ইতি
শামী
শামী ফাস্ট বেঞ্চে বসার জন্য প্রতিদিন ফাহমিদাদের আগে স্কুলে রওয়ানা দেয়। আজ পালেদের পুকুর পাড়ের কাছে এসে অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ফাহমিদা, জোবেদা ও রাহেলা সেখানে এলে শামী সালাম দিয়ে বলল, তোমরা কেমন আছ?
রাহেলা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আমরা তো ভালো আছি শামী ভাই; কিন্তু ফাহমিদার কথা বলতে পারছি না। তারপর জোবেদাকে উদ্দেশ্য করে বলল, চলরে জোবেদা, আমরা আস্তে আস্তে এগোই। ফাহমিদাই বলুক, ও কেমন আছে। তারপর তারা স্কুলের দিকে হাঁটতে লাগল।
ওরা একটু এগিয়ে যেতে শামী ফাহমিদার হাতে চিঠিটা দিয়ে বলল, পড়ে উত্তর দেবে কিন্তু। কেমন আছ বললে না যে?
ফাহমিদা চিঠিটা বুকের কাছে ব্লাউজের ভিতর রেখে বলল, চিঠি পড়ে তুমি কি ভাববে মনে করে অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারি নি।
শামী বলল, আমি কিন্তু তোমার মনের কথা জানতে পেরে খুব শান্তির সঙ্গে ঘুমিয়েছি। আমার চিঠি পড়লেই সবকিছু জানতে পারবে। এবার থেকে আমরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে এখানে দেখা করব। চল, যেতে যেতে কথা বলি।
ফাহমিদা আর কিছু না বলে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।
এরপর থেকে তারা আনন্দে লেখাপড়া করতে লাগল। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় পালেদের পুকুর পাড়ে এসে ফাহমিদা, রাহেলা ও জোবেদাকে স্কুলে চলে যেতে বলে সে শামীর জন্য অপেক্ষা করে। শামী আসার পর দুজনে গল্প করতে করতে স্কুলে যায়। কোনো কোনো দিন স্কুল কামাই করে বসে বসে গল্প করে আবার কোনো দিন মুন্সীগঞ্জে বেড়াতে যায়। এতকিছু করলেও তারা পড়াশোনায় অবহেলা করল না। এভাবে দিন গড়িয়ে চলল।
জোবেদা ও রাহেলা ছাড়া তাদের দুজনের অভিসারের কথা কেউ জানতে পারল। শুধু শামীর বন্ধু রায়হান সবকিছু জানে। শামী বন্ধুকে না জানিয়ে থাকতে পারে নি। ফাহমিদা যত চিঠি দেয় এবং সেও যত চিঠি ফাহমিদাকে দেয়, সেগুলো তো রায়হানকে দেখাবেই, এমন কি তার সঙ্গে কি কথা হয় তাও বলে। প্রথম যেদিন শামী তাকে ফাহমিদার চিঠি দেখায়, সেদিন রায়হান বলেছিল, বড়লোকের মেয়েদের বিশ্বাস করা যায় না। আমার মনে হয় তুই ভুল করেছিস। শামী কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত করে নি। বলেছিল, সবাই সমান হয় না।
নাইন থেকে টেনে ওঠার সময় দুজনেই ফার্স্ট হল। রেজাল্টের দিন শামী তিনজনকে বাজারে নিয়ে গিয়ে মিষ্টি খাওয়াল।
খাওয়া শেষে জোবেদা ফাহমিদাকে বলল, কিরে শামী ভাইকে প্রথম চিঠি দেয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কি বাজী রেখেছিলি, তা ভুলে গেছিস না কি?
ফাহমিদা বলল, ভুলব কেন? এতদিন তোরা সেকথা বলিস নি কেন?
শামী জিজ্ঞেস করল, কিসের বাজী?
ফাহমিদা হাসতে হাসতে ঘটনাটা বলল।
শামী বলল, ফাহমিদা তোমাদেরকে মিষ্টি না খাইয়ে ভালই করেছে। তখন খাওয়ালে আমি ফাঁকা পড়ে যেতাম। এখন হয়ে যাক তা হলে।
রাহেলা বলল, আপনি যা খাইয়েছেন তাতেই পেট টৈটুম্বুর হয়ে গেছে। এখন আর কিছু খেতে পারব না। অন্য দিন ফাহমিদার কল্লা মটকাব।
রাহেলার কথা শুনে তিনজনে হাসতে লাগল। ফাহমিদা হাসি থামিয়ে বলল, তুই এমন কথা বলিস, হাসি চেপে রাখা যায় না। এবার চল বাড়ি ফেরা যাক। বেশি দেরি করলে সবাই চিন্তা করবে।
সেদিন শামী বাড়ি ফেরার পথে রায়হানকে রেজাল্টের কথা জানিয়ে এল।
৩-৪. ক্লাস টেনের প্রিটেস্ট
০৩.
ক্লাস টেনের প্রিটেস্টের আগে পর্যন্ত তাদের প্রেমের পথে কোনো বাধা আসল না। কিন্তু প্রিটেস্টের পরে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফাহমিদার বাবা তাদের দুজনের সম্পর্ক জানতে পেরে মেয়েকে ভীষণ রাগারাগি করলেন। তারপর থেকে মেয়ের উপর খুব কড়া নজর রাখলেন। ফলে ফাহমিদা শামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। ঘটনাটা হল, সেদিন ফাহমিদা চিঠি লিখে একটা বইয়ের ভিতরে রেখে বইটা তাদের চাকর রফিকের হাতে দিয়ে বলল, এটা শামীকে দিয়ে অপেক্ষা করবি। তারপর সে একটা বই তোর হাতে দেবে। সেটা নিয়ে এসে আমাকে দিবি। রফিকের বয়স বার-তেরর মতো। তাকে ছয় বছরের রেখে তার বাবা মারা গেছে। তার মা আবার বিয়ে করেছে। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের কেউ রফিককে দেখতে পারে না। ছোট ছেলে, একটু কিছু করলে সবাই মারে। শেষে তার মা সাত বছরের রফিককে আবসার উদ্দিনের কাছে কান্নাকাটি করে রেখে গেছে। একই গ্রামের মেয়ে রফিকের মা। তাই তিনি দয়াপরবশ হয়ে রফিককে ঘরের ফাইফরমাস শোনার জন্য রেখে দেন। আজ সাত বছর রফিক আবসার উদ্দিনের কাছে আছে। ফাহমিদার চেয়ে রফিক দুতিন বছরের ছোট। সে তারই ফরমাস বেশি শোনে। আজকের আগেও কয়েকবার ফাহমিদা তাকে দিয়ে ঐভাবে শামীকে চিঠি দিয়েছে। কারণ সবদিন পালেদের পুকুর পাড়ে শামীর সঙ্গে তার দেখা হত না। কয়েকদিন দেখা হয়নি, তাই আজ রফিকের হাতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু বিধি হল বাম। রফিক শামীর কাছ থেকে ফিরে এসে আবসার উদ্দিনের সামনে পড়ে গেল।
আবসার উদ্দিন রফিককে বাইরে থেকে বই হাতে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোর হাতে কি বই দেখি?
রফিক সাদাসিধে ছেলে। সে ফাহমিদা ও শামীর সম্পর্কের কথা কিছুই জানে না। নিশ্চিন্তে বইটা ওনার হাতে দেয়ার সময় বলল, আপা একটা বই দিয়ে আমাকে বলল, এটা শামী ভাইকে দিবি, আর শামী ভাই যে বইটা দেবে সেটা নিয়ে আসবি।