তুমি আবার চা করতে গেলে কেন? ঠিক আছে দাও, এনেছ যখন খেয়েই যাই।
সামসুদ্দিন মিয়া চলে যাওয়ার পর মোসারেফ হোসেন মেয়েকে বললেন, তোর মাকে ডেকে নিয়ে আয় তো মা।
আসমা মাকে ডেকে নিয়ে এল।
মোসারেফ হোসেন তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, সকালের দিকে আমার বন্ধুর ছেলে রিয়াজুল যে এসেছিল, সে কথা তোমরা জান। ছেলেটা শুধু শিক্ষিত নয় ধার্মীকও। বাবার বন্ধুর দুরাবস্থার কথা জেনে ছোট চাচার হাতে এক হাজার টাকা চিকিৎসা করার জন্য পাঠিয়েছে। আর কি বলেছে জান? বাবার বন্ধু বাবার সমান। তাকে সম্মান করা মানে বাবাকে সম্মান করা। তুমি দেখো আসমার মা, রিয়াজুল জীবনে উন্নতি করবেই। তারপর বালিশের তলা থেকে টাকাটা বার করে আসমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন, এটা তুলে। রাখ।
মাহমুদা বিবি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আল্লাহ ওকে সুখি করুন। তোমার মুখে শুনেছিলাম সে ঢাকায় খালার কাছে মানুষ হচ্ছে। ও কী এখন গ্রামেই থাকবে?
তা জিজ্ঞেস করিনি, আবার এলে করব।
আসমা টাকাটা আলমারীতে রেখে এসে বলল, সেদিন আমাকে বললেন, বেশ কিছুদিন থাকবেন। তারপর যাই ওদেরকে পড়াই বলে আসমা বেরিয়ে এসে ভাইবোনের কাছে বসল।
ঘরে ফিরে সামসুদ্দিন মিয়া রিয়াজুলকে বললেন, তুমি টাকা দিয়েছ শুনে মোসারেফ হোসেন খুব খুশি হয়েছেন। তোমাকে অনেক দোয়া করে বললেন, মাঝে মাঝে আসতে বলবেন! ওকে দেখলে মনে হয় যেন আমার বন্ধুকে দেখছি। ওঁর স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে?
না, দেরি হয়ে যাচ্ছিল বলে চলে এসেছি। এবারে গেলে পরিচয় করব।
উনি খুব পর্দানশীন। তোমার সামনে আসবে বলে মনে হয় না।
এটা তো খুব ভালো কথা। এরকম মেয়েদের কথা আজকাল তো শোনাই যায় না। আল্লাহ পাকের একমাত্র নেক বান্দিরাই পর্দানশীন হয়ে থাকেন।
৫-৬. তানজিলার বিয়ে হয়েছে
তানজিলার বিয়ে হয়েছে জয়নগর থেকে প্রায় সাত আট মাইল দূরে জামতলা গ্রামে। যাতায়াতের জন্য ভালো রাস্তা নেই। তাই কোনো যানবাহন চলাচল করে না। বর্ষাকালের চার মাস ছাড়া শীত ও গ্রীষ্মের সময় অল্প কিছু রিক্সা চলাচল করে। আর গরুর গাড়িতে করে উচ্চ পরিবারের লোকজন ও মেয়েরা যাতায়াত করে। তবে যাদের হাঁটার ক্ষমতা আছে, তারা হেঁটেই যাতায়াত করে। কারণ গ্রামের এবড়ো থেবড়ো মাটির রাস্তায় রিক্সা ও গরুর গাড়ির আঁকুনী খেয়ে মানুষের কোমর ব্যাথা হয়ে যায়। আবার অনেকের মাথা ধরে যায়। কেউ কেউ বমিও করে দেয়। তবে এসব এলাকায় বর্ষাকালে যাতায়াতের খুব সুবিধা। মাঠ ঘাট পানিতে ডুবে গেলে নৌকা করে একেবারে গন্তব্য স্থানে যাওয়া যায়। এখন গ্রীষ্মকাল। তাই ছোট চাচার মুখে যানবাহনের দুরাবস্থার কথা শুনে রিয়াজুল তার সঙ্গে হেঁটে জামতলা রওয়ানা দিল। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর ফুফুর বাড়ি এসে পৌঁছাল। এত রাস্তা সে কোনোদিন হাঁটেনি। বেশ কষ্ট অনুভব করল।
আলাপ পরিচয়ের পর রিয়াজুল ফুফা-ফুফুকে কদমবুসি করল।
তানজিলা ভাইপোকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। তারপর চোখ মুখ মুছে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলেন।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সামসুদ্দিন মিয়া সবাইকে নিয়ে জমি রেকর্ড করাবার কথা তুলে রিয়াজুলের মতামত বললেন।
স্ত্রী কিছু বলার আগে আকবর হোসেন বললেন, রিয়াজুল খুব ভালো কথা বলেছে। আমার মনে সেটা করাই সর্বোত্তম।
স্বামী থেমে যেতে তানজিলা বলল, আমিও তোমার সাথে একমত। কিন্তু বড় ভাই যদি রাজি না হন, তখন কি হবে?
কেউ কিছু বলার আগে রিয়াজুল বলে উঠল, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। আমার যতদূর ধারণা, ইনশাআল্লাহ কোরআন-হাদিসের কথা বলে বড় চাচাকে রাজি করাতে পারব।
সামসুদ্দিন মিয়া বললেন, আল্লাহ তোমার চেষ্টা সফল করুন। তোমার ফুফু জানতে চাচ্ছেন, একান্তই যদি রাজি না হন তা হলে কি করবে?
রিয়াজুল দৃঢ় কণ্ঠে বলল, তা হলে আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেই মতো আমি ও রফিক হাকিমের কাছে বড় চাচার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব।
সামসুদ্দিন মিয়া বললেন, বেশ তাই হবে।
ফুফুর বাড়ি দু’দিন থেকে পরের দিন দুপুর নাগাদ ফুফু ও রফিককে নিয়ে রিয়াজুল ৬ সামসুদ্দিন মিয়া জয়নগর ফিরে এল।
বিকেলে আসরের নামায পড়ে রিয়াজুল আসমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। পুকুর পাড়ের কাছে এসে আমাকে একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
ছয় মাস পর পনের দিনের ছুটি পেয়ে মতি গতকাল রাত নটার সময় এসে আজ আসমাদের খোঁজ-খবর নিতে এসেছিল। চাচার হাতে দু’শো টাকাও দিয়েছে।
ফিরে আসার সময় আসমাও পুকুর পাড় এসে মতির কাছ থেকে ঢাকার গল্প শুনছিল। একসময় আসমা কয়েকদিন আগে বালিয়াকান্দি থেকে ফেরার সময় যে বিপদে পড়েছিল এবং কিভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার পেল, তা বলল।
মতি খুব রেগে গিয়ে বলল, চেয়ারম্যানের ছেলে বলে ইহসান বারবার অপকীর্তি করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। তবে যিনি তোমাকে রক্ষা করেছেন, তার জায়গায় আমি হলে তাকে খুন করে ফেলতাম। আল্লাহ যদি সেদিন দেন, তা হলে আমি ওর হাত দুটো ভেঙ্গে দেব। তারপর বলল, যিনি তোমাকে উদ্ধার করেছিলেন তার পরিচয় বল, আমি তার সঙ্গে দেখা করব।
আসমা রিয়াজুলের পরিচয় বলল। তারপর আব্বার সঙ্গে তার যেসব কথাবার্তা হয়েছে, সেসব বলে বলল, চিকিৎসার জন্য আব্বাকে একহাজার টাকাও দিয়েছেন।