রীমা আবসারের মুখে অকল্পনীয় ভালবাসার কথা শুনে খুব অবাক হয়ে ডিজে গলায় বলল, আল্লাহপাক আমার ভাগ্যে কি এত সুখ রেখেছেন? আমি যে চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
ভাগ্যের কথা আল্লাহপাক জানেন। তোমার কাছে যা চাইলাম, তা যদি তুমি দিতে পার, তাহলে মনে করব, আমার থেকে সারা পৃথিবীতে আর কেউ সৌভাগ্যবান নেই।
রীমা চোখ মুছে ভিজে গলায় বলল, আল্লাহপাক আমাকে যতটুকু ভালবাসার জ্ঞান দিয়েছেন, তা সব উজাড় করে তোমাকে দেব। জানি না তাতে তুমি খুশি হবে কিনা।
আবসার আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল, ব্যাস, তোমার মুখ থেকে যা শুনতে চেয়েছিলাম, আল্লাহপাক তাই শোনালেন। নাস্তা খাওয়া আগেই শেষ হয়েছিল, বলল, চল এবার উঠা যাক।
রীমা বলল, হ্যাঁ তাই চল।
আবার রীমাদের বাসা পর্যন্ত একসঙ্গে এল, তারপর সালাম বিনিময় করে নিজেদের বাসার দিকে রওয়ানা দিল।
কয়েক দিন পর আবার যখন অফিসে যাওয়ার আগে নাস্তা খালি তখন আকলিমা বেগম তাকে বললেন, তুই যে মেয়েটার কথা বলেছিলি, তার কথা তোর বাবাকে বলেছিলাম। কাল অফিস বন্ধ। আমি ও তোর বাবা মেয়েটাকে দেখতে যাব। তুই ওদের বাসায় খবরটা দিস।
আবসার বলল, ঠিক আছে দেব।
অফিসে যাবার পথে রীমাকে বলল, কাল মা ও বাবা তোমাকে দেখতে আসবে। খবরটা তোমার মা-বাবাকে জানিয়ে দিলো।
রীমা বলল, কিন্তু নিজের বিয়ের সম্বন্ধের কথা মা-বাবাকে বলব কি করে?
তাহলে আমি না হয় তাদেরকে বলব, আপনাদের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ের সম্বন্ধ করার জন্য বাবা-মা আসবেন।
রীমা হেসে ফেলে বলল, ইয়ার্কি রাখ। কিভাবে জানাব একটা বুদ্ধি বের কর।
আবসার বলল, তুমি শিক্ষিত ও চাকরিজীবী মেয়ে, বুদ্ধি করে কিছু একটা বলো।
তা ছাড়া আর উপায় কি!তোমার বুদ্ধিতে যখন কুলাচ্ছে না তখন আমাকেই ম্যানেজ করতে হবে। এখন তাড়াতাড়ি চল, নচেৎ লেট লতিফের খাতায় নাম উঠবে।
সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে রীমা মাকে বলল, একটা ছেলের সঙ্গে বেশ কি দিন আগে থেকে আলাপ-পরিচয় আছে। কাল সকালের দিকে তার মা-বাবা আমাকে দেখতে আসবেন। তুমি বাবাকে বলো। সেই
মেয়ের কথা শুনে ফজিলা খাতুন অবাক হলেও মনে মনে খুশি হলেন। বললেন, ছেলেটার খোঁজখবর ভাল করে নিয়েছিস?
রীমা কথাটা বলে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ছিল। সেই অবস্থাতেই বলল, আমি যতটুকু নেবার নিয়েছি, এবার তোমরা নিবে।
ফজিলা খাতুন বললেন, ঠিক আছে, তুই এখন কাপড় পাটে হাত-মুখ দুয়ে নাস্তা খেয়ে নে। তারপর স্বামীকে কথাটা জানালেন।
স্ত্রীর কথা শুনে আব্দুর রহমানও কম অবাক হলেন না। বললেন, আল্লাহপাকের যা মর্জি তাই হবে। ওরা আগে আসুক তারপর অবস্থা বুঝে কথাবার্তা বলা যাবে।
পরের দিন খায়ের সাহেব ও আকলিমা বেগম রীমাদের বাসায় এলেন।
আব্দুর রহমান ও ফজিলা খাতুন সাধ্যমত খাতির-যত্ন করলেন। রীমাই তাদেরকে খাওয়া-দাওয়া করালো। তাকে দেখে দুজনের কারো পছন্দ হল না। তাছাড়া এদের সামাজিক স্ট্যাটাস অনেক নিম্ন শ্রেণীর মনে হল। সে কথা খায়ের সাহেব এক ফাঁকে স্ত্রীকে বললেন।
আকলিমা বেগম স্বামীর মনোভাব বুঝতে পেরে বললেন, আমি তা বুঝেছি। কিন্তু আবসার এই মেয়েকেই বিয়ে করতে চায়। আমার কি মনে হয় জান, ওরা আজকালের হেলে-মেয়ে তো, হয়তো দুজন দুজনকে ভালবাসে।
খায়ের সাহেব বললেন, তাই বলে আমাদের সমাজের বাইরের একটা অসুন্দর মেয়েকে আমরা বৌ করতে পারি না!
তোমার কথা ঠিক; তবে আমি ভাবছি, আমরা অমত করলে আবসার অন্য মেয়েকে এখন বিয়ে করতে চাইবে না। শেষে হয়তো ওরা কাজী অফিসে নিজেরা বিয়ে করে ফেলবে।
আবসার সেরকম কিছু তোমাকে বলেছে নাকি?
অতটা বলেনি; তবে যেটুকু বলেছে তাতেই আমার এই রকম মনে হয়েছে। এমন। সময় আব্বুর রহমানকে আসতে দেখে তারা চুপ করে গেল।
খায়ের সাহেব ও আকলিমা বেগম পরে সবকিছু জানাবেন বলে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। বিদায় হতে রীমা তাদেরকে কদমবুসি করতে ওরা আড়াইশো করে পাচশো টাকা তার হাতে দিয়ে বললেন, বেঁচে থাক মা, সুখী হও।
বাসায় ফিরে এসে খায়ের সাহেব ছেলেকে ডেকে বললেন, তুমি বড় হয়েছ, লেখাপড়া শিখে, ভালমন্দ বুঝার জ্ঞানও হয়েছে; কিন্তু আমি খুব অবাক হচ্ছি, গার্মেন্টসে চাকরি করা নিম্ন সমাজের একটা অসুন্দর মেয়েকে তুমি পছন্দ করলে কি করে? তোমার কাছ থেকে এটা আমরা আশা করিনি।
আবসার জানে রীমাকে বাবা-মা পছন্দ করবে না। তাই কোন কথা না বলে চুপ করে রইল।
খায়ের সাহেব রাগের সঙ্গে বললেন, কিছু বলছ না কেন?
আমার যা কিছু বলার আগেই মাকে বলেছি।
তার মানে, ঐ মেয়েকেই তুমি বিয়ে করতে চাও?
হ্যাঁ বাবা।
খায়ের সাহেব আরো বেশি রেগে গিয়ে বললেন, আমরা যদি ঐ মেয়েকে ঘরে না তুলি?
আবসার ধীর-স্থির স্বরে বলল, বাবা তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? রীমা দেখতে হয়তো সুন্দর নয়; কিন্তু তাকে আমি পছন্দ করি এবং ভালবাসি। আমি আমার জ্ঞানের অনুভূতিতে বুঝতে পেরেছি, ওকে পেলে সুখী হব। সুন্দরের মধ্যে অনেক অসুন্দর লুকিয়ে থাকে। আবার অসুন্দরের মধ্যেও সুন্দর লুকিয়ে থাকে। আমি রীমার মধ্যে এমন অনেক সুন্দরের প্রমাণ পেয়েছি, যা অনেক সুন্দরী মেয়ের মধ্যে নেই। আর তুমি যে নিম্ন সমাজের কথা বলছ, সেটা ঠিক হলেও আমরা তো ঐ সমাজে মেয়ে দিচ্ছি না যে, আমাদের মেয়ে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না। সারণাদায় অনেক সময় গোলাপ ফুল ফুটে। মানুষ ঐ নোংরা জায়গায় সব সময় যাতায়াত না করলেও ফুল তুলতে যায়। আমরা না হয় রীমাকে নিয়ে এসে ঐ সমাজে যাতায়াত করব না।