এরমধ্যে ফাহমিদার খালাত ভাই মালেক প্রায় সাত বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে এল। তাদের বাড়ি টঙ্গিবাড়িতে। টঙ্গিবাড়িতে বি. টি. কলেজ থেকে মালেক আই. এ. পাস করে আমেরিকা চলে গিয়েছিল। সেখানে আরো পড়াশোনা করে চার বছর হল চাকরি করছে। ছ-মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছে। তার মা-বাবার ইচ্ছা ছেলের বিয়ে দেবে। তাই কয়েক দিন পর তার মা জহুরা খানম ছেলেকে বললেন, আমরা তোর বিয়ে দিতে চাই।
মালেক বিয়ে করার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে এসেছে। সে কথা কাউকে দিয়ে মা বাবাকে জানাবে ভেবেছিল। তার আগেই মাকে বলতে শুনে মনে মনে খুব খুশী হল। তবু ডাইরেক্ট মত প্রকাশ না করে বলল, আমার ইচ্ছা ছিল, পরের বারে এসে বিয়ে করার।
জহুরা খানম বললেন, আবার কতদিন পরে আসবি তার ঠিক আছে। এবারে বিয়ে করবি না কেন শুনি? আমরা তোর কথা শুনব না। তোর বাবা বলছিল, কোথায় যেন একটা ভালো মেয়ে দেখে রেখেছে।
মালেক বলল, তোমরা যখন চাচ্ছ তখন আর না করব না। তবে যেখানেই মেয়ে দেখে রাখ না কেন, মেয়েকে ও তার মা-বাবাকে জানিয়ে দিও, বৌ নিয়ে আমি আমেরিকা চলে যাব।
জহুরা খানম বললেন, তাতো বটেই তুই আমেরিকায় থাকবি, আর তোর বৌ এখানে থাকবে, তা কি করে হয়? তোর বৌকে তুই নিয়ে যাবি তাতে কারো অমত থাকবে কেন?
মালেক বলল, তোমাদের মত থাকলে তো চলবে না। মেয়ের মা-বাবা যদি তাদের মেয়েকে অতদূর পাঠাতে না চায়? সে মেয়েও যদি যেতে রাজি না হয়, তখন কি হবে? তার চেয়ে আগে ভাগে জানিয়ে দেয়া ভালো।
জহুরা খানম বললেন, সে ব্যাপারে তোকে ভাবতে হবে না। আমরা মেয়ের মা বাবাকে আগেই সে কথা বলে রেখেছি।
মালেক বলল, তা হলে আমার কোনো আপত্তি নেই।
জহুরা খানম একটু চিন্তা করে তার বড় বোনের মেয়ে ফাহমিদাকে বৌ করবে বলে যে ঠিক করে রেখেছেন, তা ছেলেকে জানালেন না। কারণ সে যদি অমত করে বসে। তারচেয়ে নিজে আগে দেখে আসুক। ফাহমিদাকে দেখলে মালেক নিশ্চয় পছন্দ করবে। তারপর যা বলার বলা যাবে। বললেন, হ্যাঁরে, কয়েকদিন আলদিবাজারে তোর বড় খালার বাড়ি থেকে তুই বেড়িয়ে আয় না। কিছু দিন আগে আমি ও তোর বাবা গিয়েছিলাম। আমাদের মুখে তুই দেশে আসবি শুনে তোর খালা-খালু বলল, মালেক এলে তাকে আমাদের এখানে বেড়াতে আসতে বলল। কতদিন ছেলেটাকে দেখিনি।
মালেক বলল, যাব না মানে, নিশ্চয় যাব। তুমি না বললেও যেতাম। কতদিন পর দেশে এলাম। সব আত্মীয়দের বাড়ি গিয়ে সবাইয়ের সঙ্গে দেখা করে আসব।
জহুরা খানম বললেন, বেশ তো যাবি।
পরের দিন মালেক গাড়ি নিয়ে আলদিবাজারে ফাহমিদাদের বাড়িতে এল। খালা খালুকে কদমবুসি করে জিজ্ঞেস করল, আপনারা ভালো আছেন?
ওনারা দোয়া করার পর শাকেরা খানম বললেন, আমরা ভালো আছি বাবা। এতদিন পর দেশের কথা মনে পড়ল বুঝি?
সেখানে ফাহমিদা ছিল। সেও কয়েকদিন আগে মায়ের মুখে শুনেছে; মালেক সাত বছর পর দেশে ফিরবে। যখন খালা-খালুর মুখে তাকে বৌ করার কথা বলতে শুনেছিল তখন শামীর কথা ভেবে মালেকের উপর বেশ রাগ হয়েছিল। ভেবেছিল, যে ছেলে এত বছর মা-বাবাকে ছেড়ে বিদেশে থাকে, সে ভালো হতে পারে না। এখন মালেকের সুন্দর ও সুঠাম চেহারা দেখে রাগের পরিবর্তে মনে মনে বেশ পুলকিত হল। ভাবল, যে মেয়ে একে স্বামী হিসেবে পাবে, সে ধন্য হয়ে যাবে। ফাহমিদা এতক্ষণ মালেকের দিকে তাকিয়ে এইসব ভাবছিল।
মালেক তার দিকে তাকাতে চোখে চোখ পড়ে গেল। মালেক তাকে দেখে মনে মনে চমক খেল। ভাবল এত সুন্দরী মেয়ে তা হলে বাংলাদেশে আছে? সাত বছর আগের কিশোরী ফাহমিদা এখন পূর্ণ যুবতী। তার দিক থেকে মালেক চোখ ফেরাতে পারল না।
ফাহমিদা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।
শাকেরা খানম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মালেককে বললেন, তুমি ওকে চিনতে পারছ না? ওতো ফাহমিদা। তারপর ফাহমিদাকে বললেন, কিরে তুই চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন? তুইও চিনতে পারিসনি বুঝি? মালেক তোর ছোট খালার ছেলে। কদমবুসি কর।
ফাহমিদা আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে কদমবুসি করল।
মালেক থাক থাক বলে বলল, তোমাকে অনেক ছোট দেখেছিলাম। তাই প্রথমে চিনতে পারিনি, এখন পারছি। তা পড়াশোনা করছ তো?
ফাহমিদা কিছু বলার আগে শাকেরা খানম বললেন, দুবছর আগে আই. এ. পাস করার পর আমরা আর পড়াইনি। আজকাল সমাজের আজে-বাজে ছেলেদের কথা চিন্তা করে পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। তারপর মেয়েকে বললেন, যা তোর মালেক ভাইকে চা নাস্তা এনে খাওয়া।
ফাহমিদা চলে যাওয়ার পর শাকেরা খানম স্বামীকে বললেন, তুমি না কোথায় যাবে বলেছিলে? ফেরার সময় কিছু মাংস নিয়ে এস। মাছ আছে। মালেক কি শুধু মাছ দিয়ে ভাত খেতে পারবে?
আবসার উদ্দিন স্ত্রীর ইঙ্গিত বুঝতে পারলেন। বললেন, হ্যাঁ তাই তো। আমি সে কথা ভুলেই গেছি। কথা শেষ করে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।
শাকেরা বেগম মালেককে বললেন, তুমি বস, ফাহমিদা নাস্তা নিয়ে আসছে। আমি যাই, তোমার খালুকে আরো কয়েকটি জিনিস আনার কথা বলে পরে আসব।
খালা-খালু চলে যাওয়ার পর মালেক ফাহমিদার কথা ভেবে চিন্তা করতে লাগল, বাবা কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে কি জানি। আমার তো মনে হচ্ছে ফাহমিদার চেয়ে সুন্দরী এদেশে নেই। ফাহমিদার কথা মাকে বলতে হবে।