শামী যেন এতক্ষণ বাস্তবে ছিল না। জোবেদার কথা শুনে খাটের একপাশে বসে বলল, এসব আবার আনতে গেলে কেন? আমাকে শুধু চা দাও।
চা নাস্তা খেয়ে তিন জনে গল্প করতে লাগল। এক সময় জোবেদা বলল, আপনারা গল্প করুন, আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমোলাম বলে খাটের একপাশে শুয়ে পড়ল।
শামী যখন বুঝতে পারল, জোবেদা ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সে ফাহমিদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে বলল, কিছু মনে করছ না তো?
ফাহমিদা বলল, এতে মনে করার কি আছে?
শামী বলল, বিয়ের আগে এটা অন্যায় জেনেও করে ফেললাম। আমার অনেক দিনের আশা, তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাব। তাই সুযোগ পেয়ে সেই আশা পূরণ করলাম। স্মৃতির পাতায় আজকের এই রাতের কথা স্বণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ফাহমিদা বলল, আমার জীবনে তুমি একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার আলোতে আমার হৃদয় দিবালোকের মত আলোকিত। তোমাকে যদি না পাই, তা হলে আমার জীবনে নেমে আসবে গভীর অন্ধকার। আমি সেই অন্ধকারের অতল সাগরে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাব।
ফাহমিদার কথা শুনে শামী আনন্দে আত্মহারা হয়ে বিবেক হারিয়ে ফেলল। ধড়মড় করে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে তার দুগালে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিয়ে বলল, সত্যি বলছ ফাহমিদা? তোমার কথা শুনে আমি যে আনন্দ ধরে রাখতে পারছি না। আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
শামীর আলিঙ্গনে ও আদরে ফাহমিদা ভীত কপোতির ন্যায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, হ্যাঁ শামী সত্যি বলছি। তোমাকে না পেলে আমি মরেই যাব।
আনন্দে শামীর চোখে পানি এসে গেল। বলল, তোমাকে না পেলে আমিও বাঁচব না। তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, ছিছি, কতবড় গোনাহর কাজ করে ফেললাম। এই জন্যে আল্লাহ বেগানা নারী-পুরুষকে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ গো, তুমি আমাদেরকে মাফ করে দাও। আমরা ওয়াদা করছি, বিয়ের আগে এইরূপ কাজ আর করব না। তুমি না মাফ করলে আমাদের নাজাতের উপায় থাকবে না।
এদিকে কখন যে রজনী শেষ হয়ে সুবেহ সাদেক হয়ে গেছে তারা টের পেল না। মোয়াজ্জেনের আযানের সুমধুর সুর শুনে তাদের খেয়াল হল, ভোর হয়ে গেছে।
আযানের শব্দে জোবেদারও ঘুম ছুটে গেল। উঠে বসে তাদের দুজনকে বসে থাকতে দেখে ফাহমিদাকে উদ্দেশ্য করে বলল, কিরে, তুই আর শামী ভাই বুঝি গল্প করে রাত কাটিয়ে দিলি?
ফাহমিদা বলল, তা বুঝতেই যখন পেরেছিস তখন আর জিজ্ঞেস করছিস কেন?
শামী জোবেদার অলক্ষ্যে চোখ মুছে বলল, আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি নামায পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছি। নামায পড়ে বাড়ি চলে যাব।
জোবেদা বলল, সে কি? নাস্তা খেয়ে যাবেন না?
শামী বলল, আজ আর নয়। আর একদিন খাব। তারপর তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
শামী চলে যাওয়ার পর ফাহমিদাকে লম্বা হয়ে শুতে দেখে জোবেদার ক্লাস টেনে পড়ার সময় তারা নামায পড়েনি জেনে শামী ভাই সেদিন নামায না পড়ার কুফল ও পড়ার সুফল সম্বন্ধে যে সব কথা বলেছিল সেসব মনে পড়ল। বলল, কিরে গুলি যে, নামায পড়বি না? সেদিন শামী ভাই অত করে বলার পরও নামায ধরিসনি? আমি কিন্তু সেই দিন থেকে নামায ধরেছি। একদিন শামী ভাই আমাদের বাড়িতে এসে আমি নামায ধরেছি শুনে অনেক হাদিসের কথা বলেছিলেন। তারপর পুকুর ঘাটে অজু করতে যাওয়ার সময় বলল, তুই নামায ধর। জানিস না বুঝি, হাদিসে আছে, আমাদের রাসুল (সঃ) বলিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে এবং আমাদের মধ্যে নামাযই পার্থক্যের বিষয়। যে ইহা ত্যাগ করে, সে কাফির।
জোবেদা আবার বলল, শামী ভাই কত পরহেজগার ছেলে। তাকে তুই ভালবাসিস অথচ নামায পড়িস না, এ কেমন কথা? তা ছাড়া এই হাদিস জানার পর শুধু তুই কেন, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর নামায পড়া উচিত। চল, আমার সঙ্গে অজু করে। আসবি। আজ ফযর থেকে শুরু করবি।
ফাহমিদা বলল, আমার এখন….চলছে, পাক হবার পর পড়ব।
জোবেদা আর কিছু না বলে অজু করার জন্য বেরিয়ে গেল।
একটু বেলা হতে ফাহমিদা নাস্তা খেয়ে বাড়ি চলে গেল।
এরপর থেকে শামী মন দিয়ে পড়াশোনা করে খুব ভালভাবে বি. এ. পরীক্ষা দিল। এই এক বছরের মধ্যে ফাহমিদার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি। মাঝে মাঝে তার কথা মনে পড়লে সেই রাতের ফাহামিদার কথা স্মরণ করে মনকে প্রবোধ দিয়ে ভালো রেজাল্ট করার জন্য চেষ্টা করেছে। পরীক্ষার পর তার মন আর বাধা মানল না। তাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। কি করে দেখা করবে যুক্তি করার জন্য রায়হানের কাছে গেল।
রায়হান এখন কামেলে পড়ছে। শামীকে দেখে সালাম বিনিময় করে বলল, কিরে দোস্ত, কেমন আছিস? পরীক্ষা কেমন দিলি? অনেক দিন তো এদিকে পা মাড়াসনি।
শামী বলল, আল্লাহর রহমতে পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু ফাহমিদার সঙ্গে প্রায় একবছর যোগাযোগ নেই। এতদিন তবু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এবার তার সঙ্গে দেখা না করে থাকতে পারছি না। কি করা যায় বলতে পারিস?
রায়হান এই এক বছরের মধ্যে ফাহমিদার অনেক কিছু জেনেছে। সেসব বললে শামী মনে ভীষণ কষ্ট পাবে ভেবে চেপে গেল। বলল, তুই যে কোনো উপায়ে তার সঙ্গে দেখা কর। এছাড়া আমি তো অন্য কোনো পথ দেখছি না।
শামী তাই করতে হবে বলে সালাম বিনিময় করে ফিরে এসে চিন্তা করতে লাগল, কিভাবে ফাহমিদার সঙ্গে দেখা করা যায়।
৫-৬. ফাহমিদার খালাত ভাই মালেক
০৫.