খায়ের সাহেব ছেলের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর গভীর স্বরে বললেন, তুমি এখন যাও।
আবসার মাথা নিচু করে চলে এল।
সেখানে আকলিমা বেগমও ছিলেন। হেলে চলে যাবার পর বললেন, আমি তোমাকে আগেই বলেছি না, আবার ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবে।
: তোমার কথা শুনে মনে হয়ে, তুমি ছেলের পক্ষে।
পক্ষে ঠিক নয়, তবে তুমি যা কিছু বল না কেন, আবসারের কথাগুলো অনেকটা সত্য। মেয়েটার মুখের শী খারাপ হলেও দেহের গড়ন ভাল। মেয়ের মায়ের মুখে শুনলাম, মেয়েটা খুব কঠি। আমাদের সংসারে ঐ রকম মেয়েই দরকার। সুন্দরী মেয়েদের দেমাগ বেশি। তাছাড়া আবার যখন তাকে পছন্দ করে ভালবেসেছে তখন আমাদের অমত করা কি ঠিক হবে?
খায়ের সাহেব গভীর হয়ে বললেন, চিন্তা করে দেখি কি করা যায়।
পরের দিন অফিসে যাবার পথে আবসার রীমার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে বলল, মা-বাবাকে কেমন দেখলে?
রীমা ম্লানমুখে বলল, ভাল।
আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কোন কথাবার্তা বলতে শুনেছ নাকি?
না। তবে ওঁরা পরে জানাবেন, শুধু এতটুকু শুনেছি।
আবসার রীমার ম্লান মুখ দেখে বুঝতে পারল, সে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। পথ আগলে তার মুখের দিকে চেয়ে বলল, আমার চোখের দিকে চেয়ে দেখ তো, কিছু বুঝতে পার কিনা?
রীমা কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে থেকে বুঝতে পারল, সেখানে আশ্বাসের ইশারা রয়েছে। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল, কিন্তু…..।
আবসার তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল, কোন কিন্তু নয়, আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এতটুকু নড়ব না। তোমার কাছে একান্ত অনুরোধ, তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো না।
রীমা ভিজে গলায় বলল, ঠিক আছে তাই হবে। এবার চল, নচেৎ রোজ রোজ লেট লতিফ হলে দুজনেরই চাকরি থাকবে কিনা সন্দেহ।
আবসার বলল, তুমি ঠিক কথাই বলে।
এক ছুটির দিন আবসার আরিফের সঙ্গে দেখা করে বলল, রীমার ব্যাপারে মা রাজি থাকলেও বাবা রাজি নয়। তুই যদি বাবাকে বলিস, তাহলে নিশ্চয় রাজি হবে।
আরিফ হেসে উঠে বলল, চিন্তা করিস না এ বিয়ে তোদের হবেই।
তবু তুই বাবার সঙ্গে দেখা কর।
ঠিক আছে চল, এক্ষুনি তোর সঙ্গে যাই।
বাসার কাছে এসে আবসার বলল, তুই গিয়ে বাবার সঙ্গে আলাপ কর, আমি বাইরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
আরিফ ওদের বাসায় ঘরের ছেলের মত যাতায়াত করে। বাসায় ঢুকে খায়ের সাহেবকে দেখতে পেয়ে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করল।
খায়ের সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ভাল আছি বাবা। এস, বস। তা তুমি ভাল আই তো? অনেক দিন আসনি কেন?
জী ভাল আছি। একটা কাজে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম, পরীক্ষা নিয়েও বেশ ঝামেলা চলছে, তাই আসতে পারিনি। আজ আমি আপনার সঙ্গে কিছু আলাপ করতে এসেছি।
বেশ তো বল, কি আলাপ করতে চাও। তারপর একটু জোরে ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই কে আছিস, আরিফ এসেছে, কিছু নাস্তা নিয়ে আয়।
আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমি বলছিলাম, আবসার যে মেয়েকে পছন্দ করেছে তাকে আমি দেখেছি। তার সঙ্গে আলাপও করেছি। মেয়েটা দেখতে খারাপ হলেও তার অনেক গুণ আছে। আমি তাকে যতটুকু জেনেছি, তাতে করে বলতে পারি, মেয়েটা আপনাদের সবাইকে ইনশাআল্লাহ সুখী করতে পারবে।
খায়ের সাহেব আরিফকে খুব স্নেহ করেন। ভার্সিটিতে পড়ার সময় যে আরিফ আবসারকে শক্রর কবল থেকে উদ্ধার করেছে। যার সংস্পর্শে এসে আবসারের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে এবং ধর্মের দিকে খুঁকে পড়েছে, সেই আরিফ যখন ভাল হবে বলছে তখন আর না করতে পারলেন না। বললেন, তুমি যখন বলছ তখন আর অমত করব না।
আরিফ মনে মনে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করল। এমন সময় আকলিমা বেগমকে না নিয়ে আসতে দেখে সালাম দিয়ে বলল, আপনি আবার এসব আনতে গেলেন কেন? আমি তো নাস্তা খেয়ে এসেছি।
আকলিমা বেগম বললেন, তাতে কি হয়েছে? ছেলে মায়ের কাছে এলে, মা কি কিছু না খাইয়ে ছাড়ে।
আরিফ নাস্তা খেতে শুরু করলে খায়ের সাহেব বীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আবসার যে মেয়েকে পছন্দ করেছে, তাকে আরিফেরও পছন্দ।
আকলিমা বেগম বললেন, তাহলে তুমি তো আর অমত করতে পারবে না।
আরিফ নাস্তা খেয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এল। রাস্তায় এসে আবসারকে দেখে বলল, দুয়াকাত শোকরানার নামাজ পড়িস। কেল্লা ফতে করে এলাম।
আবসার শোকর আলহামদুলিই বলে বলল, নিশ্চয় পড়ব।
আরিফ বলল, পুরস্কার পাওনা রইল, এখন চলি। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে
ঐদিন রাতে মায়ের সাহেব আবসারকে বললেন, আরি সকালে এসেছিল। সে ঐ মেয়েটিকে চিনে এবং তার সময়ে কিছু ভাল কমেন্ট করেছে, তাই আমি এই কাজ করব। তবু তোমাকে কয়েকটা কথা বলছি মন দিয়ে শোন, মেয়ের বাবার আর্থিক অবস্থা তুমি নিশ্চয় দান। বিয়েতে মেয়ে জামাইকে যে কিছুই দিতে পারবেন না, তাও নিশ্চয় জান। কোন দিন সে ব্যাপারে বৌমাকে কোন খোচা দিতে পারবে না। বা-বাব নিয়ে কোন দিন শুরবাড়ি যেতে পারবে না। আমরা বৌমাকে কোন দিন তার বাবা মার কাছে পাঠাব না। তুমি মাঝে-মধ্যে বৌমাকে সঙ্গে করে তার বাবা-মাকে দেখিয়ে আনতে পারবে। বিয়ের কথাবার্তা পাকা হার পর বৌমা আর চাকরি করবে না, এই সব তুমি যদি মেনে নাও, তাহলে আমরা তোমার কথায় রাজি হতে পারি।
আবসার বলল, তাই হবে বাবা।
তারপর মাসখানেকের মধ্যে খায়ের সাহেব রীমাকে পুত্রবধু করে ঘরে নিয়ে