টিভির সামনে বসে জোয়ার্দার রাতের খাবার খাচ্ছেন। জামাল তার পাশে বসেছে। পুফি তার পায়ের কাছে। টিভিতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। আগুন জ্বলিছে। পুরোহিত মন্ত্র পড়ে পড়ে আগুনে কি যেন দিচ্ছে। আগুন ধাপ করে বাড়ছে। আগুনের পাশে বসা স্বামী স্ত্রী দুজনই ভয় পেয়ে খানিকটা পিছাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখতে ভাল লাগছে।
মোবাইল টেলিফোন বাজছে। সিনেমাতেই মনে হয় বাজছে। একসময় বুঝা গেল সিনেমার না জোয়ার্দারের টেলিফোন বাজছে। তাকে উঠে টেলিফোন আনতে হলো না। পুফি লাভ দিয়ে উঠে দাতে কামড়ে ধরে টেলিফোন নিয়ে এলো। এইজাতীয় দৃশ্য বিদেশী সিনেমায় দেখা যায়। ঘরের বেড়াল খাওয়ানো এবং ঘুমানো ছাড়া কিছু করে না।
টেলিফোন করেছে অনিকা।
হ্যালো বাবা! বলতো আমরা কোথায়?
কক্সবাজারে।
হয় নি। দশে গোল্লা পেয়েছ। এখন আমরা সেন্টমার্টিন আইল্যান্ডে। মামা একটা জাহাজ ভাড়া করে আমাদের সেন্টমার্টিন নিয়ে এসেছে।
মজা হচ্ছে মা?
খুব মজা হচ্ছে। এখন আমরা বার বি কিউ করছি। নাও মার সঙ্গে কথা বলো।
সুলতানা বললেন, এই একটা ইন্টারেস্টিং খবর শোন, রঞ্জুর সেন্টমাটিনে একটা হোটেল আছে। নাম দিয়েছে Solid Rock সমুদ্রের পাশের বাড়ি নাম দিয়েছে Solid Rock, অদ্ভুত না?
হুঁ।
ওর কি চমৎকার চমৎকার আইডিয়া। সে যে সেন্টমাটিনে হোটেল বানিয়ে বসে আছে তাই জানতাম না। আমি এত অবাক হয়েছি। তুমি অবাক হও নি?
হুঁ।
এখন টেলিফোন রাখছি, পরে তোমার সঙ্গে কথা হবে মাংস পুড়ে যাচ্ছে। যাই।
আচ্ছা আরেকটু ধর অনিকা কথা বলবে।
অনিকা। কি খবর মা?
তোমাকে ছাড়া এসেছি তো বাবা এই জন্যে আমার বেশি ভাল লাগছে। न्म।
কয়েকদিন পরতো চলেই আসবে।
বাবা শোনা। আমি ডাবের পানি দিয়ে গোসল করেছি।
কেন?
মা বলেছে ডাবের পানি দিয়ে গোসল করলে স্ক্রীন ব্ৰাইট হয়। এই জন্যে।
তোমার স্ক্রীনতো এমিতেই ব্ৰাইট।
আরো ব্ৰাইট হবে। আমি তখন চাঁদের মতো হয়ে যাবো। চাঁদের গা থেকে যেমন আলো বের হয় আমার গা থেকেও বের হবে।
ভালোতো।
বাবা। আমি টেলিফোন রাখছি। মা ডাকছে। মাকে সাহায্য করতে হবে।
জোয়ার্দার ঘুমুতে গেছেন। ঘুম যখন আসি আসি করছে তখন তাঁর মোবাইল বাজতে শুরু করেছে। তার মোবাইল ধরার কোনো ইচ্ছা ছিল না, পুফি কামড়ে মোবাইল নিয়ে এসেছে বলে অনিচ্ছায় ধরতে হলো।
হ্যালো! কে বলছেন!
আমার নাম করিম। আমি শায়লা ম্যাড়ামের এসিসটেন্ট। ম্যাডাম জরুরী ভিত্তিতে আপনাকে একটু দেখা করতে বলেছেন।
আমার টেলিফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছেন।
আপনিইতো আমাকে দিয়েছেন। টাকা দিয়ে যখন রশিদ নিলেন তখন টেলিফোন নাম্বারা এড্রেস সব দিলেন।
ও আচ্ছা।
আপনার পক্ষে কি এখন আসা সম্ভব? আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
এখন সম্ভব না। আমি শুয়ে পড়েছি।
আগামীকাল কি আসতে পারবেন? সকাল দশটা থেকে এগারটা এই সময় ম্যাডাম বাসায় থাকেন।
কাল আমার অফিস আছে।
তাহলে রাতে চেম্বারে আসুন।
আচ্ছা।
রাত নটার দিকে এলেই হবে। রাত নটার পর ম্যাডাম আপনার জন্যে ফ্রি রাখবেন।
আচ্ছা।
জোয়ার্দার ঘুমিয়ে পড়লেন। করিম তারপরেও অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করল।
অফিস পাঁচটায় ছুটি হয়
অফিস পাঁচটায় ছুটি হয়। চারটা বাজতেই চেয়ার খালি হতে শুরু করে। যারা চক্ষুলজার কারণে বসে থাকে তারা ঘন ঘন হাই তুলতে থাকে। ফাইলপত্ৰ সব তালাবদ্ধ। টেবিল খালি। খালি টেবিলে সত্যি সত্যি মাছি ওড়ে। মাছি মারার ব্যাপারে কাউকে তেমন উৎসাহী মনে হয় না।
আজ অফিস খালি হওয়া শুরু হয়েছে তিনটা থেকে, কারণ আগামীকাল বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটি। তা ছাড়া আকাশে ঘনকালো মেঘ। ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বাসায় চলে যাওয়া ভালো।
জোয়ার্দার সাহেব গভীর মনোযোগে ফাইলে চোখ বোলাচ্ছেন। আকাশ মেঘে অন্ধকার বলে ধাতি জ্বলিয়েছেন। খালেক ঘরে ঢুকে বলল, স্যার, যাবেন না?
জোয়ার্দার অবাক হয়ে বললেন, কোথায় যাব?
বাসায় যাবেন। আর কোথায় যাবেন?
পাঁচটা তো এখনো বাজে নাই।
খালেক টেবিলের সামনে বসতে বসতে বলল, আকাশের অবস্থা দেখেছেন? বিরাট তুফান হবে। আগে আগে চলে যাওয়া ভালো।
জোয়ার্দার কিছু বললেন না। খালেক বলল, স্যার, একটা রিকোয়েস্ট করব। যদি অনুমতি দেন।
জোয়ার্দার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।
খালেক বলল, আজ আমার সঙ্গে আমার বাসায় চলুন। রাতে খাওয়াদাওয়া করবেন, তারপর আমি নিজে পৌঁছে দিব।
খালেককে অবাক করে দিয়ে জোয়ার্দার বললেন, আচ্ছা।
স্যার, তাহলে দেরি করে লাভ নেই। উঠে পড়ুন।
জোয়ার্দার বললেন, পাঁচটা বাজুক। অফিস ছুটি হোক।
ঠিক আছে, বাজুক পাঁচটা। আমি ক্যান্টিনে আছি। আপনার জন্য চা নাশতা কিছু পাঠাব?
না।
প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জোয়ার্দার লাল রঙের প্রাইভেট কারে উঠলেন। খালেক বলল, পেছনের সিটে আরাম করে বসুন। আমি ড্রাইভারের সঙ্গে বসছি।
জোয়ার্দার বললেন, কার গাড়ি?
খালেক লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, আমার। মেয়ের স্কুল ডিউটি করতে হয়, এজন্য ধারাদেনা করে কিনে ফেলেছি। আমার স্ত্রী অবশ্যি এ গাড়িতে ওঠে না। তার ধারণা, এটা ঘুষের টাকায় কেনা। ইচ্ছা করলে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আর্গুমেন্টে যেতে পারতাম। বলতে পারতাম, স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর ভরণপোষণ। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। কিভাবে করছি সেটা আমার ব্যাপার। তুমি আমার বিচারক না। আর্গুমেন্ট ঠিক আছে না। স্যার?
জোয়ার্দার জবাব দিলেন না। জানালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখতে লাগলেন। ভাল বৃষ্টি নেমেছে। জানালার কঁাচে ধুমধাম শব্দ থেকে মনে হয়, শীলও পড়ছে।