ফাহমিদার মনে সন্দেহটা কাঁটার মত বিধতে লাগল। কিন্তু কোনো উপায় না দেখে একরকম বাধ্য হয়ে মালেকের কথা মেনে নিল। কাপড় পাল্টে খাটে বসে চিন্তা করতে লাগল, একবিছানায় ঘুমানো ঠিক হবে কিনা।
মালেক বাথরুম থেকে এসে কাপড় পাল্টাবার সময় ফাহমিদাকে চিন্তিত দেখে বলল, তোমার যদি একবিছানায় ঘুমাতে এতই সংকোচ, তা হলে আলাদা ব্যবস্থা করছি। তাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বলল, দেখছ না দুটো খাট জুড়ে দেয়া হয়েছে। এস দুজনে ধরে আলাদা করে নিই।
ফাহমিদা খাট থেকে নেমে দুজনে ধরে খাট সরিয়ে অন্যপাশের দেয়ালের কাছে নিয়ে গেল। তারপর মালেক বলল, এবার নিশ্চিন্ত হলে তো? চল, এখন খেয়ে আসি।
খেয়ে আসার পর মালেক বলল, তুমি ঘুমাও, আমি একটু নিচে থেকে আসছি।
ফাহমিদার মন থেকে সন্দেহটা কাটল না। ভাবল, তবু তো একবিছানায় ঘুমাতে হল না। নিচে যাওয়ার কথা শুনে বলল, এখন আবার কোথায় যাবে?
মালেক বলল, সে কথা জেনে তোমার কোনো লাভ নেই, তুমি ঘুমাও। কথা শেষ করে সে বেরিয়ে গেল।
ফাহমিদা খাটে বসে বেশ কিছুক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করল। তারপর শুয়ে পড়ে ভাবল, এতরাতে কোথায় যেতে পারে? সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জেগে থাকার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে শরীরের ওপর অনেক ধকল গেছে; তাই কখন যে তার চোখে ঘুম নেমে এল তা সে জানতে পারল না, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
মালেক রুম থেকে বেরিয়ে বারে এসে অনেক্ষণ বসে বসে মদ খেল। তারপর যখন সে রুমে ফিরে এল তখন ফাহমিদা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল, সে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। তার যৌবনপুষ্ট উন্নত বক্ষ শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে সাথে উঠানামা করছে। একদিকের বুকের কাপড় সরে গেছে। মাতাল অবস্থায় নিশীথ রাতে নির্জন রুমে একটা যুবতী মেয়েকে ঐ অবস্থায় দেখে কোনো যুবক কি সংযত থাকতে পারে? পারে না। সে জন্যে আল্লাহপাক ও তার রাসুল (সঃ) গায়ের মোহররম (যাদের সঙ্গে বিবাহ জায়েজ) মেয়ে পুরুষকে এক সঙ্গে নির্জনে থাকা হারাম করেছেন। মুসলমানরা কুরআন হাদিসের কথা না জেনে এবং জেনেও না মেনে হারাম কাজ করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে আজ তাই মুসলমানদের উপর আল্লাহর গজব নেমে এসেছে।
ফাহমিদাকে ঐ অবস্থায় দেখে মালেক নিজেকে সংযত রাখতে পারল না। বাজ পাখির মতো তার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর চুমোয় চুমোয় মাতিয়ে তুলে নিরব ভাষায় তাকে নতুন পথে আহ্বান করতে লাগল।
ফাহমিদা জেগে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে প্রথমে ভীষণ প্রতিবাদ করতে লাগল। নিজেকে বাঁচাবার জন্য অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তিও করল। কিন্তু একজন বলিষ্ঠ মাতাল যুবকের সঙ্গে কতক্ষণ আর পারবে? শেষে কেঁদে কেঁদে অনেক অনুনয় বিনয় করেও কিছু ফল হল না। তা ছাড়া তার শরীরও যেন কিছু একটা পাওয়ার আশায় মেতে উঠল। শেষে শরীরের আহ্বানে সাড়া দিতে বাধ্য হল। এরপর যা ঘটার ঘটে গেল।
ফাহমিদার শরীর ও মনের তাণ্ডব যখন থেমে গেল তখন সে বাস্তবে ফিরে এল। ধাক্কা দিয়ে মালেককে সরিয়ে কাপড়টা গায়ে জড়িয়ে রূঢ়কণ্ঠে বলল, জানতাম না, তুমি একজন মাতাল ও লম্পট। আজ বুঝতে পারলাম মদ ও নারী না হলে তোমার চলে না। নারীদের সতীত্ব নিয়ে খেলা করা তোমার কাজ। তুমি খালাত ভাই বলে এবং সৎ জেনে তোমার সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলাম। আমার মা বাবাও তাই জেনে তোমার সঙ্গে বেড়াবার সুযোগ দিয়েছে। আর তুমি কিনা এতবড় জঘন্যতম কাজ করতে পারলে? তুমি নরকের কীটের চেয়েও অধম। আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তুমি এত বড় পাপিষ্ঠ, আমার সর্বনাশ করে ছাড়লে। তোমার সুন্দর চেহারার মধ্যে যে এরকম পশুত্ব লুকিয়ে রয়েছে, তা যদি ঘুণাক্ষরে জানতে পারতাম, তা হলে তোমার সঙ্গে বেড়াতে আসতাম না। রাতে বাড়ি ফিরতে পথে বিপদের ভয় দেখিয়েছিলে তোমার এই জঘন্য মনোবৃত্তি পূরণ করার জন্য। এরপর তোমাকে বিয়ে করার কথা ভাবতে আমার ঘৃণা হচ্ছে। বিষ খেয়ে মরব, তবু তোমাকে বিয়ে করব না। না জানি এর আগে কত মেয়ের সতীত্ব তুমি নষ্ট করেছ। তারপর মুখে হাত চাপা দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
ফাহমিদার কথার উত্তর দেয়ার মত অবস্থা তখন মালেকের নেই। মাতাল অবস্থায় ঐ কাজ করে তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ল। ফাহমিদা অনেক্ষণ ধরে কেঁদে কেঁদে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ল তখন মালেককে তার পাশে শুয়ে থাকতে দেখে কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে ডেকে সাড়া না পেয়ে বুঝতে পারল, সে ঘুমাচ্ছে। তখন সে বাথরুমে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করল। তারপর জামাকাপড় পরে অন্য খাটে ঘুমাতে গেল। অনেকক্ষণ তার চোখে ঘুম এল না। তখন তার মানস পটে শামীর সুন্দর, সরল ও পবিত্র মুখ ভেসে উঠল। এতবছর তার সাথে মেলামেশা করলাম, কই একদিনের জন্যও সে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাকে স্পর্শ করে নি। এই সব ভাবতে ভাবতে শামীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কথা মনে করে তার ভীষণ অনুশোচনা হল। মনের অজান্তে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। শেষে ভোরে দিকে ঘুমিয়ে পড়ল।
বেলা সাতটার সময় মালেকের ঘুম ভাঙ্গল। উঠে বসে দেখল, ফাহমিদা অন্য খাটে ঘুমাচ্ছে। সে যে সারারাত কেঁদেছে তা তার ঘুমন্ত মুখে বেশ স্পষ্ট ফুটে রয়েছে। তার এই মুখচ্ছবি মালেকের কাছে খুব সুন্দর বলে মনে হল। তৃপ্তির হাসি হেসে বাথরুমে গোসল করতে গেল। গোসল করে এসে জামা কাপড় পরে ফাহমিদাকে জাগাবার জন্য গায়ে হাত দিয়ে তার নাম ধরে ডাকতে লাগল।