একটু পরে ফাহমিদা চা নাস্তা নিয়ে এসে পরিবেশন করে বলল, নিন শুরু করুন।
মালেক ফাহমিদার রূপ দেখে আগেই মুগ্ধ হয়েছে। এখন তার গলার সুমিষ্ট স্বর শুনে আরো বেশি মুগ্ধ হয়ে তার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
ফাহমিদা লজ্জা পেয়ে বলল, এভাবে কি দেখছেন? নাস্তা খেয়ে নিন।
মালেক বলল, সত্যি বলতে কি, আমেরিকায় অনেক সুন্দরী মেম দেখেছি। কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, তাদের থেকে তুমি অনেক বেশি সুন্দরী।
ফাহমিদা ছোটবেলা থেকে সবাইয়ের কাছে রূপের প্রশংসা শুনে এসেছে। কিন্তু এভাবে কেউ বলে নি। আরো বেশি লজ্জা পেয়ে কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, তাই নাকি? আপনিও কিন্তু খুব সুন্দর।
মালেক হো হো করে হেসে উঠে বলল, এর আগে কোনো মেয়ের মুখ থেকে এ কথা শুনিনি। যাকগে, আমি একা খাব নাকি? তোমারটা কই?
ফাহমিদা বলল, আমি একটু আগে খেয়েছি, এখন আর খেতে পারব না।
মালেক বলল, ওসব শুনব না একটু হলেও খেতে হবে। তারপর তার একটা হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে বলল, এখান থেকেই খাও।
ফাহমিদা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অল্প একটু মুখে দিয়ে বলল, এবার আপনি খেয়ে নিন। তারপর হাত ধুয়ে সরে বসল।
মালেক আর কিছু না বলে খেতে লাগল। চা খাবার সময় বলল, তুমি পড়াশোনা ছেড়ে দিলে কেন? ডিগ্রী পর্যন্ত পড়া উচিত ছিল।
আমি তো পড়ার জন্য খুব জিদাজিদী করেছিলাম। মা-বাবা কিছুতেই রাজি হল না।
খালা বলল, গ্রামের আজে-বাজে ছেলেদের ভয়ে তোমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। তুমি আমাদের বাড়িতে থেকে বি. টি. কলেজে পড়তে পারতে?
সে কথাও আমি বলেছিলাম; কিন্তু রাজি হয়নি।
ততক্ষণে মালেকের চা খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। ফাহমিদা নাস্তার প্লেট ও চায়ের কাপ নিয়ে যাওয়ার সময় বলল, এগুলো রেখে আসছি।
দুপুরে খাওয়ার পর মালেক বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ফাহমিদার কথা চিন্তা করছিল।
এমন সময় ফাহমিদা রুমে ঢুকে বলল, আম্মা জিজ্ঞেস করতে পাঠাল, এখন আপনার আর কিছু দরকার আছে কিনা।
মালেক উঠে বসে বলল, না আর কোনো কিছু দরকার নেই। তুমি বস, তোমার সঙ্গে গল্প করি। দিনে ঘুমান আমার অভ্যাস নেই।
ফাহমিদা বলল, বসলেন কেন? শুয়ে শুয়ে গল্প করুন। আমি এখানে বসছি বলে একটা চেয়ারে বসল।
মালেক শুয়ে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। খালা একটু বেশি খাইয়ে দিয়েছে। চল, আজ বিকেলে মুন্সীগঞ্জে গিয়ে সিনেমা দেখে আসি।
কবে সিনেমা দেখেছে ফাহমিদার মনে নেই। মালেকের কথা শুনে উফুল্ল হয়ে বলল, আব্বা-আম্মা কি যেতে দেবে?
তুমি রাজি আছ কিনা বল। আমি খালা-খালুকে ম্যানেজ করব।
তা হলে আমি রাজি।
তুমি খালাকে ডেকে নিয়ে এস।
ফাহমিদা মাকে ডাকতে যেতে মালেক খাট থেকে নেমে বাথরুম থেকে এসে জামা প্যান্ট পরতে লাগল।
একটু পরে মেয়ের সঙ্গে শাকেরা খানম এসে তাকে জামা প্যান্ট পরতে দেখে বললেন, তুমি কি এক্ষুনি চলে যাবে না কি? তা হচ্ছে না বাবা। খালার বাড়ি এসেছ, কয়েকদিন বেড়াও। তারপর না হয় যাবে। কতদিন তোমাকে দেখিনি। তোমার খালু শুনলে রাগ করবে।
মালেক বলল, আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি আপনাকে কে বলল? মুন্সীগঞ্জে যাব। আমি তো কয়েকদিন থাকব বলে মাকে বলে এসেছি।
শাকেরা খানম বললেন, তাই বল। আমি শুধু শুধু কি সব বললাম।
মালেক বলল, খালা, আমি বলছিলাম কি, ফাহমিদাকেও সঙ্গে নিয়ে যাব। ওতো মনে হয় কোথাও বড় একটা যায় নি। আমার সাথে গাড়িতে করে ঘুরে আসুক।
শাকেরা খানম শুনে খুব খুশী হলেন। উনি তাই চান। যার সঙ্গে বিয়ে হবে তার সঙ্গে বেড়াতে যেতে কোনো বাধা বলে মনে করলেন না। তার উপর আপন খালাত ভাইবোন। বললেন, বেশ তো বাবা ওকে নিয়ে যাও। তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, যা, তুই কাপড়-চোপড় পরে তৈরী হয়ে আয়। আমি চা করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। খেয়ে দুজন বেড়িয়ে আয়।
ফাহমিদা বলল, আব্বাকে বলতে হবে না?
শাকেরা খানম বললেন, সে এখন ঘুমাচ্ছে। তাকে আমি বলবখন। তোকে যা বললাম তাই কর। কথা শেষ করে তিনি চলে গেলেন।
মালেক ফাহমিদাকে বলল, দেখলে, কিভাবে ম্যানেজ করলাম? এবার যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে এস।
রূপসী ফাহমিদা রূপবান মালেককে দেখে শামীর কথা ভুলে গেল। নিজের রুমে গিয়ে মনের মতো সাজল। কমলা রং-এর সালওয়ার কামিজ পরে এবং ঐ রং-এর ওড়নাটা ভাঁজ করে বুকের উপর ঝুলিয়ে মালেকের কাছে এসে বলল, কই, চলুন।
মালেক তাকে দেখে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল, হাউ নাইস? সত্যি তোমার রুচিবোধ আছে। গায়ের রং এর সঙ্গে ম্যাচ করে জামা কাপড় পরেছ। তাতে তোমাকে আরো অনেক বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে। আমার চোখ ঝলসে যাচ্ছে। যদি বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীতা কর, তা হলে সিওর, তুমি শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর স্বর্ণপদক পাবে।
মালেকের মুখে তার রূপের প্রশংসা শুনে ফাহমিদার দেহে ও মনে অন্য এক রকমের আনন্দ ও গর্বের অনুভূতির স্রোত বইতে লাগল। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল, আপনি শুধু শুধু বাড়িয়ে বলে লজ্জা দিচ্ছেন।
মালেক এগিয়ে এসে তার চিবুক ধরে মুখটা তুলে বলল, আমি এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না।
ফাহমিদা তার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল, হয়েছে হয়েছে, অত আর রূপের প্রশংসা করতে হবে না। যাবেন তো চলুন।
মালেক বলল, হ্যাঁ চল।