ঃ কিন্তু দুষ্টের দমন করাও কোরআন-হাদিসের কথা নচেৎ তাদের সাহস আরো বেড়ে যাবে। তাদের সংখ্যা বেড়ে গেলে সমাজের অনেক ক্ষতি হবে।
: তা আমি জানি। তবে অপরাধীকে ক্ষমা করে ভাল হবার সুযোগ দেওয়াও কোরআন-হাদিসের কথা। আমি সামসুর জন্য সব সময় আলাহপাকের কাছে দোওয়া চাই, তিনি যেন তাকে হেদায়েৎ দান করেন। নিজের ভুল বোঝার তওফিক দেন। আমাদের রসুল (দঃ)ও তাই করতেন।
: কি রসুল (দঃ) অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোরও ছিলেন?
: না, তিনি কখনও কঠোর ছিলেন না। প্রথমে অপরাধীকে ক্ষমা করে ভাল হবার সুযোগ দিতেন। তাতে সংশোধন না হলে তখন তার বিচার করে শাস্তি দিতেন।
আরিফ আর কিছু না বলে পকেট থেকে রফিকের চিঠিটা বের করে তার হাতে দিয়ে বলল, গতকাল পেয়েছি।
গোফরান সাহেব পড়ে স্ত্রীকে দিলেন।
সুফিয়া বেগম পড়ে আরিফের দিকে চেয়ে বললেন, রফিক নেসার ফকিরের সম্বন্ধে কিছু জানে না। তাই তার ও আমাদের সম্বন্ধে মনগড়া কথা লিখেছে। তবে বাকি যা লিখেছে, সেসব তো আমরা তোমাকে বললাম।
আরিফ বলল, আমি আজ এনায়েতপুর যাব বলে ঠিক করেছিলাম।
সুফিয়া বেগম স্বামীর দিকে তাকালেন।
গোফরান সাহেব আরিফের দিকে চেয়ে বললেন, তোমার চাচা মাসখানেক আগে মারা গেছে। তার অসুখের খবর আমরা জানতাম না। মারা যাবার খবর পেয়ে তোমার আম্মা ও আমি গিয়েছিলাম। তোমাকে গোপন করে আমরা বরাবর তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। অসুখের খবরটা কেন যে দিল না বুঝতে পারিনি। তবে মনে হয় তোমার চাচা হয়তো আমাদেরকে খবর দিতে তার ছেলে সাজ্জাদকে বলেছিল। সে দেয়নি। আমরা সে কথা জিজ্ঞেস করতে সাজ্জাদ চুপ করে ছিল। তোমার চাচা খুব ভাল লোক ছিল। কিন্তু তার ছেলে সাজ্জাদ তত ভাল নয়। সে তার মায়ের মত হয়েছে। তারা বিষয় সম্পত্তি ও ব্যবসাপত্র যা কিছু ভোগ করছে তা প্রায় সবই তোমার বাপের। তার হাবভাবে যা বুঝলাম, সে তোমাকে তোমার বাপের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চায়। আমরা কাল এসেছি। তোমার সঙ্গে যাবার ইচ্ছা থাকা সত্তেও যেতে পারব না। তুমি ই করলে ওমরকে সাথে নিয়ে একবার ঘুরে আসতে পার। তবে একটু সাবধানে থাকবে। দু একদিনের মধ্যে ফিরে এল।
আরিফ বলল, আমি একাই যাব। আর দুএকদিনের মধ্যে ফিরে আসতে না পারলে তোমরা দুশ্চিন্তা করো না, আল্লাহপাক যেন আমাকে হেফাজত করেন সেই দোওয়া করো।
সুফিয়া বেগম আতঙ্কিত হয়ে বললেন, তোর হেফাজতের জন্য তো সব সময় দোওয়া করি। কিন্তু তোকে তারা কেউ চিনে না, এমনকি পাড়াপড়শীরাও চিনে না। তুই তো অনেক অসুবিধায় পড়বি।
আরিফ বলল, সব রকম অসুবিধা কাটিয়ে উঠার তওফিক আল্লাহপাক আমাকে দিয়েছেন। তোমরা দেখে নিয়ো, ইনশাআল্লাহ আমি সহিসালামতে ফিরে আসব। আমি তো তাদের সঙ্গে ঝগড়া বা মারামারি করতে যাচ্ছি না যে, তারা আমাকে দুশমন ভেবে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে?
সুফিয়া বেগম বললেন, তোর আব্বা এখানে থাকুক, আমি তোর সঙ্গে যাব।
আরিফ বলল, তা কি করে হয়? আব্বার অসুবিধে হবে। নিজের বাড়িতে যাব। তাতে দুশ্চিন্তা করছ কেন?
সুফিয়া বেগম কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। গোফরান সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আরিফ ঠিক কথা বলেছে। ও একাই যাক। ওর একা যাওয়া দরকার আছে বলে আমি মনে করি।
সুফিয়া বেগম স্বামীর কথার উপর কোনদিন কথা বলেননি। আজও বললেন না। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে আরিফকে বললেন, তাড়াতাড়ি ফিরবি কিন্তু।
আরিফ বলল, তাতে ফিরবই। তবে দেরি হলেও কোন চিন্তা করো না। তারপর তৈরি হয়ে আব্বা-আম্মাকে কদমবুসি ও সালাম বিনিময় করে রওয়ানা দিল।
আরিফ যখন এনায়েতপুরে গিয়ে পৌঁছাল তখন মাগরিবের আযান হচ্ছে। মসজিদে নামাজ পড়ে ইমাম সাহেবের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, আপনি যদি মেহেরবানী করে আমার চাচাতো ভাই সাজ্জাদকে কাউকে দিয়ে ডেকে পাঠান, তাহলে বড় উপকৃত হতাম।
ইনি সেই আগেরই ইমাম সাহেব। যিনি আরিফের আবা জাকিরের সবকিছু জানেন। ওঁর এখন বেশ বয়স হয়েছে। আরিফের পরিচয় পেয়ে সুবহান আল্লাহ বলে বললেন, তুমি এত বড় হয়েছ? ভোমাকে সেই তিন সাড়ে তিন বছরের দেখেছিলাম। বুঝতে পারছি, তুমি আর কোনদিন এখানে আসনি। ঠিক আছে, তুমি বস, আমি ব্যবস্থা করছি। তোমার আব্বার দানেই তো মসজিদ-মাদ্রাসা চলছে। আল্লাহ তার রুহের মাগফেরাত দিক। জাকিরের মত লোক দুনিয়ায় খুব কম জন্মায়। তোমার চাচাও খুব ভাল লোক ছিলেন। এই তো মাসখানেক হল মারা গেলেন। তারপর মসজিদের খাদেমকে বললেন, সাজ্জাদকে ডেকে নিয়ে এস।
সাজ্জাদ এসে ইমাম সাহেবকে সালাম দিয়ে আরিফকে দেখিয়ে বলল, ইনাকে তো চিনতে পারছি না।
ইমাম সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে আরিফের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
সাজ্জাদ যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠে মুখটা কালো করে আরিফের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগল।
আরিফ তার পরিবর্তন লক্ষ্য করে মনে মনে হাসল। তারপর বলল, তোমরা সব কেমন আছ? চাচী আম্মা ভাল আছেন?
সাজ্জাদ খুব চালাকচতুর ছেলে। ম্যাট্রিক পাস করার পর আর পড়েনি। চাষ বাস ও বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখানা করত। বাবা মারা যাবার পর তাকেই সবকিছু দেখাশুনা করতে হবে। তার মনে হল আব্বা মারা গেছে শুনে আরিফ তার বাবার সম্পত্তি নিতে এসেছে। সেই জন্য আরিফের পরিচয় পেয়ে মুখ কালো হয়ে গেছে। আরিফের কথা শুনে বলল, হ্যাঁ সবাই ভাল আছি।