সেদিন তারা মুন্সীগঞ্জে দর্পনা হলে শক্তি বই দেখল। তারপর একটা হোটেলে ঢুকে চা নাস্তা খেয়ে মার্কেট করতে গেল। মালেক খালার জন্য ব্লাউজের পীসসহ শাড়ি, খালুর জন্য পাজামা পাঞ্জাবীর কাপড় ও ফাহমিদার চয়েস মতো থ্রী পীসের সালওয়ার কামিজ এবং অনেক রকমের প্রসাধনী সামগ্রী কিনল। ফেরার পথে ফাহমিদাকে জিজ্ঞেস করল, জিনিসগুলো তোমার পছন্দ হয়েছে?
ফাহমিদা মালেককে যত জানছে তত তার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। শামীর কথা যে মনে পড়ছে না, তা নয়। তবে তার কথা মনে স্থায়ী হচ্ছে না। কেবলই তার মনে হচ্ছে, কোথায় দরিদ্র শামী আর কোথায় বিত্তবান মালেক? মালেককে দেখে এবং তার কথাবার্তায় আগেই মুগ্ধ হয়েছে। এখন তার খরচের বহর দেখে আরো বেশি মুগ্ধ হল।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে মালেক বলল, কিছু বললে না যে?
ফাহমিদা এতক্ষণ ঐসব ভাবছিল। বলল, সবকিছু তো দামী জিনিস। পছন্দ হবে না কেন? তারপর কপটতার ভান করে বলল, শুধু শুধু এত খরচ করতে গেলেন কেন?
মালেক হেসে উঠে বলল, এ আর কটাকা খরচ করলাম। যদি তোমার সঙ্গে আমার বলে থেমে গিয়ে তার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল।
ফাহমিদা লজ্জারাঙা হয়ে বলল, থেমে গেলেন কেন? কথাটা শেষ করুন।
মালেক আর একবার তার লজ্জারাঙা মুখ দেখে এবং তার কথা শুনে ফাহমিদার মনের খবর একটু আন্দাজ করতে পারল। তবু বলল, বললে তুমি মাইণ্ড করতে পার।
ফাহমিদা বলল, মাইণ্ড করব কেন? আপনি বলুন।
তার কথা শুনে মালেকের সাহস বেড়ে গেল। বলল, তোমাকে যদি বিয়ে করতে পারতাম, তা হলে দেখতে, তোমার জন্য কত হাজার হাজার টাকা খরচ করতাম।
মালেকের কথা শুনে ফাহমিদা বুঝতে পারল, সে এখনও তা হলে জানে না, তার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা ঠিক হয়ে আছে। হঠাৎ তার শামীর কথা মনে পড়ল। শামী এখনও ছাত্র। পড়াশোনা শেষ করে কবে সে উপযুক্ত হবে তার কোনো ঠিক নেই। তা ছাড়া তার বাবার কি এমন আছে, যা সে আমার পিছনে খরচ করবে? তার উপর তারা যা গোড়া ধার্মিক? ঘর থেকে মেয়েদের বোরখা ছাড়া বেরোতে দেয় না। শামীর কাছ থেকে শুধু ভালবাসা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না। শুধু ভালবাসা নিয়ে কেউ কি সুখী হতে পারে?
ফাহমিদা কিছু বলছে না দেখে মালেক বলল, দেখলে তো, আমার কথা শুনে মাইণ্ড করলে?
মাইণ্ড করেছি বুঝলেন কি করে?
তা না হলে কিছু বলছ না কেন?
আমার মুখ দেখে কি তাই মনে হচ্ছে?
তা অবশ্য হয় নি। তবু তোমার মুখ থেকে কিছু শোনার আশা করছিলাম।
না মাইণ্ড করি নি। পুরুষরা যত তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা বলতে পারে, মেয়েরা তা পারে না। আচ্ছা, আপনি এসেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ের কথা বলে ফেললেন; কিন্তু ভেবেছেন কি, আমি বড় হয়েছি, লেখাপড়া করেছি। আমারও তো পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে?
অফকোর্স। জান, আমেরিকার লোকেরা বেশ আনন্দে আছে। ছেলে মেয়ে যাকে পছন্দ করছে তাকে বিয়ে করছে। কিছুদিন সংসার করার পর কোনো কারণে মনোমালিণ্য হলে ইচ্ছা মত ডিভোর্স নিয়ে আবার পছন্দ মতো বিয়ে করছে। দারুণ ইন্টারেস্টেড ব্যাপার তাই না?
শামী একদিন ফাহমিদার সঙ্গে উন্নতশীল দেশের আলোচনা করার সময় সে সব দেশের নারী স্বাধীনতা ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুফল ও কুফল বলেছিল। তখন ফাহমিদা বুঝতে পেরেছিল, নারী স্বাধীনতা মানে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা নয়। আমরা বুঝতে পেরেছিল, এই অবাধ মেলামেশার ফলে ঐসব দেশের মানুষ দাম্পত্য জীবনে ভীষণ অসুখী এবং সে সব দেশে বছরে কয়েক লক্ষ অবৈধ সন্তান জন্মাচ্ছে। এখন মালেকের কথা শুনে শামীর কথা মনে পড়ল। বলল, যতই ইন্টারেস্টেড হোক, আমার মনে হয়, এটা ঠিক নয়। কারণ এর ফলে দাম্পত্য জীবন যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় না তেমনি সুখেরও হয় না।
মালেক বলল, তোমার কথা অবশ্য ঠিক। তবে সে সব দেশের লোকেরা ঐসব নিয়ে চিন্তা করে না। তারা ধর্ম-টর্মও তেমন মানে না। সেক্সকে তারা দৈহিক ক্ষুধা মনে করে। সেটা যেভাবেই হোক তারা মিটিয়ে নেয়। তাতে তারা পাপ বোধ করে না। যাকগে, বাদ দাও ওসব কথা। ওদের দেশে যেটা প্রচলন, আমাদের দেশে সেটা অপরাধ।
তাতো বটেই। আপনি কোনটাকে ভালো মনে করেন?
আমার ভালো-মন্দের কি দাম আছে বল। অপরাধরোধ নিজের কাছে। এক জনের কাছে যা ভালো, অন্যজনের কাছে তা মন্দ। তবে ধর্ম যারা মেনে চলে তাদের কথা আলাদা।
আপনি কি ধর্ম বিশ্বাস করেন না?
বিশ্বাস যে একবারে করি না তা নয়। তবে ধর্ম সম্বন্ধে যেমন কিছু জানি না তেমনি মেনেও চলি না। তুমি কি ধর্মের সবকিছু মেনে চল?
আমি আপনার মতো ধর্ম সম্বন্ধে বেশি কিছু না জানলেও কিছু কিছু জানি। সেসব মেনে না চললেও বিশ্বাস করি। আমার মনে হয়, প্রকৃত মানুষের মতো মানুষ হতে। হলে, ধর্মের প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে চরিত্র গঠনের জন্য ধর্মই প্রধান হাতিয়ার।
তুমি তো দেখছি মনিষীদের মতো কথা বলছ। আমার মতে ধর্ম বুড়ো বয়সের ব্যাপার। মানুষ যখন কর্ম ক্ষমতা হারায় তখন বসে শুয়ে ধর্ম কর্ম করবে। যুবক বয়সে ওসব মানায় না। সেই সময় উপার্জন করবে এবং জীবনকে পূর্ণরূপে ভোগ করবে। ভোগ করার জন্যই তো জীবন। যে জীবনে কোনো কিছু ভোগ করতে পারল না, তার জীবনটাই বৃথা।