বন জঙ্গল থাকায় গুণ্ডা দুটো বুঝতে না পেরে পিস্তল বাগিয়ে সেই দি কে এগিয়ে এল! তারপর দুজনে গাছটার গোড়া লক্ষ্য করে আবার গুলি করল।
ঠিক সেই সময় আরিফ পেছন থেকে দুহাত দিয়ে তাদের দুজনের ঘাড়ে ক্যারাতের চাপ মারল।
এরকম মারের সঙ্গে গুড়া দুজনের পরিচয় ছিল না। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠে বসে পড়ে চোখে ধোয়া দেখতে লাগল।
সেই সুযোগে আরিফ দুহাতে দুজনের পিস্তল ধরা হাতের বাজুতে আবার আঘাত করতে, তাদের হাত থেকে পিস্তল পড়ে গেল। আরিফ দুজনের ঘাড়ে আরো কতকগুলো ক্যারাতের চাপ মেরে অজ্ঞান করে ফেলল। তারপর জঙ্গলী লতা দিয়ে তাদের দুজনের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে লাগল।
বেশ কিছুক্ষণ পরে তাদেরকে চোখ খুলতে দেখে দুজনের দিকে দুটো পিস্তল বাগিয়ে ধরে বলল, বল, তোদকে কে এই কাজের জন্য পাঠিয়েছে?
খালেক ও মালেক জ্ঞান ফিরে পেয়ে আরিফের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে চিন্তা করতে লাগল এর গায়ে এত শক্তি এলো কি করে? আর এ রকম মারের কায়দাই বা জানল কেমন করে? তখন আমাদের ড্যাগারসহ হাত কে ধরে রেখেছিল? বুকে দুটো গুলি খেয়েও বেঁচে গেল কি করে? এই সব চিন্তা করে তারা খুব ভয় পেয়ে কাঁপতে লাগল।
তাদের অবস্থা দেখে আরিফ গর্জে উঠে বলল, মনে করেছিলে এই নির্জন জায়গায় আমাকে মেরে রেখে গেলে কেউ টের পাবে না। এখন তোমাদেরকে যদি আমি এখানে মেরে রেখে যাই, তাহলে কেমন হবে? আমার কথার জবাব দাও, নচেৎ দুজনকেই গুলি করে শেষ করে দেব।
তারা আরিফের কথা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলল, আমরা গরিব মানুষ। মারা গেলে আমাদের বৌ-ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে মারা যাবে। আপনি দয়া করুন সাহেব। আমাদেরকে সাজ্জাদ সাহেব টাকা দিয়ে এই কাজ করতে বলেছেন। আমাদেরকে মাফ করে দিন।
আরিফ বলল, আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মেরে ফেলতে পারি; কিন্তু তা করব না। এখন তোমাদের বাচার দুটো পথ বলছি, যেটা ইচ্ছা তোমরা বেছে নিতে পার। প্রথমটা হল, পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া; আর দ্বিতীয়টা হল, তোমরা যদি আমার হাতে হাত রেখে আল্লাহ পাকের কাছে তওবা করে ওয়াদা কর, জীবনে কোন দিন কোন অন্যায় কাজ করবে না, তাহলে তোমাদেরকে ছেড়ে দেব। T খালেক ও মালেক আরিফের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে বলল, আমরা আপনার পায়ে মাথা রেখে তওবা করছি। এবং ওয়াদা করছি, জীবনে আর কোন দিন কান অন্যায় কাজ করে টাকা রোজগার করব না। আপনি আমাদেরকে মাফ করে দিন [হেব। আমাদেরকে পুলিশের হাতে দেবেন না। তারপর তারা আরিফের পায়ে মাথা ঠকাতে গেল।
আরিফ আরে করো কি বলে কয়েক পা পিছিয়ে এসে বলল, মাথা শুধু আল্লাহ কিকে সেজদা করার জন্য। কারো পায়ে মাথা ঠেকান কবিরা গোনাহ? এমন কি উকে সম্মান দেখানোর জন্য মাথা নিচু করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। তারপর তাদের তের বাঁধন খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের বাড়ি কোথায়? তোমরা কি আমার : সাজ্জাদ ভাইয়ের সম্পর্কের কথা এবং কেন সে আমাকে মেরে ফেলতে চায়, সে সব কথা জান?
খালেক বলল, আমাদের বাড়ি এনায়েতপুরেই। আপনি তার চাচাত ভাই, আপনার মা পরী ছিল, আপনি সাজ্জাদ সাহেবদের ক্ষতি করবেন, এই সব কথা বলে আমাদের দশ হাজার টাকা দিয়ে বললেন, কাজ হাসিল হবার পর আরো দশ হাজার দেবেন।
আরিফ আবার জিজ্ঞেস করল, সেই টাকা থেকে তোমরা কত খরচ করেছ?
খালেক বলল, এক হাজার। আর মালেক বলল, দেড় হাজার।
আরিফ বলল, ঠিক আছে, তোমরা ফিরে গিয়ে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দিয়ে। আর যে টাকাটা খরচ করে ফেলেছ, সেটা আমি কিছুদিনের মধ্যে এনায়েতপুরে গিয়ে তোমাদেরকে দিয়ে দেব। তোমরা তখন তাকে দিয়ে দিয়ো। আর শোন যা ওয়াদা করেছ, তা পালন করে। এরকম অন্যায় পথে টাকা রোজগার না করে পরিশ্রম করে রোজগার কর। দরকার হলে চাষের কাজ কর। রিক্সা চালাও, অথবা অন্য কোন কাজ কর। তাতে আল্লাহ পাক বরকত দেবেন। তোমরা তো বোধ হয় নামাজ-রোযা কর না। এবার থেকে ঠিক মত নামাজ পড়বে। রমজান মাসে রোযা রাখবে। মিথ্যে কথা বলবে না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে। দেখবে তিনি কোন প্রকারে না কোন প্রকারে তোমাদের রোজগারের ব্যবস্থা করে দেবেন। তোমরা কি শোন নাই, কারো ক্ষতি করা মানে নিজেরই ক্ষতি করা? দুনিয়াতে বলা আল্লাহপাক দেখিয়ে দেন। তোমরা আমার বাবা মাকে সন্তান হারা করলে, একদিন না একদিন তোমরাও সন্তান হারা হতে। যাও, এবার তোমরা ফিরে গিয়ে যা বললাম তাই কর। পিস্তল দুটো আমার কাছে থাক, সময় গত থানায় জমা দিয়ে দেব। চিন্তা করো না তোমাদের কথা থানায় জানাবো না। শেষবারের মত বলছি, আবার যদি তোমরা এই রকম কাজ কর, তাহলে সেদিন আর তোমাদেরকে ক্ষমা করব না। কথা শেষ করে আরিফ বাড়ির পথে হাঁটা দিল।
গোফরান সাহেব যখন স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে ঢাকায় এসে থাকেন তখন তার এক ফুফাতো ভাই আনোয়ার মিয়া ও তার স্ত্রী মাজেদা বেগমকে বাড়িতে রেখে যান। বারেও তাদেরকে রেখে গেছেন। অবশ্য দুজন কাজের লোক ও একজন কাজের মেয়ে সব সময় থাকে।
আনোয়ার মিয়ার বাড়ি পাশের গ্রামে। ওঁদের পাঁচ মেয়ে। কোন পুত্র সন্তান নেই। ছোট মেয়ের স্বামীকে ঘর জামাই করে রেখেছেন। সেই সবকিছু দেখাশুনা করে। অবশ্য বিষয়-সম্পত্তি পাট মেয়েকে সমান ভাগে ভাগ করে উইল করে রেখেছেন। খ্রীর ভরণ পাষণের জন্য তার নামেও উইল করেছেন। কিন্তু একথা কাউকে জানাননি। শুধু গাফরান সাহেব ও সুফিয়া বেগমকে বলেছেন।