আরিফ তার কাছ থেকে তাদের বাসার ঠিকানা জেনে নিয়ে আসারের কাছে এসে বলল, আমি মেয়েটার বাসা থেকে একটু আসছি। তারপর ডাক্তার ও নার্সদের মেয়েটির দেকে লক্ষ রাখতে বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এল।
আকাশী ঠিকানা বলেছিল- বনানী, বাড়ীর নাম্বার আটষতি আরিফ গেটের বাইরে এসে একটা বেবী নিয়ে রওয়ানা দিল। ঠিকানা মত পৌঁছে গেটে দারোয়ানের কাছে বাধা পেল।
দারোয়ান জিজ্ঞেস করল, কাকে চান? বাড়ীতে কেউ নেই।
আরিফ বলল, তা জানি। আমি মহাখালী কলেরা হাসপাতাল থেকে এসেছি। আপনাদের সাহেবের মেয়ের অবস্থা তত ভাল নয়। সাহেবকে ফোন করে জানাবার জন্য এসেছি। বাসার কাজের লোকটিকে ডাকুন।
দারোয়ান বলল, আপনি সোজা চলে যান। বারান্দায় কলিং বেল আছে।
গেট দিয়ে ঢুকে আরিফের চোখ জুড়িয়ে গেল। গেট থেকে বেশ দূরে দ্বিতল সিরামিক ইটের কারুকার্যখচিত বাড়ী। বাড়ীটার সামনে বিভিন্ন ফুলের গাছ। কত রকমের যে ফুল ফুটে রয়েছে, আরিফ তাদের বেশির ভাগ নাম জানে না। একজন মালি প্লাস্টিকের পাইপ ধরে যা গাছে পানির ফোয়ারা দিচ্ছে। লোকটা আরিফের দিকে একবার চেয়ে নিজের কাজ করতে লাগল। আরিফ পা চালিয়ে বারান্দায় এসে কলিংবেলের বোতাম চাপ দিল।
মিনিট খানেক পরে একটা বয়স্ক দাড়িওয়ালা লোক দরজা খুলে বেশ অবাক হয়ে আরিফের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল
আরিফ সালাম দিয়ে বলল, আমাকে চিনবেন না। আমি হাসপাতাল থেকে আসছি। সাহেবের মেয়ের অসুখ খুব বাড়াবাড়ি। রাজশাহীতে সাহেবকে ফোন করতে হবে। আপনি সেখানকার টেলিফোন নম্বর জানেন?
লোকটির নাম আসগর। সে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আমিটেলিফোন নাম্বার জানি না। আপনি আমার সঙ্গে আসুন, টেলিফোনে টেবিলে একটা বই আছে সেটা দেখে সাহেবকে ফোন করতে দেখেছি। তাতে হয়তো থাকতে পারে।
আরিফ তার সঙ্গে ভিতরে এসে দেখল, টেবিলের উপর একটা টেলিফোন ইনডেক্স রয়েছে। সেটা নিয়ে রাজশাহীর তিন-চারটে নাম্বার দেখতে পেয়ে একটার পর একটা ডায়াল করে চলল। কিন্তু রিং হলেও ধরছে না। শেষে লাস্ট নাম্বারে ডায়াল করতে ওপারে একজন লোকের গলা পাওয়া গেল। টেলিফোন করার আগে আরিফ আসগরের কাছে সাহেবের নাম জেনে নিয়েছিল। ওপারের লোকটা হ্যালো বলতে আরিফ সালাম দিয়ে বলল, আমি ঢাকা থেকে ফোন করছি, এখানে কি ইলিয়াস সাহেব আছেন?
লোকটি সালামের উত্তর দিয়ে বলল, না, নেই। উনি একটা কাজে বাইরে গেছেন। আপনি কে বলছেন?
আমাকে চিনবেন না। আপনি ইলিয়াস সাহেবকে দয়া করে বলবেন, ওনার মেয়ে ডাইরীয়া হয়েছে। মহাখালী কলেরা হাসপাতালে আছে। যত তাড়াতাড়ি সব আসতে বলবেন।
লোকটি আতঙ্কিত স্বরে বলল, তাই নাকি! ঠিক আছে, আমি ওনাকে খবরটা দেবার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু আপনার নামটা অন্তত বলুন।
আরিফ নাম বলে সালাম দিয়ে ফোন ছেড়ে দিল। তারপর সেখান থেকে হাসপাতালে ফিরে এসে দেখল, খিচুনি বন্ধ হয়েছে। সাহেবকে ফোন করার কথা আকাশীকে বলে বলল, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি বাইরে থাকব। দরকার মনে করলে ডাকবেন।
আরিফ যখন সাহেবের মেয়েকে বেবী থেকে হাসপাতালের ভিতর নিয়ে আসে তখন কতজ্ঞতায় আকাশীর চোখে পানি এসে গিয়েছিল। এখন তার কথা শুনে আবার চোখে পানি এসে গেল। চোখ মুছে ভিজে গলায় বলল, আপনি যা করছেন তা অতি আপনজনও করবে না। আল্লাহ আপনার ভাল করবেন।
আরিফ বলল, আমি কি আর করছি মা, সবকিছু আল্লাহপাকের ইচ্ছ। তারপর জিজ্ঞেস করল, আপনি কি হাসপাতালের খাবার খেতে পারেন, না আমি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসব।
আকাশী বলল, আমি হাসপাতালের খাবারই খাব। হোটেল থেকে কিছু আনতে হবে না। আরিফ আর কিছু না বলে খায়ের সাহেবের বেডের কাছে এসে ওঁর স্ত্রীকে বলল, খালাআ, আবসার কি ভাবীকে নিয়ে বাসায় গেছে?
আকলিমা বেগম বললেন, হ্যাঁ বাবা, বৌমাকে রেখে রাতের খাবার নিয়ে আসবে।
আরিফ বলল, আমি বাইরে আছি, ও এলে দেখা হবে।
আকলিমা বেগম কিছু না বলে চুপ করে রইলেন।
রাত আটটার সময় আবসার ভাত নিয়ে এসে আরিফকে দেখে বলল, কিরে তুই। এখনো আছিস?
তাতো দেখতেই পাচ্ছিস।
মেয়েটার বাসায় গিয়ে কোন কাজ হল?
রাজশাহীতে ফোন করেছিলাম; কিন্তু ওর বাবাকে পাইনি, তবে যে লোক ফোন ধরেছিল, তাকে খবরটা ওর বাবাকে জানাতে বলেছি।
চল, ভাতটা মাকে দিয়ে আসি। সেই সাথে মেয়েটাকেও দেখে আসব।
দুজনে ভিতরে এসে আবার বেডের কাছে আবসার ভাতের টিফিন বাক্সটা রাখল।
ওদের দেখে আকলিমা বেগম বললেন, বমি আর হয়নি। পায়খানাও কমেছে। তোরা বাসায় যা। সকালে আসবি।
আবসার বলল, সে দেখা যাবে, আমরা ঐ মেয়েটাকে একটু দেখে আসি। তারপর মেয়েটার বেড়ে গিয়ে আকাশীর কাছে শুনল পায়খানা-বমি কমলেও এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
আরিফ আকাশীকে বলল, আমি মাঝে মাঝে এসে খোঁজ নেব। তারপর বাইরে এসে আবসারকে বলল, তুই বাসায় চলে যা, আমি তো রয়েছি। আবার রাজি না হতে জোর করে তাকে একটা বেবীতে তুলে দিল।
পরের দিন সকালে রীমা তার দেব সাকিবকে নিয়ে এল। রীমা সাকিলের সনে আকলিমা বেগমকে বাসায় পাঠিয়ে দিল। বেলা বারোটার সময় খায়ের সাহেবের অবস্থার উন্নতি হলে তিনি বাসায় ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। আবসার ডাক্তারদের সনে পরামর্শ করে বাবাকে নিয়ে বাসায় চলে গেল।