ফাহমিদা জেগে গিয়ে উঠে বসে খুব রাগের সঙ্গে বলল, তুমি আর কখনো আমাকে ছুঁবে না। আমাকে এক্ষুনি বাড়ি পৌঁছে দাও। তোমার মতো লম্পটের সাথে আর একণ্ড থাকতে ইচ্ছা করছে না।
মালেক রেগে গেলেও ধৈৰ্য্য হারাল না। বলল, কালরাতেও অনেক কিছু বলে গালাগালি করেছ। আবার এখনও তাই শুরু করে। বলি, এত তোমার অহংকার কিসের, রূপের? আমেরিকায় তোমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি রূপসী মেয়ের যৌবন সুধা পান করেছি। তাদের তুলনায় তুমি কিছুই নও। যাকগে, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এটা তো একটা সাধারণ ব্যাপার। একে নিয়ে এত কান্নাকাটি, ঝগড়াঝাটি ঠিক নয়। তা ছাড়া কয়েকদিন পর যখন তুমি আমার বৌ হতে যাচ্ছ তখন এত দ্বিধা বা সংকোচ কেন? আমেরিকার ছেলেমেয়েরা এটাকে একটা দৈহিক ব্যাপার মনে করে। এটা তাদের কাছে গৌণ ব্যাপার। আসল হল মন। যেখানে মনের মিল সেখানে গৌণ ব্যাপার নিয়ে তারা কোনোদিন মাথা ঘামায় না।
ফাহমিদা কর্কশ কণ্ঠে বলল, এটা আমেরিকা নয়, বাংলাদেশ। আর তারা মুসলমানও নয়। যদি তাদের মধ্যে কেউ মুসলমান থেকেও থাকে, তবে তারা মোনাফেক।
মালেকও রাগের সঙ্গে বলল, বাংলাদেশের অত বড়াই করতে হবে না। এখানেও উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েরা বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে ডেটিং করে। বিয়ের আগে সিলেক্ট করা পাত্র-পাত্রীরা বেড়াতে যাওয়ার নাম করে এইসব করে। আর তারাও মুসলমান ঘরের ছেলেমেয়ে।
ফাহমিদা বলল, তোমার কথা যদি সত্য হয়, তা হলে বাংলাদেশের মুসলমানরাও মোনাফেক হয়ে যাচ্ছে। অতি শীঘ এই দেশের উপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। অত কথা শুনতে চাই না, তুমি এক্ষুনি বাড়ি নিয়ে যাবে কিনা বল, নচেৎ আমি নিজেই তার ব্যবস্থা করব।
মালেক ভেবেছিল, আজ দিনে আর একবার তাকে ভোগ করে বিকেলে বাড়ি ফিরবে। ফাহমিদার কথা শুনে চিন্তা করল, বেশি চাপাচাপি করলে হিতে বিপরীত হবে। তাই রাগকে সংযত করে বলল, নিচে গিয়ে নাস্তা খেয়ে আসি চল। তারপর বেরোন যাবে।
ফাহমিদা দৃঢ়স্বরে বলল, তুমি খেয়ে আসতে পার, আমি কিছু খাব না।
মালেক তার দৃঢ়স্বর শুনে আর কিছু না বলে নাস্তা খেতে একা বেরিয়ে গেল। আধঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখল, ফাহমিদা রেডী হয়ে বসে আছে। সে নিজের জামাকাপড় ব্রিফকেসে ভরে নিল। তারপর হোটেল ছেড়ে দিয়ে ফাহমিদাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠল।
টঙ্গিবাড়ি যাওয়ার রাস্তা আলদিবাজার থেকে অল্প দূরে। গাড়ি যখন আলদিবাজারের কাছাকাছি এল তখন ফাহমিদা বলল, আমাদের গ্রামের রাস্তার মোড়ে আমকে নামিয়ে দেবে।
মালেক বলল, কেন?
ফাহমিদা অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, কেন জিজ্ঞেস করতে তোমার লজ্জা করল না? যা বলছি তাই কর। তারপর দরজার লক খুলে একটু ফাঁক করে বলল, যদি গাড়ি না থামাও তাহলে লাফ দেব।
মালেক ফাহমিদার অগ্নিমূর্তি দেখে ভয় পেল। তার ইচ্ছা ছিল বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মাকে বলবে আজকালের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তার মতিগতি দেখে ভাবল, সে যদি সত্যিই লাফ দেয়, তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, আমাদের বাড়িতে যখন যাবে না তখন তোমাকে রাস্তার মোড়ে নামাব কেন? একেবারে তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিই। খালা খালুকে বলব, তারা যেন আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করেন।
ফাহমিদা গর্জে উঠল, তুমি ভেবেছ এরপরও আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হব? আমাদের বাড়িতে আর কষ্ট করে যেতে হবে না। আমি তাদেরকে তোমার চরিত্রের গুণাগুণ করে আজই খালা খালুর কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার খবর পাঠিয়ে দিতে বলব। তোমার মতো মদখোর, মাগী খোর ছেলের সঙ্গে জেনে শুনে আমার মা বাবা বিয়ে দেবে ভেবেছ?
ততক্ষণে আলদিবাজারের রাস্তার মোড়ে গাড়ি পৌঁছে যেতে ফাহমিদা চিৎকার করে বলল, গাড়ি থামাও বলছি নচেৎ যা বললাম তা সত্যি সত্যি করে ফেলব।
অগত্যা মালেক গাড়ি থামাতে বাধ্য হল। ফাহমিদা নেমে যেতে বলল, তোমার জন্যে আমার দুঃখ হচ্ছে। এই সামান্য জিনিস নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করবে জানলে বিয়ের আগে তোমার গায়ে হাত দিতাম না। তুমি পাড়াগাঁয়ের মেয়ে বলে কলেজে পড়লেও তোমার মনের সংকীর্ণতা কাটে নি। তবে এত বাড়াবাড়ি না করলেও পারতে। যাচ্ছ যাও, শেষ মেস একটা কথা না বলে পারছি না, তুমি খালাত বোন বলে ছেড়ে দিলাম, অন্য কেউ হলে লাশ হয়ে গ্রামে ফিরত। তারপর সে গাড়ি ছেড়ে দিল।
জহুরা খানম ছেলেকে একা গাড়ি থেকে নামতে দেখে আতঙ্কিত স্বরে বললেন, কিরে ফাহমিদা কোথায়?
মালেক গম্ভীর স্বরে বলল, তাকে তাদের বাড়িতে রেখে এসেছি।
তাকে নিয়ে এলি না কেন?
যে আসবে না তাকে আনব কেমন করে?
জহুরা খানম ছেলের মন খারাপ দেখে ভাবলেন, ফাহমিদা আসে নি বলে মন খারাপ হয়ে আছে। বললেন, ঘরে গেছে ভালো কথা। তাতে তুই মন খারাপ করছিস কেন? আমি তোর আব্বাকে বলে যত শিঘী পারি তাকে বৌ করে আনার ব্যবস্থা করছি।
মালেক, কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।
এদিকে ফাহমিদাকে ঐ অবস্থায় একা ফিরতে দেখে শাকেরা খানম আতঙ্কিতস্বরে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে তোর চেহারা এরকম কেন? তুই একা এলি নাকি?
এতটা পথ দুপুরে প্রখর রোদে হেঁটে এসে ফাহমিদার ফর্সা মুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে। সে খুব ক্লান্তি বোধ করছিল। মায়ের কথার উত্তরে শুধু বলল, তোমার গুণধর ভাগ্না পাকা রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে গেছে। তারপর সে দাঁড়াল না, নিজের রুমের দিকে চলে যেতে লাগল।