আরিফ ফাল্গুনীকে কামনা করে, তবে পরীক্ষার পর। তাই বলল, কোন কাজ তাড়াতাড়ি করতে নেই।
দেখ আরিফ কথা ঘোরাবি না। কি করতে হবে না হবে, তা আমরা জানি। আমি শুধু তোর মতামত জানতে চাই।
মা রেগে গেছে বুঝতে পেরে আরিফ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি কি তোমাদের কথার বরখেলাপ কখনো কিছু করেছি? তোমরা যদি একটা কালো পেঁচীকেও বৌ করতে চাও, তাতেও অমত করব না।
সুফিয়া বেগম হেসে উঠে বললেন, কালো পেঁচীকে বৌ করতে যাব কোন দুঃখে? তুই কি আমাদের শত্র? এবার বল কবে আমাদেরকে নিয়ে ফাল্গুনীদের বাসায় যাবি?
আমি নিয়ে যাব মানে? আমাকে তো তারা দাওয়াত দেয়নি, দিয়েছে তোমাদেরকে।
তুই ছিলি যে, তোকে দিবে? তবু আমাদেরকে বলে গেছে তোকে সঙ্গে নিয়ে যেতে।
ঃ বলুকগে আমি যাব না, তোমরা যেতে পার। এখন যাও এবার আমি ঘুমাব।
সুফিয়া বেগম ছেলের কাছ থেকে স্বামীর কাছে এসে বললেন, ফাল্গুনীকে আরিফের পছন্দ।
গোফরান সাহেব বললেন, এতক্ষণ ধরে ছেলের সাথে সেই কথাই হচ্ছিল বুঝি?
ঃ হ্যাঁ, জান, আরিফ এত দুষ্টু হয়েছে প্রথমে কি কিছুতেই বলতে চায়। শেষে আমি যখন রেগে গেলাম তখন বলল, আমরা যদি কালো পেঁচীকেও বৌ করতে চাই, তাতেও তার আপত্তি নেই।
গোফরান সাহেব হেসে উঠে বললেন, আরিফ ওর বাপের মত হয়েছে। তোমার মনে নেই জাকির কি রকম ছিল?
মনে নেই আবার, আরিফের চেয়ে জাকির অনেক বেশি দুষ্টু ছিল। সে যাই হোক, আরিফ আমাদের সাথে যেতে চাচ্ছে না।
ঃ যেতে না চাইলে আমরা জোর করে তো আর নিয়ে যেতে পারবো না।
দিন দুই পর আরিফ পরীক্ষার খবর জানার জন্য ভার্সিটিতে গিয়েছিল। ফেরার সময় নীলক্ষেত থেকে বাস ধরবে বলে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে আসছিল। এমন সময় একটা গাড়ি তার পাশে থামতে সেদিকে চেয়ে গাড়ির পিছনের সীটে আরোহীর চোখে চোখ পড়ে গেল। গায়ে চাদর ও মাথায় রুমাল বাঁধা দেখে মেয়েটাকে চেনা চেনা মনে হলেও ঠিক চিনতে পারল না। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে যখন চলতে শুরু করল তখন তার কানে একটা সুরেলা কণ্ঠ ভেসে এল, আরিফ সাহেব যাবেন না, দাঁড়ান। এই কথা বলে মেয়েটা গাড়ি থেকে নেমে এল।
কণ্ঠস্বর শুনে চিনতে পেরে আরিফ দাঁড়িয়ে পড়ে তার দিকে ঘুরে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন? আমি তো প্রথমে আপনাকে চিনতে পারিনি।
ফাল্গুনী সালামের উত্তর দিয়ে বলল, যাক চিনতে পেরেছেন জেনে খুশি হলাম। কেমন আছেন বলুন?
ঃ আল্লাহ পাকের রহমতে ভাল। আমি কিন্তু ঐ প্রশ্নটা আগেই করেছি।
ঃ আমিও আল্লাহ পাকের রহমতে ভাল আছি। গাড়িতে উঠুন, কোথায় যাবেন বলুন, পৌঁছে দিচ্ছি।
ঃ আপনি আবার কষ্ট করতে যাবেন কেন? আমি বাসে করে চলে যাব। ও কষ্ট আবার কিসের? কোন আপত্তি শুনব না, উনি গাড়িতে। আরিফ গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করল, আপনার আব্বা কেমন আছেন?
ভাল, আপনি সেই যে হাসপাতাল থেকে চলে এলেন, মরলাম না বাঁচলাম আর কোন খোঁজ নিলেন না।
ঃ খোঁজ নেবার ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না। পরের দিন একটা চিঠি পেয়ে দেশে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে শুনলাম, আপনি ও আপনার আব্বা আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন।
ঃ ঐ দিন আব্বা কিন্তু আপনাদেরকে আমাদের বাসায় আসার জন্য দাওয়াত দিয়েছিলেন।
ঃ সে কথা আম্মা বলেছে।
: তা কবে আসছেন?
সে কথা আব্বা-আম্মা জানেন। আপনারা আমার বাসার ঠিকানা পেলেন কি করে?
একদিন নিউ এলিফেন্ট রোডে একটা দোকানে জুতো কিনতে গিয়ে আপনার বন্ধুর সঙ্গে দেখা। তার কাছ থেকে পাই।
এখন আমাদের বাড়িতে যাবেন?
: আজ নয়, অন্য দিন।
ঃ কেন আজ গেলে কি হয়?
আরিফ তার মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে রইল, কিছু বলল না। ফাল্গুনীও তার মুখের দিকে চেয়ে বলল, কিছু বলছেন না যে?
: জোর করে গাড়িতে তুললেন, এখন আবার জোর করে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, এতটা বাড়াবাড়ি কি ঠিক হবে?
ফাল্গুনী মৃদু হেসে বলল, নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
দেশ থেকে ফেরার পর আরিফের মন ফাল্গুনীকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছিল। তারপর মায়ের মুখে তার ও তার আব্বার কথা শুনে সেই ইচ্ছা আরো প্রবল হয়। কিন্তু লজ্জায় তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেনি। এখন তার কথা শুনে বুঝতে পারল, সেও তাকে ভালবাসে। কিছু না বলে তার মুখের দিকে চেয়েই রইল।
: কি দেখছেন?
: আপনি যা দেখছেন।
: এতদিন দেখতে ইচ্ছা করেনি?
: নিজের মনকে জিজ্ঞেস করুন।
ফাল্গুনী আবার মৃদু হেসে বলল, আজ দেখা হবে, এটাই আল্লাহ পাকের মর্জি ছিল।
ঃ আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তা না হলে আমরা কেউ অগ্রণী ভূমিকা নিলাম না কেন?
এই কথা বলে আরিফ দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে রইল।
ফাল্গুনীদের বাড়ি বনানী, আর আরিফের বাসা আগারগাঁও।
তারা গাড়িতে উঠার পর ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। কোথায় যেতে হবে তা কেউ যখন বলল না তখন সে সাহেবের বাড়িতে নিয়ে এল।
ফাল্গুনী আরিফকে সঙ্গে নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বলল, আপনি একটু বসুন, আমি আসছি। তারপর ভিতরে চলে গেল।
ফাল্গুনী ভার্সিটি যাবার সময় আব্বাকে বলেছিল। আজ তাড়াতাড়ি ফিরবে। দুপুরে একসঙ্গে খাবে। তাই ইলিয়াস সাহেব মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় শুয়ে একটা বই পড়ছিলেন।
ফাল্গুনী আব্বার রুমের দরজার বাইরে থেকে আব্বা বলে ডাকল।
ইলিয়াস সাহেব বইটা বন্ধ করে বললেন, কে ফাল্গুনী? আয় ভিতরে আয়।