আবার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, দেখতে ভাল না হলেও মেয়েটার অনেক গুণ আছে।
আকলিমা বেগম বলেন, মেয়েদের ত রূপ থাকলেই সংসারে শান্তি আসে না, সেই সঙ্গে গুণও থাকতে হয়। দুনিয়াতে রূপ ও গুণ দুটোই আছে, এমন মেয়ে খুব কম হয়। যাক তুই বলে ভালই করলি, তোর বাবার অপছন্দ হলে তাকে তোর কথা বলব।
বাবা যদি আমাকে অন্যরকম ভাবে?
না রে না, তুই কি আমাদের সে রকম ছেলে? তোর প্রতি তার বাবার অগাধ বিশ্বাস। ও নিয়ে তুই ভাবিস না, তোর যখন পছন্দ তখন আমাদের অপছন্দ হবার কথাই উঠে না। আমি কিন্তু দুএক মাসের মধ্যে বৌ ঘরে আনার কথা তোর বাবাকে বলব। তাতে তোর কোন আপত্তি নেই তো?
আবার লজ্জা পেয়ে মাকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলল, তোমরা যা ভাল বুক কর, আমার আপত্তি নেই।
আকলিমা বেগম সেই দিনই ঠিকানাটা স্বামীর হাতে দিয়ে ছেলের কথা বললেন।
খায়ের সাহেব শুনে বললেন, আমি তোমার শরীরের কথা ভেবে ওর জন্য মেয়ের খোঁজ করছিলাম। যাক, ও যখন নিজেই পছন্দ করেছে তখন আর দেরি করব না। দুএক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা করব।
আকলিমা বেগম বললেন, আমারও ইচ্ছা তাই।
পরের দিন আবার অফিসে যাবার পথে রীমার সঙ্গে দেখা হতে সালাম বিনিময় করে বলল, আজ অফিস স্থাটির পর এখানে অপেক্ষা করবে কিছু কথা আছে।
রীমা বলল, এখন বললে হয় না?
হয়, তবে বলব না। কারণ কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বেশ সময় লাগবে।
ঠিক আছে, তাই হবে।
আবসার বাস আসতে দেখে বলল, এখন তাহলে আসি? ঠিক সাড়ে চারটের সময় আসব। ভুলে যেয়ো না যেন। তারপর সালাম বিনিময় করে বাসে উঠল।
রীমার দুটি সাড়ে চারটেয়। অফিস থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডের কাছে এসে আবসারকে দেখতে পেল না। ভাবল, কোন কারণে হয়তো দেরি হয়ে। আধঘন্টা পার হয়ে যাবার পরও যখন আবার এল না তখন ভাবল, অফিসের কাজে হয়তো আটকে পড়েছে, আজ আর আসতে পারবে না। তবু আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। কারো জন্য অপেক্ষা করা যে কত কঠিন, তা অনেকে জানেন; কিন্তু একজন যুবতী মেয়ের পক্ষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা যে আরো বেশি কঠিন, তা ভুক্ত ভোগীরা ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তাও আবার অফিস ছুটির সময়। সবাই যেন তাকে গিলে খেয়ে ফেলতে চায়। আরিফ যেদিন মেয়েদের পোশাক সম্বন্ধে আলোচনা করেছিল, সেদিন থেকে রীমা একটা বড় ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে রাখে এবং মাথার চুল রুমাল দিয়ে বেঁধে রাখে। তবু পথিকদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দুতিনটে যুবক পাশ থেকে যাবার সময় একজন সাথীদের বলল, মেয়েটা বোধ হয় কলগার্ল। চাল নিয়ে দেখব নাকি? এই কথায় হেসে উঠে তাদের একজন বলল, সাহস থাকলে চেষ্টা করে দেখ। তবে মনে রাখিস, যদি তোর অনুমান মিথ্যে হয়, তাহলে মেয়েটা পায়ের জুতো দিয়ে তোর মুখ পালিশ করে দেবে। দেখছিস না, মেয়েটার গায়ে মাথায় ওড়না রয়েছে। তাদের কথা শুনে রীমার ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলে গেল। ভাবল, দ্বিতীয় যুবকটার কথাই ঠিক। কেউ ঐরকম বলতে এলে, সত্যি সত্যি পায়ের জুতো খুলে তার মুখ পালিশ করে দিতাম। এমন সময় আমাকে বাস থেকে নামতে দেখে রাগ করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল।
আবসার কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, আমি খুব দুঃখিত। বড় সাহেব মিটিংকল করেছিলেন। অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে বেরিয়ে এসেছি। তাই দেরি হয়ে গেল।
তার কথা শুনে রীমার রাগ পড়ে গেল। তবু মুখ ভার করে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, এদিকে অপেক্ষা করতে করতে যেমন পা ব্যথা হয়ে গেছে, তেমনি লোকজন আমাকে গিলে ফেলতে চাচ্ছে।
আবসার বলল, অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইছি।
রীমা বলল, অনিচ্ছাকৃত যখন, তখন আর কি করা যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত হলে করতাম না।
: তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই।
: ঠিক আছে, চল ঐ সামনের ছোটলে গিয়ে বসা যাক, নাস্তা খেতে খেতে আলাপ করা যাবে।
হোটেলে এসে নাস্তা খাবার সময় রীমা বলল, এবার বল, কি তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা,
জানতে খুব ইচ্ছা করছে বুঝি?
গুরুত্বপূর্ণ কথা জানতে তো ই হবেই।
কথাটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আসলে সুখবর।
যাই হোক না কেন, তুমি বল।
বলব তো বটেই; কিন্তু সুখবর শুনে কি উপহার দেবে বল?
আগে শুনি, তারপর উপহার দেবার কথা চিন্তা করব।
গতকাল মাকে তোমার কথা বলেছি। কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো মা-বাবা তোমাদের বাসায় যাবে।
রীমা কয়েক সেকেও চুপ করে থেকে বলল, আমার যেন কেমন ভয় ভয় করছে। ওরা যদি আমাকে দেখে অপছন্দ করেন?
তোমাকে সেদিনও বলেছি আবার আজও বলছি, তারা তোমাকে অপছন্দ করলেও বিয়েতে অমত করবে না। মা আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে। তার অমতের প্রশ্নই উঠে না। বাবা অমত করতে পারে। মা তাকে ম্যানেজ করবে বলেছে। ওসব নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এত বড় সুখবর দিলাম, কিছু প্রেজেন্ট করবে না?
রীমা ভিজে গলায় বলল, করতে তো মন চাইছে; কিন্তু দেবার মত এখন আমার কিছুই নেই। আল্লাহ যদি সে দিন দেন, তাহলে… বলে থেমে গেল।
: কি হল থেমে গেলে কেন? তাহলে কি?
সময় হলে জানতে পারবে।
আমি কিন্তু তোমার কাছে শুধু একটা জিনিস পেতে চাই। সেটা ছাড়া অন্য কোন কিছুতে আমি খুশি হব না।
বল সেটা কি? নিশ্চয় তা দেব।
ভালবাসা। লোকে ভালবাসা করে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর সংসারের যাতাকলে সেই ভালবাসা নিষ্পেষিত হয়ে মরে যায়। আমরা বিয়ের পর দুজন দুজনকে এমন ভালবাসব, যা সংসারের যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়েও মরে যাবে না, বরং সেই ভালবাসা আরো গভীর থেকে গভীরতর হবে।