আমি তোমাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে সবকিছু দেখাব।
সত্যি বলছেন?
হ্যাঁ সত্যি বলছি। তুমি কিন্তু আবার আপনি করে বলছ।
ফাহমিদা হেসে ফেলে বলল, ভুল হয়ে গেছে। আর বলব না। মাফ করে দিন, থুড়ি দাও।
মালেকও হেসে ফেলে বলল, মনে হয় তুমি আমাকে ঠিক আপন করে নিতে পারছ। তাই আপনি আপনি করছ।
ফাহমিদা বলল, তা ঠিক নয়। যা অভ্যেস হয়ে যায় তা পরিবর্তন করতে একটু সময় লাগে। এটা তোমার বোঝা উচিত।
মালেক বলল, তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু যেখানে নিবীড় সম্পর্ক গড়ে উঠে সেখানে তোমারও ভুল হওয়া উচিত না।
তারপর তারা নানারকম গল্প করতে করতে একসময় বাড়িতে এসে পৌঁছাল।
মালেকের মা জহুরা খানম খুশী হয়ে ফাহমিদাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো খেয়ে বললেন, কবে যে তোকে বৌ করে ঘরে আনব সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছি। এই মাসের মধ্যে তোর খালুকে ব্যবস্থা করতে বলব।
ফাহমিদা লজ্জা পেলেও খালাকে কদমবুসি করে বলল, আপনি কেমন আছেন?
জহুরা খানম দোয়া করে বললেন, বেঁচে থাক যা, সুখী হও। আমি ভালো আছি।
মালেক সেখানে ছিল। বলল, তুমি যে ওকে বৌ করার কথা বললে, তা খালা খালুকে বলেছ?
জহুরা খানম বললেন, সে কথা তোকে বলতে হবে না।
মালেক আর কিছু না বলে হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেল।
রাতে খাওয়ার সময় মালেক মাকে বলল, কাল ফাহমিদাকে নিয়ে ঢাকা বেড়াতে যাব।
জহুরা খানম বললেন, বেশ তো যাবি। ওকে ঢাকার সবকিছু দেখিয়ে নিয়ে আসবি।
সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত দুজনের কেউ ঘুমাতে পারল না। মালেক ভাবছে, কবে রূপসী ফাহমিদাকে একান্ত করে পেয়ে তার রূপসুধা পান করবে। সেই চিন্তা করে অনেক রাত পর্যন্ত তার ঘুম হল না। আমেরিকায় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সে চরিত্র হারিয়েছে। রেগুলার মদ খেত। মাঝে মাঝে নারীদেহও ভোপ করেছে। দেশে ফিরেও প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে ঘুমায়। বাড়ির কেউ সে খবর জানে না। আজ মদ খেয়ে ফাহমিদাকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। সে অন্য ঘরে ভাই বোনদের সঙ্গে ঘুমাচ্ছে বলে তাকে পাওয়ার আশা নেই ভেবে তার কথা ভুলে থাকার জন্য আরো বেশি মদ খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
আর ফাহমিদা ভাবছে, সে স্কুলে পড়ার সময় যখন দুএকবার এখানে এসেছিল তখন বাড়িঘর টিনের ছিল। কারেন্টও ছিল না। এখন বিল্ডিং ও ঘরের আসবাবপত্র দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। সে ছোট ছোট খালাত ভাইবোনদের সাথে একরুমে অন্য খাটে ঘুমিয়েছে। তারা সব ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু ফাহমিদার চোখে ঘুম নেই। কবে সে এই বাড়ির বৌ হয়ে আসবে, সে কথা মনে করে তার ঘুম আসছে না। ভাবল, এটাই আমার উপযুক্ত স্থান। আল্লাহ রক্ষা করছেন, যদি শামীর সঙ্গে বিয়ে হত, তা হলে সারাজীবন প্রেতপূরীতে কাটাতে হত। এ বাড়িতে যেসব আসবাবপত্র রয়েছে, শামী হয়তো সেসব কোনো দিন চোখেও দেখে নি। তার উপর খালা খালুর স্নেহ ও মালেকের ভালবাসার কথা ভেবে সে সুখের স্বপ্ন সাগরে ভেসে বেড়াতে লাগল। এইসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন বেশ বেলাতে তাদের দুজনের ঘুম ভাঙ্গল। গোসল করে নাস্তা খেয়ে মালেক ফাহমিদাকে নিয়ে গাড়িতে করে ঢাকা বেড়াতে বেরোল। ঢাকায় এসে তারা প্রথমে চিড়িয়াখানা দেখল। তারপর দুপুরে একটা হোটেলে চাইনিজ খেয়ে লালবাগের কেয়া ও নবাববাড়ি দেখে শিশুপার্কে ঢুকল। তখন বেলা শেষ। তাই সব আসনে চাপার সুযোগ পেল না। শুধু চরকায় ও ট্রেনে চাপল। সেখান থেকে বেরোতে সন্ধ্যে পার হয়ে গেল।
গাড়িতে উঠে মালেক বলল, বাড়ি পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। দেশের যা অবস্থা, রাস্তায় কোনো বিপদ হতে পারে। তার চেয়ে রাতটা কোনো হোটেলে থেকে সকালে যাওয়া যাবে। ফাহমিদা কখনো হোটেলে থাকে নি। শুনেছে হোটেলে থাকার জন্য খুব ভালো ব্যবস্থা থাকে। সেখানে থাকার কথা শুনে খুশী হয়ে বলল, তুমি যা ভালো বুঝ কর।
মালেক গাড়ি নিয়ে মতিঝিলের একটা অভিজাত হোটেলে ডবল বেডের রুম নিল।
মালেক যখন ফাহমিদাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে ডবল বেডের রুম নিল তখন তার মনে কেমন যেন সন্দেহ জাগল। বয় তাদেরকে রুমে রেখে চলে যাওয়ার পর মালেককে বলল, তুমি আমাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিলে কেন?
মালেক মৃদু হেসে বলল, তাতে কি হয়েছে? কিছুদিনের মধ্যে তুমি তো তাই হতে যাচ্ছ।
যখন হব তখনকার কথা আলাদা। সত্যি কথা বলা তোমার উচিত ছিল।
সত্যি কথা বললে একসঙ্গে থাকা যেত না। দুটো রুমে আলাদা আলাদা থাকতে
সেটাই তো ভালো হত। একরুমে আমি ঘুমাতে পারব না।
মালেক মনে মনে একটু রেগে গেল। তা বাইরে প্রকাশ না করে বলল, কেন?
কেন আবার? তা হলে সারারাত ঘুম হবে না।
মালেক খাটের দিকে তাকিয়ে দুটো খাট একসঙ্গে রয়েছে দেখে বলল, ঠিক আছে, এক বিছানায় ঘুমাতে না চাইলে আমি আলাদা ব্যবস্থা করছি।
কি ব্যবস্থা করবে? তার চেয়ে অফিসে গিয়ে দুটো রুমের ব্যবস্থা কর।
এখন আর তা সম্ভব নয়। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ডবল বেডের রুম নিয়েছি। আবার কি বলে দুটো রুম নেব। দুটো রুম নিতে গেল কেলেংকারীর শেষ থাকবে না। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে। তোমার মন এত ছোট নে? একরুমে থাকলে তোমার কি এমন ক্ষতি হবে? ওসব কথা বাদ দিয়ে কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে নাও। খেতে যেতে হবে। তারপর সে বাথরুমে ঢুকল।