লাইলী বলল, অনার্সের ছাত্রী। এতটা লজ্জা পাওয়ার কথা নয়?
রেহানা বলল, তোমার সংস্পর্শে আসার আগে অবশ্য ঐসব ছিল না। কিন্তু তোমার কাছে এসে তোমার দেওয়া শিক্ষা পেয়ে এখন অনেক কিছু আমার পরিবর্তন হয়েছে।
লাইলী বলল, আলহামদুলিল্লাহ, (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার)। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত করুন।
ইদানিং রেহানা যে খুব কম আসে সেটা আরিফও লক্ষ্য করেছে। আজ যখন সে অফিস থেকে ফিরে গাড়ি থেকে নামছিল তখন রেহানাকে তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ডেকে বলল, একটু সময় হবে? তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।
রেহানা তার মুখের দিকে চেয়ে বলল, বেশ তো বল না কি কথা বলবে?
আরিফ বলল, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি বলা যায়? গাড়িতে উঠ, নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বলব।
রেহানা সামনের সীটে আরিফের পাশে বসল। আরিফ তাকে রমনা পার্কের একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে এল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আরিফ বলল, তুমি আমাকে কি মনে করবে জানি না তবু বলছি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। বিদেশ থেকে ফিরে এসে তোমাকে দেখেই আমার খুব পছন্দ হয়েছে। অবশ্য তোমারও পছন্দ আছে। আমি তোমার মতামতের দাম দেব, এ কথা বলে রাখছি।
রেহানা বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চিন্তা করল। তারপর তার দিকে চেয়ে বলল, আমার কিছু কথা তোমার জানা দরকার। সেগুলো শোনার পর তুমি যা ভালো বুঝবে করবে, তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।
বেশ বল, তুমি কি বলতে চাও?
প্রায় বছর তিনেক আগে ফুফুআম্মা আব্বাকে বলেছিল, আমাকে সেলিম ভাইয়ের জন্য পছন্দ করেছে। আৰ্বও রাজি ছিলেন। আমি আড়াল থেকে তাদের কথা শুনে খুব আনন্দ পাই। কারণ সেলিম ভাইয়ের মত চরিত্রবান সুপুরুষকে কার না ভালো লাগবে? সেই থেকে মনে মনে তাকে ভালবেসে ফেললাম, কিন্তু সেলিম ভাই বোধ হয় সে কথা জানত না। এরপর যখন সেলিম ভাই লাইলী ভাবির দিকে ঝুঁকে পড়ল তখন তার উপর আমার খুব রাগ ও হিংসা হয়। দাদাও ব্যাপারটা জানত। সেও যখন দেখল, লাইলী ভাবির জন্য সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে না তখন সে বেনামী চিঠি দিয়ে বিয়ে ভাঙ্গিয়ে দেয়। তারপরের ঘটনা সেদিন সে তোমাদের বাড়িতে বলে সকলের কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিয়েছে। তবে আমি দাদার ঐসব কার্যকলাপ কিছুই জানতাম না তোমাদের বাড়িতেই প্রথম শুনলাম। যাই হোক, আমি অজ্ঞতা ও ঈর্ষার কারণে লাইলী ভাবিকে ভুল বুঝেছিলাম। অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে আমিও মাফ চেয়ে নিয়েছি। তাকে মানবী বলে আমার মনে হয় না। যতবড় শত্রু এবং যত বড় দুশ্চরিত্র লোক তার সংস্পর্শে আসুক না কেন, সে মিত্র ও চরিত্রবান হতে বাধ্য। হবে। লাইলী ভাবি যেন পরশ পাথর, যেই তাকে ছুঁবে, সেই মানিক হয়ে যাবে। আল্লাহপাক তাকে যেমন অদ্বিতীয়া সুন্দরী করে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সর্বগুণে গুণান্বিতাও করেছেন।
আরিফ বলল, সত্যি ভাবি অদ্বিতীয়া। তার উপর ধর্মের জ্ঞান পেয়ে এবং সেই মত চলে সে সকলের কাছে উচ্চ মর্যাদার আসন পেয়েছে। ইসলাম বড় উদার ধর্ম। সেখানে কোনো কুসংস্কার ও মানুষের মনগড়া কিছুর স্থান নেই। আমি মনপ্রাণ দিয়ে তোমাকে পেতে চাই।
রেহানা ছলছল নয়নে আরিফের হাত ধরে বলল, তুমি আমাকে তোমার মত করে গড়ে নিও। আর দোষ ত্রুটি সংশোধন করার সুযোগ দিও।
আরিফ সুবহান আল্লাহ বলে বলল, আল্লাহ তুমি সর্বত্র বিরাজমান। তুমি আমাদের মনের বাসনা পূরণ কর। তারপর বলল, চল তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিই।
রেহানা বলল, তোমাদের বাড়িতেই চল। আমার গাড়ি তো ওখানে আছে। বাড়িতে ফিরে আরিফ রেহানাকে তার গাড়িতে তুলে বিদায় দিয়ে একেবারে ভাবির ঘরে ঢুকল।
লাইলী জানালা দিয়ে তাদের দুজনের যাওয়া আসা দেখেছে এবং অনেক কিছু বুঝেও নিয়েছে।
আরিফের ডাক শুনে বলল, কি ব্যাপার? ছোট সাহেবকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে যেন দুনিয়া জয় করে এসেছ।
আরে থাম থাম, তুমি যে দেখছি এ্যাসট্রোলজার হয়ে গেছ। তারপর বলল, সত্যি ভাবি আজ যা পেয়েছি, সারা দুনিয়া জয় করলেও তা পাওয়া যেত না।
সে তো বুঝতেই পারছি। বলি ব্যাপারটা খুলেই বল না?
আরিফ চারিদিকে তাকিয়ে নিয়ে গলা খাটো করে বলল, তোমাদেরকে আর মেয়ে দেখতে হবে না। এতদিনেও যখন তোমরা পারলে না তখন আমি নিজেই আজ সেই কাজ করে এসেছি।
লাইলী অবাক হওয়ার ভান করে বলল, সে কি? এদিকে আমি ও তোমার ভাইয়া একটা মেয়ে পছন্দ করেছি। কথাবর্তাও এক রকম পাকাপাকি। তুমি আমাদের। মান ইজ্জত ডুবাবে বুঝি? তা হতে দিচ্ছি না।
আরিফের আনন্দ উজ্জল মুখটা মুহুর্তে মলিন হয়ে গেল। বলল, তা হলে বড় সমস্যা হয়ে দাঁডল দেখছি! একদিকে আমার প্রেম, আর একদিকে তোমাদের ইজ্জত, ধুততেরী বিয়েই করব না।
লাইলী অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলল, তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমার সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব। মেয়েটার পরিচয় তো শুনি?
মেয়েটার পরিচয় জেনে কি হবে? আর তুমি সমস্যার সমাধানই বা করবে কি করে? আমি যদি আমার পছন্দ করা মেয়েকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে না করি?
আরে ভাই হতাশ হচ্ছ কেন? এমনভাবে মীমাংসা করব, সাপও মরবে না, আর লাঠিও ভাঙ্গবে না।
যা খুশি তোমরা করগে যাও, আমি বিয়েই করব না।
সে দেখা যাবে যখন সময় হবে, এখন হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খাবে এস। খাব না, ক্ষিদে নেই বলে আরিফ আবার বাইরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াল।