা করে ফেললেন। শুধু বিয়ের দিন বাকি থাকল। আরিফের পরীক্ষার পরদিন ঠিক হবে। সুফিয়া বেগম নিজের হাতের আংটি খুলে ফাল্গুনীর হাতে পরিয়ে দেওয়া করে বললেন, আমরা কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। এর মধ্যে তুমি আমাদের বাসায়। আসবে।
গোফরান সাহেব একটা কাগজে ঠিকানা লিখে ইলিয়াস সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, মাঝে মাঝে পত্র দিলে খুশি হব।
ইলিয়াস সাহেব বললেন, হাতে দেবই। হয়তো দেখবেন, একদিন বাপ-বেটী আপনাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছি।
গোফরান সাহেব বললেন, আল্লাহপাক আপনার ইচ্ছা পূরণ করুন। গেলে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করব।
বিকেলে চা-নাস্তা খেয়ে গোফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগম ফিরে এলেন।
সেদিন এক সময় সুফিয়া বেগম আরিফকে বললেন, ফাল্গুনীর সঙ্গে তোর বিয়ের কথা পাকাপাকি করে এসেছি। পরীক্ষার পর বিয়ের কাজ সারতে চাই।