ফাল্গুনী পর্দা ঠেলে ভিতরে ঢুকে সালাম দিয়ে বলল, আমি নামাজ পড়ে নিই তারপর খাব। তার আগে ড্রইংরুমে চল তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব।
ইলিয়াস সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে আনন্দের হটা দেখতে পেয়ে হেসে উঠে বললেন, তাহলে চল আগে তোর সারপ্রাইজটা গ্রহণ করি।
আব্বাকে শুধু গেঞ্জি গায়ে এগোতে দেখে ফাল্গুনী হ্যাঙ্গার থেকে একটা জামা পরিয়ে দেবার সময় বলল, এটা পরে নাও, নচেৎ ব্যাপারটা অশোভনীয় দেখাবে।
ইলিয়াস সাহেব মেয়ের সঙ্গে ড্রইংরুমে এলেন।
আরিফ দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন?
ইলিয়াস সাহেব হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? আপনার আব্বা-আম্মা ভাল আছেন?
আরিফ বলল, জী, আমরা সবাই আল্লাহ পাকের রহমতে ভাল আছি। কিন্তু আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আমি তো আপনার ছেলের বয়সি। তুমি করে বলুন।
ইলিয়াস সাহেব হেসে উঠে বললেন, তুমি ঠিক কথাই বলেছ। তারপর মেয়ের দিকে চেয়ে বললেন, বেলা অনেক হয়েছে তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে আয়। আমরা এক্ষণে আলাপ করি। মেয়ে চলে যাবার পর ইলিয়াস সাহেব আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের দেশের বাড়ি কোথায়?
সিরাজগঞ্জ জেলার সমেশপুর গ্রামে।
তোমরা কয় ভাইবোন?
আমার কোন ভাইবোন নেই।
পড়াশুনা শেষ করে কি করবে, ভেবেছ?
জী, ব্যবসা করার ই আছে।
: খুব ভাল কথা বলেছ। আজকাল চাকরি করে সংসার চালান খুব কষ্টকর। আচ্ছ তুমি রাজনীতি কর?
জী না।
প্রথম কারণ, ছাত্র-জীবনে আমি রাজনীতি করা পছন্দ করি না। দ্বিতীয় কারণ, বর্তমান যুগের রাজনীতি মানে মিথ্যার বেশাতী। মিথ্যাকে ইসলাম হারাম করেছে। বর্তমান যুগে যারা রাজনীতি করছেন তারা যেমন অসং, তেমনি ধর্মেরও ধার ধারেন না।
কিন্তু অনেক সং ও ধার্মিক লোকও রাজনীতি করছেন।
সে কথা আমিও জানি। কিন্তু শতের মধ্যে দুএকজন সৎ ও ধার্মিক লোক কি করতে পারেন? তাদের অনেকে ক্ষমতা পেয়ে সৎ ও ধার্মিক আছেন কিনা সন্দেহ। আমি আরো জানি, রাজনীতি করা ইসলামের প্রধান প্রধান আইনগুলোর অন্যতম। কিন্তু কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী রাজনীতি করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। যদিও অনেকে এই পথের পথিক হয়েছেন, তারা কতটা সফলতা লাভ করবেন তা আল্লাহ পাক জানেন। তাদেরকে আল্লাহর আইন ও রসুল (দঃ)-এর সুন্নতের তরীকা অনুযায়ী নিজেদেরকে বলিষ্ঠ চরিত্রবান করে গড়ে তুলে দৈনন্দিন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। নচেৎও মুখে কোরআন-হাদিসের বুলি আউড়িয়ে কোন সুফল হবে না। তবে যারা এই পথে অগ্রসর হয়েছেন, তাদেরকে আমি কায়মনকে সমর্থন করি। কারণ কোরআন-হাদিসের আইনের শাসন আমিও কামনা করি এবং প্রত্যেক মুসলমানের, যাদের এতটুকু ঈমান আছে তাদেরও কামনা করা উচিত। কারণ সব মুসলমানের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিত, আল্লাহ ও রসুল (দঃ)-এর আইন ছাড়া কোন মানুষের তৈরি আইন জগতে শান্তি আনতে পারে না। যাই হোক, আমি এ বিষয় নিয়ে আর আলোচনা করতে চাই না, হয়তো বেয়াদবি করে ফেললাম, সে জন্য মাফ চাইছি।
: না না, বেয়াদবি হবে কেন? নিজের মতামত প্রকাশ করার অধিকার সবারই আছে।
এমন সময় ফাল্গুনী এসে বলল, আব্বা এবার রাজনীতি রাখ, চল খেতে যাবে। তারপর আরিফকে বলল, চলুন।
খাওয়ার সময় ইলিয়াস সাহেব আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আব্বা আমাকে আসবার কথা বলেছিলাম, ওরা এলেন না কেন?
আরিফ বলল, হয়তো দুএকদিনের মধ্যে আসবেন।
খাওয়া-দাওয়ার পর ইলিয়াস সাহেব নিজের রুমে যাবার সময় আরিফকে বললেন, তুমি কি এক্ষুনি ফিরতে চাও?
জী, নচেৎ আব্বা-আম্মা চিন্তা করবেন।
তাহলে দশ-পনের মিনিট রেট নিয়ে তারপর যেয়ো।
ফাল্গুনী আরিফকে নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসল। তারপর জিজ্ঞেস করল, পাস করার পর কি করবেন?
ভেবেছিলাম ব্যবসা শুরু করব, কিন্তু তার আগে আব্বা-আম্মা আমার বিয়ে নিতে চান।
ফাল্গুনী মৃদু হেসে বলল, তাতে কি হয়েছে? বিয়ে করার পর ব্যবসায় নামবেন। বৌ তো আর বাধা দেবে না। তা পাত্রী বুঝি এরা আগে থেকে দেখে রেখেছেন?
ঃ না, আগে থেকে দেখে রাখেন নি, ইদানিং দেখেছেন। আমি যখন দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম, সেই সময় এক কোটিপতি ব্যবসায়ী তার রূপসী কন্যাকে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই মেয়েকে দেখে আব্বা-আম্মা পছন্দ করেছেন। তারা মেয়েকে তার বাবাকে সে ব্যাপারে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবে মেয়ে বা মেয়ের বাবা রাজি আছেন কিনা বলেন নি। আমাকে আগা সে কথা বলে আমার মতামত জানতে চাইল। আমি বললাম কোটিপতি ব্যবসায়ী তার একমাত্র কন্যাকে পাড়াগায়ে বিয়ে দেবেন না। আম্মা বলল, সে ব্যাপারে আমরা বুঝব, তুই রাজি আছিস কিনা বল? আমি বললাম, তোমরা যদি একটা কালো পেচীর মত মেয়েকে বৌ করতে চাও, তাতেও আমি রাজি।
আরিফের কথা শুনে ফাল্গুনী খুব লজ্জা পেল, তার টকটকে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেল। কেউ যেন তার সারা মুখে একরাশ আবির ছড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক সেকেন্ড মাথা নিচু করে থেকে তার দিকে চেয়ে বলল, তাহলে এতক্ষণ কালো পেটীর সাথে আপনি আপনি করে কথা বলছেন কেন?
আপনি কালো পেঁচী নয় বলে।
ফাল্গুনী আরো বেশি লজ্জা পেয়ে বলল, আপনি খুব দুই ছেলে।
আপনিও কিন্তু খুব দুষ্টু মেয়ে।