শামী বলল, তুই অবশ্য প্রকৃত বন্ধুর মতো কথা বলেছিস। তোর কথাগুলো আমারও যে মনে হয়নি তা নয়। কিন্তু দোস্ত, মৃত্যু ছাড়া আমার যে ফেরার আর কোনো পথ নেই। ফাহমিদাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, ফাহমিদাকে পাওয়ার আশা দুরাশা মাত্র। তবু মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না। তবে একথা ঠিক, তার উপযুক্ত হয়ে তাকে বিয়ে করব।
রায়হান বুঝতে পারল, ওকে বুঝিয়ে কোনো কাজ হবে না। বলল, তোর জন্য আমার খুব দুঃখ হয়। দোয়া করি, আল্লাহ তোর মনস্কামনা পূরণ করুক।
সেদিন শামী বাড়ি ফিরে এসে পূর্ণ উদ্দমে পড়াশোনা শুরু করল।
এতদিন ধরে ফাহমিদা মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যতটা না শামীকে মন থেকে সরাতে পেরেছিল, আজ তার সাথে দেখা হয়ে এবং তার চিঠি পড়ে তারচেয়ে বেশি করে মনে পড়তে লাগল। চিন্তা করল, ভাগ্যে যা আছে, তাকে যখন প্রতিরোধ করতে পারব না তখন আর শামীর সাথে যোগাযোগ রাখব না কেন?
এরপর থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার তাদের অভিসার চলতে লাগল। এভাবে এইচ. এস, সি, ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত তাদের কোনো বাধা এল না। কিন্তু পরীক্ষার পর আবার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় আড়াই মাস পর রেজাল্ট বেরোতে শামী ডিগ্রীতে এ্যাডমিশন নিল। ফাহমিদার খোঁজে একদিন জোবেদার কাছে এসে জানতে পারল, সে আর পড়বে না। কথাটা জেনে তার মন খারাপ হয়ে গেল। ফিরে এসে চিন্তা করতে লাগল, কি করে তার সঙ্গে দেখা করা যায়? এভাবে কিছু দিন কেটে যাওয়ার পর একদিন রাহেলাকে তাদের বাড়িতে আসতে দেখে শামী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার হঠাৎ কি মনে করে?
রাহেলা হাসিমুখে বলল, কেন আসতে মানা আছে নাকি?
মানা থাকবে কেন? তুমি কোনো দিন আসনি তো, তাই আর কি। তা ছাড়া তোমার বিয়ে হল, একটা খবরও পেলাম না।
বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে। আমার তো কোন ভাই নেই যে, তাকে দিয়ে খবর দেব। আমি তো আর নিজে আসতে পারি না? তা আপনাদের কি খবর বলুন।
আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই ভালো আছি। তুমি কেমন আছ বল। স্বামীর বাড়িতে ভালো আছ আশা করি?
তা আল্লাহপাকের অনুগ্রহে এক রকম আছি। আমি কিন্তু আপনাদের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করিনি; আপনার ও ফাহমিদার কথা করেছি।
এইচ. এস. সি. পরীক্ষার পর থেকে তার সাথে যোগাযোগ নেই। কি করে তার খবর বলব বল?
আমি যোগাযোগ করে দিতে এসেছি।
তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই। আমার চাচার ওলিমা আগামী শুক্রবার। আপনাকে দাওয়াত দিতে এসেছি। ফাহমিদাকেও দিয়েছি। সেদিন আমাদের বাড়িতে যোগাযোগ হবে।
শামী মনে মনে আনন্দিত হয়ে বলল, আচ্ছা? তা হলে তো তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
শুধু ধন্যবাদ দেবেন? আর কিছু দেবেন না? এতবড় একটা সুযোগ করে দিলাম।
আর কি চাও বল, দিতে কার্পণ্য করব না।
রাহেলা হেসে উঠে বলল, না শামী ভাই, আর কিছু দিতে হবে না। আল্লাহপাক আমাকে যা দিয়েছেন, তাতেই আমি তার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারিনি।
শামী হাসিমুখে বলল, শুনে খুশী হলাম। তারপর বোনকে চা নিয়ে আসতে দেখে বলল, চা খাও।
রাহেলার চা খেয়ে বিদায় নেয়ার সময় বলল, আপনি সকাল সকাল আসবেন।
শামী বলল, সে কথা তোমাকে আর বলে দিতে হবে না।
রাহেলার চাচার ওলিমা এখনও তিনদিন বাকি। শামী সেই দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল। দিন যেন কাটতে চায় না। এক একটা দিন যেন এক একটা বছর বলে মনে হতে লাগল। অবশেষে সেই প্রতীক্ষিত দিনটা এল। শামী সকালে নাস্তা খেয়ে রাহেলাদের বাড়িতে গেল।
কিছুক্ষণ পর রাহেলা একটা লুংগী পাঞ্জাবী পরা হ্যাঁণ্ডসাম যুবককে সঙ্গে করে। শামীর কাছে এসে সালাম দিল। সেই সাথে যুবকটাও সালাম দিল।
শামী সালামের উত্তর দিয়ে বলল, ইনাকে তো চিনতে পারছি না।
রাহেলা হাসিমুখে বলল, পরিচয় করিয়ে দিতে তো নিয়ে এলাম। ইনিই আমার উনি। তারপর যুবকটাকে উদ্দেশ্য করে শামীকে দেখিয়ে বলল, ইনি শামী ভাই। উত্তর পাড়ায় বাড়ি। ইনার কথাই তোমাকে একদিন বলেছিলাম।
যুবকটা এগিয়ে এসে শামীর সঙ্গে হাত মোসাফাহা করে বলল, আমি রহিম।
শামী হেসে উঠে বলল, আপনাদের দুজনের নামের কিন্তু দারুণ মিল। আল্লাহ আপনাদের সুখী করুন। আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুব খুশী হলাম। তারপর রাহেলাকে জিজ্ঞেস করল, জোবেদাকে দাওয়াত দাওনি?
রাহেলা বলল, তাকে আবার দিইনি। তিন চার দিন আগে তার ডায়রিয়া হয়েছিল। তাই হয়তো আসেনি।
শামী আবার জিজ্ঞেস করল, ফাহমিদা আসেনি?
রাহেলা মৃদু হেসে বলল, না আসেনি। এলে আমি তার সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেব। এখন যাই কাজ আছে। তারপর যুবকটাকে বলল, তুমিও চল, আব্বা তোমাকে বাজারে পাঠাবে বলছিল। পরে এক সময় শামী ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করো। কথা শেষ করে তাকে সাথে করে চলে গেল।
ফাহমিদা যখন বেলা একটার সময় এল তখন শামী নামায পড়তে মসজিদে গেছে।
নামায পড়ে এসে খাওয়া-দাওয়ার পর শামী বৈঠকখানায় বসে ফাহমিদার কথা চিন্তা করছিল। একটু পরে রাহেলা তাকে ডেকে নিয়ে একটা রুমের দরজার কাছে এসে বলল, ভিতরে যান, ফাহমিদা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। মনের সুখে দুজনে গল্প করুন। এখানে কেউ আসবে না। কথা শেষ করে সে চলে গেল।
শামী রুমে ঢুকে দেখল, ফাহমিদা তক্তপোষের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। দরজা ভিড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছ?