সালাম ও কুশলাদি বিনিময়ের পর আরিফ জিজ্ঞেস করল, কিরে চাকরি জীবন কেমন কাটছে?
আবসার বলল, কাটছে এক রকম। তা তুই আর আমাদের বাসায় যাস না কেন?
আজ যাব মনে করেছিলাম। তুই যখন এসে পড়লি তখন আর যাব না।
আমি এসেছি তো কি হয়েছে, আমার সনেই না হয় যাবি।
তা না হয় যাব; কি তুই হঠাৎ কি মনে করে এলি?
কেন, তোর কাছে কি আগে কোন দিন আসিনি?
এসেছিস; চাকরি করার পর আজ প্রথম এলি তো, তাই বললাম। এবার আসার কারণটা বলে ফেল দেখি?
আমি তো কারণ ছাড়াই কতবার এসেছি, তবু জিজ্ঞেস করছিস কেন?
তা এসেছিস; কিন্তু আজ কোন কারণে যে এসেছিস, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।
সত্যি আরিফ, তোর কথা শুনে মাঝে মাঝে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। কি করে যে তুই মানুষের মনের কথা জানতে পারিস? ভার্সিটিতে পড়ার সময় যেদিন ইলেকসন হল, তার দুদিন আগে যখন ছাত্র লীগের নেতা বাসিত ভাই ইলেকসনের ব্যাপারে কথা বলে চলে যেতে উদ্যত হল তখন দুই তাকে বললি, বাসিত ভাই, ইলেকশনে ইন্শাআল্লাহ আপনি জিতবেন। একটা অনুরোধ রইল, ঐদিন আপনি একাকী কোথাও যাবেন না। বাসিত ভাই ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। কিন্তু এ দিন বাসিত তাই একাকী কোথায় যেন যাছিলেন, সেই সময় অন্য পার্টির ছেলেদের আক্রমণে বাসিত ভাই একটা পা হারালেন এবং ইলেকসনে জয়ীও হলেন। আরো এমন অনেক কথা তুই মাঝে মাঝে আমাকে বলেছি, যেগুলো সত্যি ঘটেছে। কি করে জানতে পারিস- বলবি?
আরিফ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল, কি করে বলি আমি নিজেই জানি না, তোকে বলব কি করে? এসব কথা বাদদে, আজ মনটা ভাল নেই তাই তোদর বাসায় যাব মনে করেছিলাম। এবার তোর আসার কারণটা তাড়াতাড়ি বলে ফেল।
আগে তুই বল, তোর মন খারাপ কেন?
গতকাল চিঠি এসেছে, আম্মার শরীর খারাপ। আব্বা যেতে বলেছে। ভাবছি, দুএক দিনের মধ্যে যাব।
তাই যাস। এখন আমাদের বাসায় যাবি, না বকবক করবি?
আজ আর তোদর বাসায় যেতে মন চাইছে না, তার চেয়ে দুজনে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে যাই। আচ্ছ, তুই আসল কথাটা বলছিস না কেন?
তুই অন্যের মনের কথা জানতে পারিস, আমারটা পারছিস না?
দেব এক থাপ্পড়, এমন কথা আর বলবি না। মানুষের মনের কথা একমাত্র আহপাক ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। এই কথা বলে একটা হাত তুলে এগিয়ে এল।
আবসার সরে গিয়ে বলল, সত্যি সত্যি তুই থাপ্পড় মারবি নাকি? তোর ক্যারাতি হাতের থাপ্পড় খেলে হাসপাতালে যেতে হবে। আরিফ যে ক্যারাতে পারদর্শী, আবার তা জানে।
আরিফ হেসে উঠে হাত নামিয়ে বলল, তুই এখনো তীতুই রয়ে গেলি।
তা না হয় আমি ভীতু; কিন্তু মাঝে মাঝে যা বলিস, তা তো সত্যি হয়।
আরিফ হাসতে হাসতেই বলল, আরে বোকা, আমি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ি, আর সেটা ঠিক জায়গায় লেগে যায়। নে এবার বলে ফেল।
আবসার বলল, একটা মেয়ের প্রতি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। তাকে যত মন থেকে সরাতে চাই, তত জেকে বসে যাচ্ছে।
আরিফের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে গেল। বলল, তাই নাকি! তা মেয়েটার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে?
না
নাম-ধাম জানিস?
না।
নাম জানি না। তবে ধাম জানি। তাদের বাসার সামনে দিয়ে আমার অফিসে যাবার রাস্তা।
মেয়েটাকে যখন পছন্দ তখন তার সবকিছু জেনে তোর বাবা-মাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে বল। তা হাতে, মেয়েটা নিশ্চয় দেখতে-শুনতে ভাল?
দেখতে ভাল নয়; তবে রং ফর্সা। আর দেহের গঠন খুব সুন্দর।
আমাকে দেখাতে পারবি?
কেন পারব না। প্রতিদিন অফিসে যাবার পথে দেখা হয়। কোন কোন দিন ফেরার সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।
কাল সকালে তোদের বাসায় যাব। এখন চল বেড়াতে যাই। ওমরকে দুকাপ চা আনতে দেখে আবসারকে জিজ্ঞেস করল, নাস্তা দিতে বলব নাকি?
নাস্তা খেয়ে বেরিয়েছি, শুধু চা হলেই হবে।
চা খেয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ চিড়িয়াখানা ঘুরে ঘুরে দেখল, তারপর বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে একটা গাছের ছায়ায় বসল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আরিফ বলল, তোর মানসীর কথা বল।
তার সম্বন্ধে যা বলেছি, তার বেশি কিছু জানি না।
তুই তো বললি, মেয়েটা দেখতে ভাল নয়; তবু তাকে তোর পছন্দ হল কেন?
তা বলতে পারব না। সে যদি সুন্দরী হত, তাহলেও হয়তো পছন্দ হত। মেয়েটার ফেসকাটিংটাই যা খারাপ; অন্যান্য সবকিছু সুন্দর। তুই তো একদিন বলেছিলি, যে মেয়ে দেখতে খারাপ, সে সাধারণত ঠাণ্ডা মেজাজের হয়, খুব স্বামীভক্ত হয়।
তা অবশ্য বলেছিলাম, তাই বলে সবাই যে এরকম হবে, তা ঠিক নয়। এক কাজ কর, তুই দুএকদিনের মধ্যে তার সঙ্গে আলাপ করে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা কর। তারপর না হয় একদিন তোদের বাড়িতে যাব। মেয়েটা যদি তোকে পছন্দ না করে, তাহলে আমি আর তাকে দেখে কি করব?
কথাটা তুই মন্দ বলিসনি, ঠিক আছে, আমি তার সঙ্গে আলাপ করে দেখি, তারপর তোকে জানাব।
হ্যাঁ তাই কর। আমার মনে হয় সেটাই ঠিক হবে। ততদিনে আমিও বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।
তাই ঘুরে আয়। এবার চল ফেরা যাক।
পরের দিন আবার অফিসে যাবার সময় মেয়েটিকে নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তার কাছে এসে বলল, কিছু যদি মনে না করেন, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
মেয়েটি এক পলক আবসারের দিকে চেয়ে দৃষ্টি নত করে বলল, বলুন কি বলবেন।
আপনি প্রতিদিন ঠিক এই সময়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?