অসময়ে আরিফকে আসতে দেখে মাজেদা বেগম আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, খবর সব ভাল তো বাবা? তুমি হঠাৎ চলে এলে যে? ভাইয়া, ভাবী এল না?
আরিফ কদমবুসি করে বলল, হ্যাঁ চাচী আম্মা খবর সব ভাল, আমি একটা কাজে এসেছি, দুএকদিনের মধ্যে চলে যাব। আমি যাবার পর তারা আসবে।
আরিফ দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে রফিককে মসজিদে দেখতে পেল, নামাজের পর তার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে বলল, তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল, এখন সময় দিতে পারবি?
রফিক বলল, আমি এখনো ভাত খাইনি। তুই যদি খেয়ে থাকিস, তাহলে মাদ্রাসার বারান্দায় অপেক্ষা কর, আমি আধাঘন্টার মধ্যে আসছি। নচেৎ তুইও খেয়ে আয়।
আরিফ মাদ্রাসার বারান্দায় বসে রফিকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
বিশ-পঁচিশ মিনিট পর রফিক এসে তার পাশে বসে বলল, বল কি বলতে চাস?
আরিফ বলল, তুই যদি চিঠিটা আরো আগে দিতিস, তাহলে চাচার সঙ্গে দেখা হত। তোর চিঠি পাওয়ার পরের দিন আমি এনায়েতপুর গিয়েছিলাম। চাচা মারা গেছেন, সেখান থেকেই আসছি। যাকগে আসল কথায় আসি, আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবার কারণটা বলবি?
রফিক কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, কারণটা জেনেও তুই জিজ্ঞেস করছিস কেন? সে কথা আগে বল।
: সিওর হবার জন্য।
যদি বলি যা জেনেছিস, সেটাই ঠিক? তাহলে নিশ্চয় সিওর হবি?
ঃ হা হব। তবুও তোকে দুচারটে কথা বলব। তোর চাচার সম্পত্তির জন্য তুই যদি আমাকে সত্যিই দুশমন ভাবিস, তাহলে আমি তোদেরকে এ সম্পত্তি ফিরিয়ে দেব। বিষয়-সম্পত্তির উপর আমার কোন লোভ-লালসা নেই। তবে, তোর চাচা-চাচী যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন কিছু করতে পারব না। কারণ ওরা মনে ভীষণ কষ্ট পাবেন। ও দুনিয়া থেকে চলে যাবার পর আমি সব কিছু তোদের নামে লিখে দেব। আমার কথার নড়চড় যে কোন দিন হবে না, সে কথা তুই অন্তত জানিস। তোর চিঠি পাবার পর ফুফা-ফুফিকে আমার আসল পরিচয় জিজ্ঞেস করি, তারা সব কিছু আমাকে জানিয়েছে। আরো জানিয়েছে আমার মরহুম আব্বার কথামত তারা আমাকে নিজেদের ছেলে করে নিয়েছে। যাই হোক, আশা করি এরপর তুই আমাকে শক্ত না ভেবে আবার বন্ধু বলে গ্রহণ করবি। একটা কথা জেনে রাখি, তুই আমাকে শত্রু ভাবলেও আমি তোকে সব সময় বন্ধু বলেই মনে রেখেছি। তোর চাচা-চাচীর নিষেধ সত্ত্বেও গোপনে তোর সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিস। হাদিসে পড়েছি এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে কোন কারণেই তিনদিনের বেশি শক্রতা রাখা তো দূরের কথা, এমন কি কথা বলা বন্ধ রাখাও নিষিদ্ধ। তোর কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমার কথার উপর আস্থা রাখিস। আর বিষয়-সম্পত্তির ব্যাপারে যা বললাম তা এখন কারো কাছে প্রকাশ করবি না।
রফিক বলল, তোর বাবার বিষয়-সম্পত্তি ও ব্যবসাপত্র সম্বন্ধে কিছু চিন্তা-ভাব করেছিস?
করেছি, তবে সে সব তোকে এখন বলতে পারব না। পরে এক সময় বলব।
: ঠিক আছে, তাই বলিস। এখন তাহলে আসি, আমাকে আবার কামলাদের নিয়ে মাঠে যেতে হবে। তা দুচারদিন আছিস তো?
আরিফ বলল, না থাকতে পারব না। কাল সকালে চলে যাব।
রফিক বলল, আবার এলে দেখা হবে। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে গেল।
আরিফ আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে ঘরে ফিরে এল। পরের দিন সকালে ঢাকায় রওনা দিল।
আরিফ ঢাকার বাসায় ফিরে এলে সুফিয়া বেগম ও গোফরান সাহেব এনায়েতপুরের খবরাখবর জিজ্ঞেস করলেন।
আরিফ বলল, খবর সব ভাল। চাচী-আম্মা আদর-যত্ন করেছেন। সাজ্জাদ ভাইও ভাল ব্যবহার করেছেন। তাদের দুরভিসন্ধির কথা জানাল না।
রাতে ঘুমোবার সময় সুফিয়া বেগম আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, ফাল্গুনী নামে কোন মেয়েকে চিনিস নাকি?
আরিফ বেশ অবাক হয়ে বলল, হ্যাঁ চিনি। তুমি তার কথা জানলে কি করে?
ঃ কয়েক দিন আগে ফাল্গুনী তার আব্বার সঙ্গে তোর সাথে দেখা করতে এসেছিল। তার আবার মুখে শুনলাম, তুই নাকি তার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছিস। সে কথা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গেলেন। আমাদের সবাইকে তাদের বাসায় যাবার দাওয়াত দিয়ে গেছেন।
: তাই নাকি?
ঃ হ্যাঁ তাই। ফাল্গুনীর মা নেই। আমাকে মা ডেকেছে। আমারও তো মেয়ে নেই। তাই আমিও তাকে মেয়ে বলে গ্রহণ করেছি। তাছাড়া আমার ও তোর আব্বার ফাল্গুনীকে খুব পছন্দ। তাকে আমরা বৌ করতে চাই।
আরিফ লজ্জা পেয়েও হেসে উঠে বলল, তা কি করে হয়? ফাল্গুনীর আব্বা খুব ধনী লোক। পাড়াগাঁয়ের আমাদের মত ঘরে মেয়ে দেবেন কেন?
সেসব আমরা বুঝব, তুই রাজি আছিস কিনা বল?
ফাল্গুনীকে দেখার পর থেকে আরিফ এক মুহূর্তের জন্য তাকে মন থেকে সরাতে পারেনি, তার কেন জানি দৃঢ় ধারণা হয়েছে ফাল্গুনীকে সে খ্রীরূপে পাবেই। এখন মায়ের কথা শুনে সেই ধারণা আরো দৃঢ় হল। বলল, আগে পরীক্ষা শেষ হোক তারপর বলব।
কেন এখন বলবি না কেন? তোর মতামত পেলে আমরা কথাবার্তা বলে রাখব। পরীক্ষার পর না হয় বিয়ে হবে।
তোমরা আমার বিয়ের জন্য এত তাড়াহুড়ো করছ কেন? পরীক্ষার পর আমি ব্যবসা করার মনস্থ করেছি। ব্যবসাতে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ে করব।
বিয়ে করলে বুঝি ব্যবসা করা যায় না? ফাল্গুনীর মত মেয়ে সব সময় পাওয়া যাবে না। অত দিন কি তার আব্বা অপেক্ষা করবেন?