হঠাৎ একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপামনি কি আমাদের ব্যাপারটা কিছুই জানেন না?
আমি বললাম, না, তবে বিয়ের আগে তাকে একটা গল্প বলে তার মতামত জানতে চেয়েছিলাম। গল্পটা বলিছি শোন।
একটা পত্রিকায় একজন লেখক একটা গল্প লিখেছিলেন। গল্পের শেষ না করে পাঠকদের মাঝে প্রশ্ন করে বলেছিলেন, যে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারলে তাকে লেখক পাঁচশত টাকা পুরস্কার দেবেন। তোমার আপামনি বলল, আগে গল্পটা শোনা যাক, তারপর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে। আমি বলতে শুরু করলাম
এক ধনীর দুলালী দোকানের একজন গরীব কর্মাচারীর প্রেমে পড়ে যায়। একথা যখন মেয়েটা ছেলেটাকে জানায়, তখন ছেলেটা তাকে কোনো পাত্তাই দিল না। মেয়েটা কিন্তু নাছোড় বান্দা। পরে ছেলেটাও মেয়েটার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু ছেলেটার দিক থেকে দুটো বড় বাধা ছিল! প্রথমতঃ সে বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। সে গরিব না হলেও বড়লোক নয় এবং সে তার স্ত্রীকে খুব ভালবাসে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে একদিন ছেলেটা মেয়েটাকে নিজের পরিচয় দিয়ে তার প্রেমের পরীক্ষা নিল। আর মনে করল, মেয়েটা নিশ্চয় তার সত্য পরিচয় পেয়ে আপনা থেকে দূরে সরে যাবে। কিন্ত মেয়েটা তার পরিচয় শুনে বলল, তুমি যেই হও না কেন, আমি তোমাকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর, তবে আমি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব।
লেখক এবার গল্প শেষ করে প্রশ্ন করেছেন, আপনারই বলুন, ছেলেটার কি করা উচিত?
গল্পটা শুনে তোমার আপামনি বলল, দূর, ঐ সব আবার সত্য হয়। লেখকরা সব মাতাল। মদ খেয়ে মাতলামি করেছে।
আমি বললাম, তা না হয় লেখক মাতলামি করেছে, কিন্তু সত্যি সত্যিই কেউ যদি এই রকম পজিশনে পড়ে? তাহলে তার কি করা উচিত তুমি বল।
তোমার আপামনি বলল, ঐ ধরণের মেয়েরা কোনোদিন ভালো হয় না। তাছাড়া কোথাকার কে মেয়ে, সে আত্মহত্যা করুক বা আর যাই করুক, ছেলেটার তাকে বিয়ে করা উচিত নয়।
আমি বললাম, তোমার উত্তরটা আমি পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দেব। এখন বুঝতে পারছ, একজন মেয়ে হয়েও স্বামীর ভাগ দিতে হবে বলে তোমার আপামনি ঐ মেয়েটিকে দূরে সরিয়ে মেরে ফেলতে চাইল। তারপর সেলিনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার আপামনি তো যাহোক একটা উত্তর দিল, এখন তুমি বলতো, এটার সঠিক উত্তর কি হবে?
সেলিনা কান্নাজড়িত স্বরে বলল, আমার ঘটনাটাই এর সঠিক উত্তর। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না। আমাকে কোনোদিন আর এধরনের প্রশ্ন কর না? তুমি আমাকে এত বেশি প্রশ্ন কর কেন? ভয় হয় যদি প্রশ্নের উত্তর তোমার মনের মত না হয়, তাহলে হয়তো তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবে।
ঠিক আছে সখি ঠিক আছে, তোমাকে আর কোনোদিন প্রশ্ন করব না। কিন্তু বলতে পার এত পানি তোমার চোখে……. বলে চুপ করে গেলাম।
থামলে কেন? বল না।
বাক্যটা পুরো বললে তোমাকে প্রশ্ন করা হয়ে যাবে যে?
সেলিনা হেসে ফেলে বলল, সত্যি, আমি ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই, এত প্রশ্ন তোমার মনে আসে কোথা থেকে?
আমাকে প্রশ্ন করতে নিষেধ করে এখন থেকে তাহলে তুমি প্রশ্ন করতে শুরু করলে?
এই কথায় দুজনেই হেসে উঠলাম।
.
বিয়ের তিন বছর পর একদিন সেলিনা বলল, আমাকে কোনো লেডিজ গাইনীর কাছে চেকআপ করাবে?
রসিকতা করে ইংরেজীতে বললাম, বাট হোয়াই? এনিথিং রং?
বলতে যে লজ্জা করছে।
স্বামীর কাছে স্ত্রীর লজ্জা করতে নেই। তাছাড়া তোমার সব লজ্জাস্থানগুলো যখন আমার দখলে তখন লজ্জার কোনো কারণ নেই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলে ফেল।
তুমি দিন দিন ভীষণ অসভ্য হয়ে যাচ্ছ।
সে জন্য তুমিই দায়ী। তোমার লজ্জাস্থানগুলো দিন দিন আমাকে অসভ্য করে তুলছে।
এ রকম অসভ্যতা করলে আমি বলব না, যাও দুষ্ট কোথাকার?
ঠিক আছে, আর অসভ্যতা করব না। এবার আসল কথাটা বল, নচেৎ শান্তি পাচ্ছি না।
এতদিন হয়ে গেল মা হচ্ছি না কেন?
ও তাই বল, তোমার কথা শুনে তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সন্তানের জন্য এত তাড়াহুড়ো করছ কেন? মা হতে খুব সখ হচ্ছে বুঝি?
সন্তানের মা ডাক না শুনলে নারী জনম সার্থক হয় না।
মহারানীর আদেশ শীরধাৰ্য্য।
কয়েকদিন পর সেলিনাকে একজন লেডীজ গাইনী স্পেশালিষ্টের কাছে নিয়ে গেলাম।
উনি পরীক্ষা করে বললেন, আপনার স্ত্রী কোনোদিন সন্তানের মা হতে পারবেন। কারণ ওঁর সন্তান জন্মাবার ঘর নেই।
কথাটা শুনে সেলিনার দিকে চেয়ে দেখি, একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর তার মুখটা সাদা হয়ে গেছে।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ডাক্তার বললেন, মিসেস খান, আপনি এত নার্ভাস ফিল করছেন কেন? আল্লাহ আপনাকে সন্তান ধারণে অক্ষম করে পয়দা করেছেন। এখানে মানুষের কোনো হাত নেই।
ডাক্তারের কথায় সেলিনা সম্বিত ফিরে পেয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, চল বাসায় চল।
বাসায় এসে তাকে বললাম, ডাক্তার খুব দামী কথা বলেছেন। আল্লাহপাক যা কিছু করেন বান্দাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। যদিও সেগুলো আপাতঃদৃষ্টিতে খারাপ বলে মনে হয়। তার ইচ্ছার উপর বেজার হতে নেই। সব কিছুর উপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত। আমি যখন এইসব বলছিলাম সেলিনা তখন আমার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। আমি তার কান্না থামাবার জন্য মাথায় ও পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম, কেঁদো না, আল্লাহপাক নারাজ হবেন। আর একদিন না হয় মেডিকেলে এক্স-রে করে দেখব।