মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আপনিই বা আমাকে এই কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
প্রথমে আপনার অনুমতি নিয়ে আমি প্রশ্ন করেছি, আমার উত্তরটা আগে দিন, পরে আপনারটা দেব।
যদি না দিই?
না দিলে তো জোর করতে পারব না, তবে আশা করেছিলাম দিবেন।
মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, আশা যখন করেছিলেন তখন নিরাশ করা ঠিক হবে না। একজনের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করি। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
আমি এই উত্তরটাই অনুমান করেছিলাম, তাই জিজ্ঞেস করলাম। আপনার নামটা জানতে পারি?
নাম জানার কি দরকার?
দরকার থাকতেও তো পারে।
অপরিচিত কোন মেয়ের নাম জানতে চাওয়া কি অভ্রতা।
তা ঠিক, তবে পরিচয় হবার পর নাম জানতে চাওয়া অপ্ৰতা নয়।
আপনার কথাও ঠিক; কিন্তু আমাদের মধ্যে তো এখনো পরিচয় হয়নি।
আলাপের মধ্যে দিয়েই পরিচয় হয়। অবশ্য আপনি যদি পরিচয় করতে না চান, তাহলে অন্য কথা। আমি বোধ হয় অন্যায় করে ফেললাম, মাফ করবেন। এবার আসি তাহলে, বলে আবসার চলতে শুরু করল।
দাঁড়ান চলে যাবেন কেন? মনে হচ্ছে রাগ করেছেন?
আবসার দাঁড়িয়ে পড়ল।
মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, চলুন যেতে যেতেও আমরা পরিচিত হতে পারি। আক্ষণ হাঁটার পর আবসার বলল, আপনি কি এখনো নাম বলেননি।
রীমা। আপনার?
আবসার নাম শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে তার মুখের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল।
কি হল? ওভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন কেন? নাম বলবেন না? আবসার মৃদু হেসে নাম বলে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল।
কিছু বললেন না যে?
আপনার নামের অর্থ জানেন?
না।
আবসার আবার মৃদু হেসে চুপ করে হাঁটতে লাগল।
রীমা তাকে দুবার হাসতে দেখেছে। জিজ্ঞেস করল, আমার নাম শুনে হাসলেন কেন?
আপনার ভাল নাম কি?
আসমা হোমায়রা।
আবসার এবার শব্দ করে হেসে উঠে বলল, ওটারও নিশ্চয় মানে জানেন না?
না, জানি না। মনে হলো, আমার নামের মধ্যে কিছু ব্যাপার-স্যাপার আছে। তা হলে দুটো নাম শুনেই হাসবেন কেন?
তা আছে। তবে শুনলে আপনি মাইন্ড করবেন।
না মাইন্ড করব না, আপনি বলুন।
আপনার ডাকনামের অর্থ হল–সুন্দরী স্ত্রী। আর ভাল নামের অর্থ হল–অতুলনীয় সুন্দরী।
এবার রীমা তার পথ আগলে বেশ রাগের সঙ্গে বলল, সত্য বললেন, না বিদ্রূপ করছেন?
জানতাম আপনি মাইণ্ড করবেন। সত্য মিথ্যা জানতে হলে কষ্ট করে কারো কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন, আপনাকে বিদ্রূপ করিনি।
আপনার নামের অর্থ নিশ্চয় জানেন?
আমার পুরো নাম রাগীব আবার। তার অর্থ হল—আকাঙ্খিত দৃষ্টি।
রীমা কিছু না বলে চলতে শুরু করল।
আবসারও চলতে শুরু করে বলল, কিছু বলছেন না যে?
আপনি বোধ হয় কোন অফিসে চাকরি করেন?
হ্যাঁ। আপনি?
একটা গার্মেন্টসের সুপারভাইজার।
কোথায়?
বাস স্ট্যান্ডের অপজিট গলিতে। আপনি তো বাসে উঠবেন?
ততক্ষণে তারা বাস স্ট্যান্ডে এসে পড়েছে।
হ্যাঁ। তারপর একটা বাস আসতে দেখে বলল, আজ তাহলে আসি, কাল আবার দেখা হবে। এমন সময় বাস এসে থামলে আবসার আল্লাহ হাফেজ বলে বাসের দিকে এগোল।
রীমাও আল্লাহ হাফেজ বলে তার দিকে চেয়ে রইল। বাসটা চলে যেতে সেও নিজের পথে রওয়ানা দিল।
ঐদিন ফেরার পথে আবার দেখল, রীমা তাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। সেদিকে তাকাতে চোখে চোখ পড়ে গেল। আবসার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে চলে এল।
পরের দিন অফিস টাইমের কিছু আগে আবার রওয়ানা দিল। ভাবল, আজ রীমাকে তার মনের কথা জানাবে। নিদি জায়গায় এসে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন?
রীমা সালামের উত্তর দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।
আবার তার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, আমার উপর রেগে আছেন মনে হচ্ছে?
কি করে বুঝলেন?
কিছু বলছেন না বলে।
বললে শুনবেন?
বলেই দেখুন।
আপনার ক্ষতি হতে পারে।
তা হোক তবু বলুন।
তাহলে আসুন আমার সঙ্গে। তারপর একটা খালি রিক্সা দাড় করিয়ে বলল, এই রিক্সা, রমনা পার্কে যাবে?
রিক্সাওয়ালা না বলে চলে গেল।
আবসার বলল, আমরা তো এক রিক্সায় যেতে পারি না।
রীমা বেশ অবাক হয়ে বলল, কেন?
পাশাপাশি বসার অধিকার এখনো আমাদের প্রতিষ্ঠা হয়নি।
আমি তো সে অধিকার আপনাকে দিচ্ছি।
আপনি দিলে তো হবে না। অধিকার দিতে হলে আইনের মাধ্যমে দিতে হবে।
এমন সময় একটা খালি বেবী আসতে দেখে আবার হাত বাড়িয়ে থামাল। তারপর রীমাকে বলল, নিন উঠুন। বেবীতে বসে ড্রাইভারকে বলল, রমনা পার্কে চল। পার্কের গেটে বেবী বিদায় করে রীমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকল। এ সময় পার্কে ভীড় একটু কম থাকে। তারা একটা গাছের তলায় বসল।
রীমা বলল, তখন আইনের কথা কি বললেন, বুঝলাম না।
আবসার বলল, না বোঝার তো কথা নয়। যদি সত্যি সত্যি বুঝতে না পেরে থাকেন, তাহলে না বোঝাই ভাল।
কেন?
গতকালের মত মাইণ্ড করবেন।
মাইণ্ড করলে আজ আপনার সঙ্গে দেখাই করতাম না। এখন বলন কি বলতে চাচ্ছেন?
আইন বলতে আমি বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছি। একমাত্র নিজের স্ত্রী ছাড়া বেগানা নারী-পুরুষ পাশাপাশি বসতে পারে না।
রীমা বলল, আপনি কতদূর লেখাপড়া করেছেন?
বি, এ, পাস করেছি। আরো পড়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না।
তবু একথা বলতে পারলেন?
এটা আমার কথা নয় আলাহ ও তাঁর রসুল (দঃ)-এর। কোন মুসলমানের তাদের আইন অমান্য করা উচিত না।