বশির মোল্লার আর্থিক অবস্থা খুব ভালো। তিনি সালাউদ্দিন চেয়ারম্যানকে চেনেন। ইলেকশানের সময় লোকটা তার হয়ে অনেক কাজ করেছেন। ছেলে তার মেয়েকে বিয়ে করতে চায় স্ত্রীর কাছে শুনে একজন ঘটককে ডেকে পাঠালেন। ঘটক আসার পর সালাউদ্দিন চেয়ারম্যানের ও তার মেয়ের খোঁজ খবর নিতে বললেন।
ঘটক বলল, ওনাকে খুব ভালো করে চিনি। আর্থিক অবস্থা ভালো। ওনার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ঢাকায় ফুপুর বাসায় থেকে ভার্সিটিতে পড়ছে। মেয়ে ঘরে থেকে গ্রামের কলেজে পড়ছে। অপূর্ব সুন্দরী, সচরাচর এত সুন্দরী মেয়ে দেখা যায় না। যেমন গায়ের রং তেমনি চেহারা। চেয়ারম্যান যে ভালো লোক, তা আপনিও জানেন। ওনার মেয়ে আপনার পূত্রবধু হওয়ারই যোগ্য।
বশির মোল্লা বললেন, তাই যদি হয়, তা হলে আপনি আজই গিয়ে প্রস্তাব দিন। তারপর তাকে এক হাজার টাকা দিয়ে বললেন, বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তোমাকে খুশি করে দেব।
ঘটক সালাম বিনিময় করে বিদায় নিয়ে ঐ দিন বিকেলে সালাউদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেল।
চেয়ারম্যান ঘটককে চেনেন। তাকে দেখে বললেন, কী ঘটক মিয়া, কী খবর?
ঘটক সালাম ও কুশল বিনিময় করে বলল, আমাদের এম.পি. সাহেব পাঠিয়েছেন।
তাই না কী? কেন পাঠিয়েছেন বলুন।
উনি আপনার মেয়েকে একমাত্র পুত্রের বৌ করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন।
চেয়ারম্যান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আছে উনি জানলেন কেমন করে? আপনি নিশ্চয় বলেছেন?
ঘটক বলল, আমি কিছুই বলিনি। ওনার ছেলে একদিন আপনার মেয়েকে কলেজ থেকে ঘরে ফেরার পথে দেখে পছন্দ করেছে। সেকথা জেনে এম.পি. সাহেব আমাকে প্রস্তাব নিয়ে পাঠালেন। আপনারা রাজি থাকলে কথাবার্তা বলার জন্য উনি আসবেন।
ইলেকসানের ব্যাপারে বসির মোল্লা ছেলে জুলহাসসহ বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে এসেছেন। জুলহাস স্বাস্থ্যবান ও শিক্ষিত হলেও গায়ের রং কালো, মুখের শ্রীও ভালো নয়। অচেনা কেউ হঠাৎ দেখলে ভয় পাবে।
সেই ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে শুনে চেয়ারম্যান ঘটকের উপর খুব রেগে গেলেও তা বাইরে প্রকাশ করলেন না। মুখের উপর না করে ঘটককে ফিরিয়ে দিলে এম.পি সাহেব অসন্তুষ্ট হবেন। তাই নাস্তা করিয়ে বিদায় দেয়ার সময় বললেন, বিয়ে সাদির ব্যাপারে ভেবে চিন্তে কাজ করতে হয়। তা ছাড়া মেয়ে কলেজে পড়ছে, তারও মতামত নিতে হবে। যাই হোক, সপ্তাহখানেক পরে আসবেন তখন মতামত জানাব।
ঘটক ফিরে এসে এম.পি. সাহেবকে চেয়ারম্যানের কথা জানাল।
এম.পি. সাহেব বললেন, চেয়ারম্যান ভালো কথা বলেছেন। আপনি সপ্তাহখানেক পরে গিয়ে খবর নিয়ে আসবেন।
এক সপ্তাহ পরে ঘটক এলে চেয়ারম্যান বললেন, এম.পি. সাহেবকে বলবেন, ওনার প্রস্তাব পেয়ে আমরা খুশি হয়েছিলাম; কিন্তু মেয়ে এখন পড়ছে বিয়েতে একদম রাজি নয়। শিক্ষিত বয়স্কা মেয়েকে তো আর জোর করে বিয়ে দেয়া যায় না। তারপর ঘটককে বিদায় করে দিলেন।
ঘটক ফিরে এসে চেয়ারম্যান এম.পি. সাহেবকে যা কিছু বলতে বলেছেন বললেন।
নিজের ছেলে দেখতে খারাপ বলে এম.পি. সাহেব প্রায় তার বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করেন। কোনো উচ্চ বংশের মেয়ের বাবা তার ছেলেকে দেখলে জামাই করতে চাইবেন না। তাই যেদিন স্ত্রীর মুখে চেয়ারম্যানের মেয়েকে ছেলে পছন্দ করেছে শুনেছেন তখনই ভেবেছেন, চেয়ারম্যান রাজি হবেন না। কারণ তিনি জুলহাসকে দেখেছেন। তবু ছেলের মন রাখার জন্য ঘটককে ডেকে পাঠান। ঘটকের মুখে মেয়ে অপূর্ব সুন্দরী জেনেও ঐ একই কারণে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। এখন ঘটকের কথা শুনে বললেন, হু, যা বোঝার বুঝে গেছি। আপনি অন্য মেয়ের খোঁজ করুন। শুনুন, মেয়ের বাবাকে বলবেন, আমাদের কোনো দাবি দাওয়া নেই। পাত্রী শিক্ষিত ও সুন্দরী হলে আমরা নিজেদের খরচে সবকিছু দিয়ে বৌ করে নিয়ে আসব।
ঠিক আছে সাহেব, তাই হবে বলে ঘটক বিদায় নিয়ে চলে এল। বড় রাস্তায় এসে দেখল, এম.পি. সাহেবের ছেলে ও তার দু’জন বন্ধু হুন্ডার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
কাছে এলে জুলহাস সালাম বিনিময় করে বলল, এই যে ঘটক চাচা, কি খবর বলুন।
ঘটক বলল, চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, মেয়ে এখন বিয়ে করবে না পড়াশোনা করবে।
জুলহাসও জানে কোনো মেয়ের বাবা তাকে দেখলে যেমন জামাই করতে চাইবে না, তেমনি মেয়েও তাকে দেখলে বিয়ে করতে চাইবে না। তবে তার টাকার অহংকার আছে। ভাবে টাকা থাকলে যদি বাঘের চোখ পাওয়া যায়। তা হলে সুন্দরী মেয়ে পাওয়া যাবে না কেন? এখন ঘটকের কথা শুনে রাহেলার উপর প্রচণ্ড রেগে গেল। তাকে বিদায় করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, তোর রূপসূধা পান করে মুখে এ্যাসিড দিয়ে যদি পুড়িয়ে না দিই তো আমি বাপের বেটা নই।
এরপর থেকে রাহেলাকে ধরার জন্য দু’বন্ধুকে হুন্ডায় নিয়ে কলেজে। যাতায়াতের রাস্তায় আড্ডা দিতে লাগল।
কলেজ পনের দিন বন্ধ থাকায় রাহেলা কলেজে যাইনি। আজ কলেজ খুলতে ক্লাস করতে এসেছিল। প্রথম দিন বলে দুপুর একটায় ছুটি হয়ে যায়।
কলেজে যাতায়াতের পথে রাস্তার পাশে একটা বেশ বড় বিল আছে। বিলের পাড়ে কাশবন। বিলটা লোকালয় থেকে বেশ দূরে মাঠের মাঝখানে। তখন গ্রীষ্মকাল হওয়ায় দুপুরের পর লোকজনের যাতায়াত কম। কলেজ ছুটির পর রাহেলা ফেরার পথে বিলের কাছে এসে দেখল, সেদিনের সেই তিনটে ছেলে রাস্তার ধারে হুন্ডার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাহেলা না দেখার ভান করে পাশ কেটে চলে আসছিল, ওড়নায় টান পড়তে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, কাল কুচকুচে ছেলেটা, সেদিন যে এম.পি. সাহেবের ছেলে বলে পরিচয় দিয়েছিল, তার হাতে ওড়নাটা।