আমি আবার দুষ্টুমি করলাম কি করে?
এতক্ষণ আমাকে আপনি করে বলে।
তাহলে আমরা সমান দুষ্টুমি কি বলেন? এবার দুমি বাদ দিয়ে আমরা কি ভাল হতে পারি না?
পারি
তাহলে হচ্ছেন না কেন?
আগে তুমি হও।
ফাল্গুনী হেসে উঠে বলল, আমাকে আগে হতে বলে তুমিই আগে হয়ে গেলে।
আরিফও হেসে উঠে বলল, যদিও সমাজে লেডিস ফাই কথাটা চালু আছে, আমি তা মানি না। কারণ, আল্লাহপাক প্রথম মানব হজরত আদম (আঃ)-কে পয়দা করেন। পরে প্রথম নারী হজরত হাওয়া (আঃ)-কে পয়দা করেন। তাছাড়া কোরআন-হাদিসে নারীদের চেয়ে পুরুষদেরকে বড় করে বর্ণনা করা হয়েছে।
ফাল্গুনী হাসতে হাসতেই বলল, তা আমিও জানি এবং বিশ্বাসও করি।
: আচ্ছা আমার সঙ্গে তোমার তো তেমন আলাপও হয়নি, তবু কি করে এতটা অগ্রসর হলে?
আমিও যদি ঐ একই প্রশ্ন তোমাকে করি?
ঐদিন বেবী থেকে হাসপাতালে নেবার সময় তোমাকে দেখে আমার মন বলে উঠল, এই মেয়েই আমার জীবন সঙ্গিনী হওয়ার উপযুক্ত। সত্যি বলতে কি, তারপর থেকে আমার দৃঢ় ধারণা হল, তোমাকে আমি জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পাবই।
: কি আশ্চর্য! হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে পাবার পর আকাশী খালার কাছে তোমার কথা শুনে এবং তোমাকে দেখে তোমার মত আমারও তাই মনে হয়েছে এবং তুমি যে আমার জীবনসঙ্গী হবে, সে ধারণাও দৃঢ় হয়েছে।
আরিফ সুবহান আল্লাহ বলে বলল, সবকিছু আল্লাহপাকের কুদরত। তাঁর কুদরত বুঝা মানুষের অসাধ্য। এবার আসি, কথায় কথায় অনেক দেরি করে ফেললাম। আব্বা আর হতো না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ফাল্গুনী বলল, তাহলে তো দেরি করিয়ে দিয়ে অন্যায় করে ফেললাম। তোমার আম্মা-আব্বাকে নিয়ে কাল আসবে তো?
আমি আসতে পারব কিনা ঠিক কথা দিতে পারছি না, তবে আব্বা-আম্মাকে আসতে বলব। তোমার সঙ্গে আমার আরো কিছু কথা আছে, কখন সময় দিতে পারবে
ঃ তোমার সুবিধে মত এখানে চলে এস। কয়েকদিন ভার্সিটি বন্ধ আছে। যে কোনদিন যে কোন সময়ে আসতে পার।
ঃ ঠিক আছে তাই আসব বলে আরিফ উঠে দাঁড়াল।
ফাল্গুনী এক মিনিট বলে ভিতরে চলে গেল। একটু পরে ফিরে এসে বলল, ড্রাইভারকে গাড়ি বার করতে বলে এলাম।
ঃ তুমি কোথাও যাবে না কি?
না তোমাকে পেীছে দেবে।
এখন থেকেই বন্দি করতে চাও বুঝি?
ফাল্গুনী নির্বাক হয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে রইল। চোখে পানি এসে যেতে মাথা নিচু করে ভিজে গলায় বলল, এ রকম কথা বলতে পারলে? আহপাক আমার দিলের খবর জানেন। আমি শুধু কর্তব্য পালন করতে চেয়েছি।
আরিফ ফাল্গুণীর অবস্থা দেখে ও তার কথা শুনে প্রথমে বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তারপর সামলে নিয়ে তার কাছে এসে একটা হাত ধরে বলল, বোকা মেয়ের মত আমাকে ভুল বুহু কেন? আল্লাহপাক সবারই দিলের খবর জানেন, কথাটা আমি প্রসঙ্গক্রমে বলে ফেলেছি। তোমার মনে আঘাত দেবার জন্য বলিনি। তবু ক্ষমা চাইছি।
আরিফ ফাল্গুনীর হাত ধরতে তার সমস্ত শরীরে অজানা এক আনন্দের শিহরণ বইছিল। তারপর তার কথা শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, তোমার কথাই ঠিক। আমিই তোমাকে ভুল বুঝে অন্যায় করেছি, আমাকে মাফ করে দাও।
আরিফ তার হাত দুটোতে চুমো খেয়ে ছেড়ে দিয়ে বলল, আমরা দুজনে আগে দুষ্টুমি করেছি, এখন আবার বোকামি করে ফেললাম। দুষ্টমির মত বোকামিটাও আর আমরা করব না, কেমন?
ফাল্গুনী কান্নামুখে হেসে ফেলে বলল, ঠিক আছে তাই হবে। চল, তোমাকে গাড়িতে তুলে দেই।
আরিফকে নিয়ে গাড়ি বেরিয়ে যাবার পর ফাল্গুনী নিজের রুমে এসে খাটে শুয়ে হাতের চুমা খাওয়া জায়গায় কয়েকবার চুমো খেল। তারপর আরিফের কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন বেলা নটার সময় ফাল্গুনী গাড়ি নিয়ে আরিফদের বাসায় এসে সুফিয়া বেগমকে সালাম দিয়ে কদমবুসি করে বলল, আপনারা তো মেয়ের বাড়ি গেলেন না, তাই মেয়ে নিজেই নিতে এলাম। খালু আব্বা কোথায়?
সুফিয়া বেগম সালামের উত্তর দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো খেয়ে দেওয়া করলেন। তারপর বললেন, তোমার খালু আব্বা একটু বাইরে গেছেন, এক্ষুনি এসে পড়বেন।
ফাল্গুনী বলল, আপনাদের ছেলেও কি বাইরে গেছেন?
সুফিয়া বেগম বললেন, না, আরিফ তার রুমে পড়ছে। তুমি তার কাছে গিয়ে আলাপ কর, আমি ওমরকে দিয়ে তোমার খাল-আব্বাকে ডেকে আনার ব্যবস্থা করছি।
আরিফদের বাসাটা এল প্যাটার্নের তিন রুমের বাড়ি। গেটের দিকের রুমটা ড্রইংরুম, মাঝখানের রুমে গোফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগম এলে থাকেন। শেষের রুমটায় আরিফ থাকে, সেখানেই সে পড়াশুনা করে। ওমর রান্না ঘরের বারান্দা ঘিরে থাকে।
ফাল্গুনী মাঝখানের রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে আরিফের রুমের দরজার পর্দা সরিয়ে ঢুকে দেখল, সে বই খুলে রেখে সেদিকে তাকিয়ে আছে। পা টিপে টিপে তার পিছনে এসে চোখ টিপে ধরল।
আরিফ চমকে উঠে হাতের উপর হাত রেখে সুবহান আল্লাহ বলে বলল, সেই আল্লাহ পাকের দরবারে হাজারো শুকরিয়া জানাই, যিনি আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করলেন। তারপর হাত ধরে সামনে এনে সালাম দিয়ে তাকে খাটে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছ?
ফাল্গুনী হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, ভাল। তুমি?
আমিও তোমার মত। হঠাৎ এলে যে?
: তুমি মনে মনে আমাকে ডাকছিলে, তাই চলে এলাম। অবশ্য আব্বা সবাইকে নিয়ে যেতে বলেছে। আচ্ছা আমিই যে তোমার চোখ টিপেছি, সিওর হলে কি করে?