বিরহজ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক কিছু লিখে চিঠি লম্বা করে ফেললাম। এবার দুটো পথের কথা বলছি। তার যে কোনো একটা পথ তোমাকে বেছে নিতে হবে। প্রথমটা হল, তুমি আমাকে ভালবাস না ঘৃণা কর, তা সরাসরি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই। আর দ্বিতীয়টা হল, যদি তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ভাল না বেসে শুধু অভিনয় করে থাক, তা হলে সে কথা বলার সময় আমাকে এমন ভাবে আঘাত দিয়ে অপমান করবে, যার ফলে আমি সেই অপমানের আঘাত সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষণাৎ যেন মৃত্যু বরণ করি অথবা তোমার প্রতি আমার প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মায়। বেঁচে থাকলে সেই ঘৃণাকে অবলম্বন করেই বেঁচে থাকব, এবং তোমকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করব। এ দুটোর যে কোনো একটা পথ তোমাকে বেছে নিতেই হবে। চিঠি লিখতে বসে তোমাকে দেখার জন্য আমার মন উন্মাদ হয়ে উঠছে। আর কিছু দেয়ার জন্য লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে। তাই, এখন কিছু দেয়া ঠিক হবে না জেনেও তা বলে ফেলছি, তোমার ফুটন্ত গোলাপী পাপড়ির মতো রঙ্গিন ওষ্ঠদ্বয়ে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিতে আমার মন চাইছে। জানি না, সে বাসনা আমার কোনোদিন পূরণ হবে কিনা। তবু সেই মুহূর্তের জন্য চিরকাল অপেক্ষায় থাকব। আল্লাহপাকের দরবারে তোমার সর্বাঙ্গিন কুশল কামনা করছি। তুমিও আমার জন্য তাই করো। বিদায়ান্তে তোমার প্রতি রইল আমার অকৃত্রিম প্রেম ও ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা। তোমার পত্রের ও সাক্ষাতের আশায় থেকে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
তোমার হতভাগ্য প্রেমিক
আঃ শামী
শামী চিঠিটা শেষ করে ভাবল, কাল যেমন করে হোক এটাকে সে নিজে ফাহমিদাকে দিবে। হঠাৎ মনে পড়ল, কাল তো কলেজ বন্ধ। পরশুদিন কলেজ কামাই করে রাস্তায় ফাহমিদার সঙ্গে দেখা করে দেবার সিদ্ধান্ত নিল।
একদিন পর একটু সকাল সকাল নাস্তা খেয়ে শামী রায়হানের কাছ গেল।
রায়হান তখন পড়ছিল। শামীকে দেখে সালাম বিনিময় করে বলল, আয় বস।
শামী তার পাশে বসে চিঠিটা হাতে দিয়ে বলল, পড়ে দেখ।
রায়হান পড়ে বলল, খুব ভালো হয়েছে। এটা কিভাবে দিবি ভেবেছিস?
শামী কিভাবে দিবে বলল।
রায়হান বলল, ঠিক আছে, তাই দিস।
শামী তার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে ভাঁজ করে বুক পকেটে রাখল। তারপর বিদায় নিয়ে ফাহমিদার কলেজের পথে রওয়ানা দিল।
.
০৪.
ফাহমিদা যখন কিশোরী তখন শামীকে তার ভালো লাগত। তারপর তরুণী বয়সে সেই ভাললাগা ভালবাসায় পরিণত হয়। তাদের ফ্যামিলী বেশ মর্ডাণ। তাই ভাবিদের ইয়ার্কি মশকরায় ও নানারকম গল্প উপন্যাস পড়ে যৌবনে পদার্পণ করার আগেই বেশ পেকে যায়। শামীর সঙ্গে ফাহমিদার ভালবাসার ব্যাপারটা জেনে ভাবিরা দুজনকে নিয়ে প্রায় ঠাট্টা ইয়ার্কি করত। তাতে করে সে যেমন আনন্দ পেত তেমনি তার সাহসও বেড়ে যায়। তারপর যখন কিছুদিন আগে শামীর চিঠি ফাহমিদার আব্বার হাতে পড়ল এবং তাকে রাগারাগি করে শাসন করেলন তখন ভাবিরাও তাকে নানারকম ভয় দেখিয়ে শামীকে মন থেকে একদম মুছে ফেলতে বলল। তারপর খালা-খালু এসে তাদের ছেলের সঙ্গে ফাহমিদার বিয়ের কথাবার্তা পাকা করে গেলেন তখন ভাবিরা ননদকে শামীকে ভুলে যাওয়ার জন্য বোঝাতে লাগল। তার সাথে যোগাযোগ রাখতেও নিষেধ করল। তার খালাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা এবং শামীদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা বলে বোঝাত।
খালারা যে খুব বড়লোক, পাকা বাড়ি ও গাড়ি আছে এবং খালাত ভাই মালেক পাঁচ-ছ বছর আমেরিকায় চাকরি করছে ফাহমিদা জানে। মালেককে সে অনেক আগে দেখেছে। সুন্দর ও গোলগাল চেহারা। তার সাথে বিয়ে হবে শুনে ফাহমিদা প্রথমে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করে। পরক্ষণে শামীর কথা মনে পড়তে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর তার বড় ভাই ও মেজ ভাই বিদেশ থেকে এসে যখন তাদের স্ত্রীদের নিয়ে চলে গেল তখন ফাহমিদার এস. এস. সি. পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার পর ফাহমিদা শামী ও মালেককে নিয়ে দোটানার মধ্যে পড়ে গেল।
ছোট শালীর ছেলে মালেকের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা হয়ে যাওয়ার পর আবসার উদ্দিন একদিন মেয়েকে ডেকে বললেন, মালেকের সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সে কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবে। শামীর সঙ্গে নিশ্চয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিস? আর যদি না দিয়ে থাকিস এবং আমি তা জানতে পারি, তা হলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
বাবার কথায় ভয় পেয়ে ফাহমিদা টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্টের দিন শামীকে তার সাথে কিছুদিন যোগযোগ করতে নিষেধ করেছিল। তারপর তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য এতদিন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। প্রথম প্রেমের জ্বালা নাকি খুব কঠিন। তাই ফাহমিদা একবার ভাবে যা ভাগ্যে আছে হবে, শামীকে ভুলা সম্ভব নয়। তেমন যদি দেখি, তা হলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে শামীকে বিয়ে করব। আবার যখন আব্বার হুঁশিয়ার করার কথা মনে পড়ে তখন খুব ভয় পেয়ে যায়। ভাবে, শামীর আব্বার অবস্থা তেমন ভালো নয়। আব্বা যদি সত্যি সত্যি শামীর বিরুদ্ধে এ্যাকসান নেয়, তা হলে শামীর আব্বা কি শামীকে রক্ষা করতে পারবে? তারচেয়ে তাকে ভুলে যাওয়াই ভালো। এইসব ভেবে সে এতদিন শামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নি।
আজ কলেজে যাওয়ার পথে দূর থেকে শামীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফাহমিদার মনে ভয়মিশ্রিত আনন্দ তোলপাড় শুরু হল। হাঁটার গতি কমে গেল।