তাকে চুপ করে থাকতে দেখে জমিলা বলল, আমি তা হলে যাই?
শামী এতক্ষণ বাস্তবে ছিল না। জমিলার কথাশুনে হুঁশ হল। বলল, তুমি যেন কি বললে?
জমিলা বলল, আমি এখন যাই?
শামী বলল, সেকি? একটু চা খেয়ে যাও। তারপর তাকে সঙ্গে নিয়ে ভিতরে যাওয়ার সময় রায়হানকে বলল, তোরা একটু বস, আমি আসছি।
জমিলাকে মায়ের কাছে নিয়ে এসে বলল, আম্মা, এ দক্ষিণ পাড়ার আবসার উদ্দিন চাচার ছোট ভাইয়ের মেয়ে জমিলা। একে চা নাস্তা দাও তো।
মাসুমা বিবি বললেন, তুই ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা। আমি চা নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শামী তাকে নিজের রুমে এনে চেয়ারে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার ফাহমিদা আপা কেমন আছে?
জমিলা বলল, আপা ভালো আছে।–
তোমার আপা আমাকে বলার জন্য কিছু বলে দেয়নি?
কই, না তো, শুধু বলল, বইটা শামী ভাইকে দিয়ে আয়।
এমন সময় শামীর ছোট বোন চা নাস্তা নিয়ে এলে শামী বলল, নাও নাস্তা খেয়ে নাও।
জমিলা বলল, আপনি খাবেন না?
শামী বলল, তুমি আসার আগে আমি বৈঠকখানায় বন্ধুদের সঙ্গে খেয়েছি।
জমিলার নাস্তা খাওয়া হয়ে যেতে শামী তাকে বিদায় দিয়ে বৈঠকখানায় এসে বসল।
শামী জমিলাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যাওয়ার পর রায়হানের সাথী বলল, রায়হান ভাই, তোমার ফিরতে মনে হয় দেরি হবে। আমার একটু কাজ আছে আমি যাই।
রায়হান বলল, ঠিক আছে তাই যাও। আমি শামীর সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে ফিরব।
সাথি চলে যাওয়ার পর রায়হান বইটার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করল, শামী মনে করেছিল, বইটার ভিতর ফাহমিদা নিশ্চয় চিঠি পাঠিয়েছে। তাই বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টে দেখল। রায়হানের মাথায় তখন একটা বুদ্ধি খেলে গেল। শামী ফিরে এসে বসার পর বলল, কিরে জমিলার কাছে ফাহমিদার কোনো খবর পেলি?
শামী বলল, সে খবর না দিলে পাব কি করে? জমিলাকে জিজ্ঞেস করতে বলল, আপা ভালো আছে।
রায়হান বলল, ফাহমিদার নিরবতার কারণ কিছু বুঝতে পারলি?
শামী বলল, না। আমার মাথায় তো কিছু আসছে না।
রায়হান বলল, কি আর করার আছে, কিছুদিন ধৈর্য ধরে থাক। জমিলার কাছ থেকে তোর খবর পেয়ে যোগাযোগ করে কিনা দেখ। ফাহমিদাকে বলার জন্য জমিলাকে কিছু বলে দিয়েছিস নাকি?
শামী বলল, না বলিনি।
রায়হান বলল, পরে আবার আসব, এখন চলি। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে গেল।
বাড়িতে এসে রায়হান বুদ্ধিটা কাজে লাগাবার জন্য ফাহমিদার হয়ে শামীকে একটা চিঠি লিখতে বসল। ফাহমিদার দেয়া সব চিঠি শামী রায়হানকে পড়তে দেয়। তার হাতের লেখা সে চিনে। ফাহমিদার হাতের লেখা নকল করে লিখল,
শামী ভাই,
পত্রে আমার সালাম নেবে। পরে জানাই যে, এতদিন তোমার সাথে যোগাযোগ করিনি বলে নিশ্চয় মনে খুব কষ্ট পেয়েছ। কিন্তু কেন যে যোগাযোগ করিনি, তা শুনলে সে কষ্ট আর থাকবে না। আমার প্রতি আব্বা-আম্মার অত্যাচার বেড়েই চলেছে। তারা সব সময় আমার দিকে কড়া নজর রেখেছে। কোথাও যেতে দেয় না। শুধু কলেজে যেতে দেয়। তবে একটা কাজের মেয়ের সঙ্গে যাতায়াত করতে হয়। আমার মনের কথা নিচের কবিতাটি পড়লে বুঝতে পারবে।
হৃদয়ের কান্না শুনবে না কেহ,
শুনবে সেদিন যেদিন থাকব না ভবে।
যদি ভাগ্যের পরিহাসে না হয় মিলন,
তা হলে যতই ঘৃণা কর না আমাকে,
তবু তুমি আমার হৃদয়ের মাঝে
বসরার গোলাপ হয়ে ফুটে থাকবে।
আর বেশি কিছু লিখে তোমার কাটা ঘায়ে নুন ছিটাব না। এখানে রাখছি।
ইতি
ফাহমিদা
দুদিন পর রায়হান চিঠিটা নিয়ে শামীর সঙ্গে দেখা করে বলল, তোর জন্য একটা সুখবর আছে।
রায়হানের কথা শুনে শামীর হার্টবিট বেড়ে গেল। বলল, নিশ্চয় ফাহমিদার খবর? কি খবর তাড়াতাড়ি বল।
রায়হান বলল, ধীরে দোস্ত ধীরে। আগে বল কি খাওয়াবি?
তুই যা খেতে চাইবি তাই খাওয়াব।
রাজকন্যার নেক নজর তোর উপর পড়েছে। তোকে তলব করেছে।
ভূমিকা না করে আসল কথা বল।
রায়হান বুক পকেট থেকে চিঠিটা বের করে তার হাতে দিয়ে বলল, এটা তোর নোট বইয়ের মধ্যে পেয়েছি। পরশু দিন জমিলা বইটা তোর হাতে দেয়ার পর তুই যখন পাতা উল্টে দেখছিলি তখন তুই এটা দেখতে না পেলেও আমি পেয়েছিলাম। তারপর জমিলাকে নিয়ে তুই বাড়ির ভিতর চলে যেতে আমার সাথীও চলে গেল। তখন আমি বই থেকে এটা বের করে পড়তে যাব এমন সময় তোকে আসতে দেখে পকেটে রেখে দিই। ভাবলাম, আমি পড়বার পর তোকে দেব। গতকাল একটু কাজ ছিল, নচেৎ গতকালই তোকে দিতাম।
শামীর তখন রায়হানের কথা শোনার মত অবস্থা নেই। আর চিঠিটাও সত্যি ফাহমিদার লেখা কিনা তা লক্ষ্য করার মতো মন মানসিকতা নেই। গোগ্রাসের মতো চিঠিটা পড়ে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করল। তারপর বলল, ফাহমিদা আমাকে কত ভালবাসে এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিস?
রায়হান মনে মনে ভাবল, হায়রে অন্ধ প্রেমিক, তবু যদি চিঠিটা ফাহমিদার হত। মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল, তা বুঝেছি। কিন্তু সে যে ভাগ্যের পরিহাসের কথা লিখেছে, সে ব্যাপারে কিছু বুঝতে পারলি?
ভাগ্যের হাতে সবাই বন্দী। সে কথা ভেবে কি করব? ভাগ্যে যা আছে হবে।
তোর কথা অবশ্য ঠিক। তবু তুই তাকে একটা চিঠি দিয়ে বল, ভাগ্যের পরিহাসের কথা কেন সে লিখল। সে তোকে সরাসরি বলুক, আমি তোমারই আছি এবং চিরকাল থাকব। না হয় বলে দিক, তোমাকে ভালবাসলেও গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এবার বিদায় দাও।