তার চোখে পানি দেখে সুফিয়া বেগম জড়িয়ে ধরে গায়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, মায়ের কথা মনে পড়ছে বুঝি? বললাম না, আজ থেকে তুমি আমাকে মা বলে ডাকবে?
ফাল্গুনী কদমবুসি করে জিজে গলায় বলল, আপনি দেখতে অনেকটা আমার মায়ের মত। তাই আপনাকে দেখে মায়ের কথা মনে পড়ছে।
সুফিয়া বেগম বললেন, ও মা তাই নাকি! তাহলে তো আমি তোমার মা হয়েই গেলাম।
ফাল্গুনী বলল, হ্যাঁ, আজ থেকে আপনাকে আমি আম্মা বলে ডাকব।
সুফিয়া বেগম আনোয়ারাকে বললেন, যা তো, আরিফের আব্বাকে ডেকে নিয়ে আয়।
আনোয়ারা ড্রইংরুমে এসে গোফরান সাহেবকে বললেন, বেগম সাহেব আপনাকে ডাকছেন।
গোফরান সাহেব ইলিয়াস সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, কিছু মনে করবেন না, এক্ষুনি আসছি। তারপর পাশের রুমে গেলেন।
স্বামীকে দেখে সুফিয়া বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমাদের তো কোন মেয়ে নেই। তাই ফাল্গুনীকে আমি মেয়ে করে নিয়েছি। ফাল্গুনীও আমাকে মা ডেকেছে। তুমি কি একে মেয়ে হিসাবে গ্রহণ করবে?
গোফরান সাহেব আলহামদুলিল্লাহ বলে বললেন, এমন মেয়েকে মেয়ে হিসাবে পাওয়া তো সৌভাগ্যের কথা।
ফাল্গুনী গোফরান সাহেবকেও কদমবুসি করে বলল, আপনাদের মেয়ে হতে পেরেছি সেটাও আমার কম সৌভাগ্য নয়। আপনারা আমাদের বাসায় যাবেন।
গোফরান সাহেব বললেন, নিশ্চয় যাব না। তারপর তাকে সঙ্গে করে ড্রইংরুমে এসে ইলিয়াস সাহেবকে বললেন, আজ থেকে ফাল্গুনী শুধু আপনার একার মেয়ে নয়, আমাদেরও মেয়ে। আমার ওয়াইফ একে মেয়ে করে নিয়েছে।
ইলিয়াস সাহেব ইঙ্গিতটা যেন একটু বুঝতে পারলেন। শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে বললেন, এ তো খুব ভাল কথা। আমার মেয়ের সৌভাগ্য আপনাদের মত পুণ্যবান ও পুণ্যবতীর মনে ধরেছে। আমি আপনাদের ছেলেকে মাত্র কয়েক মিনিট দেখেছি এবং তার সঙ্গে দুএকটা কথা বলেছি। তাতেই আল্লাহপাক আমার মনে যে আশার সঞ্চার করিয়েছেন, তা পূরণ হবার সুবনা হতে পারে ভেবে আবার সেই করুণাময়ের দরবারে শতশত শুকরিয়া জানাচ্ছি। আপনার ওয়াইফকে আমার সালাম জানিয়ে বলবেন, ফাল্গুনীকে মেয়ে করে নিয়েছেন জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আজ তাহলে উঠি ভাই সাহেব বলে দাঁড়িয়ে একটা ভিজিটিং কার্ড গোফরান সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, আরিফ ফেরার পর তাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাসায় এলে খুশি হব।
গোফরান সাহেব বললেন, আমাদেরকে অত বড় করে বলবেন না। আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষদের একজন। আর যাবার কথা যে বলছেন, ইনশাআল্লাহ নিশ্চয় যাব। তবে আরিফের ব্যাপারে সিওর কিছু বলতে পারছি না। জানেন তো, ছেলে-মেয়েরা বড় হলে নিজস্ব মতামতে কাজ করে।
ইলিয়াস সাহেব বললেন, তা নিশ্চয় জানি। তবে আমি কিন্তু সিওর, আরিফ বাবা মার কথা কখনো অবহেলা করে না।
গোফরান সাহেব বেশ একটু অবাক হয়ে বললেন, আরিফকে তো আপনি মাত্র কয়েক মিনিট দেখেছেন, এমন কি তার সঙ্গে ভাল করে কথাবার্তাও বলেননি, তবু তার এবং আমাদের সম্বন্ধে এ রকম কথা বললেন কি করে?
ইলিয়াস সাহেব মৃদু হেসে বললেন, এতে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। ফালনীকে দেখিয়ে বললেন, যা কিছু ওরই। ঐ তো আমাকে আরিফের সম্বন্ধে যা কিছু বলার বলেছে।
গোফরান সাহেব আরো একটু বেশি অবাক হয়ে বললেন, কিন্তু আপনি তো বললেন, আপনার মেয়ের সঙ্গেও আরিফের বেশি কথাবার্তা হয়নি?
ইলিয়াস সাহেব বললেন, আমার মেয়ের আল্লাহ প্রদত্ত এমন কিছু ক্ষমতা আছে যার ফলে সে ছোটবেলা থেকে যা কিছু বলে তা সত্য হয়।
কথাটা শুনে গোফরান সাহেব চমকে উঠলেন, চিন্তা করলেন, আরিফের মায়ের মত এই মেয়ের মাও কি পরীর মেয়ে?
ইলিয়াস সাহেব গোফরান সাহেবের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। বললেন, আমার কথা শুনে আপনি যেন কিছু চিন্তা করছেন?
গোফরান সাহেব বললেন, হ্যাঁ-না, মানে একটা কথা জিজ্ঞেস করব, কিছু মনে করবেন না। আপনার ওয়াইফও কি এই রকম কথা বলতেন?
ইলিয়াস সাহেব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, সে আরো বেশি বলত, তারপর মেয়েকে বললেন, চল মা এবার ফিরি।
ফাল্গুনী সবাইর কথায় খুব লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ছিল। আব্বার কথা শুনে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, হ্যাঁ আব্বা চল।
ইলিয়াস সাহেব আর একবার বাসায় যাবার কথা বলে সালাম বিনিময় করে। মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন।
গোফরান সাহেব তাদেরকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ফিরে এলেন।
ওরা বেরিয়ে যাবার পর সুফিয়া বেগম ড্রইংরুমে এসে বসেছিলেন। স্বামী ফিরে এলে বললেন, ফাল্গুনীকে আরিফের সঙ্গে দারুণ মানাবে।
গোফরান সাহেব তার পাশে বসে বললেন, আমিও তোমার সঙ্গে একমত। কিন্তু আরিফের মতামত না জানা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
সুফিয়া বেগম বললেন, আমার মনে হয়, আরিফ অমত করবে না।
গোফরান সাহেব বললেন, আমারও তাই মনে হয়।
৫. সাজ্জাদ মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে
এদিকে সাজ্জাদ মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে মত পাটাল। ঠিক করল, এখানে আরিফকে মার্ডার না করে ঢাকায় করবে। কারণ গ্রামে বা গ্রামের বাইরে হলেও সবাই মনে করবে চাচাতো ভাই সাজ্জাদ এই কাজ করিয়েছে। আর ঢাকায় হলে কেউ তাকে সন্দেহ করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত নেবার পর সাজ্জাদ গুণ্ডা দুজনকে সব কিছু বুঝিয়ে বলে ঢাকায় মার্ডার করার কথা বলল। আরো বলল, তাহলে তোমাদেরকে কেউ সন্দেহ করবে না। সবাই জানবে, শহরে দুস্কৃতকারীদের হাতে আরিফ মারা গেছে।