সেলিনা বলল, তুমি যদি এখন আমাকে লক্ষ টাকার জিনিস উপহার দিতে, তাহলেও আমি এত বেশি আন্দিত হতাম না। আমার মন যা পেয়ে খুশী হয়, তা তুমি দিয়েছ! আমি আর কিছুই তোমার কাছে চাই না।
সুযোগ পেয়ে বললাম, একটা কথা বলব; কিন্তু কিছু মনে করতে পারবে না।
সেলিনা হাসি মুখে বলল, কি কথা বল, আমি কিছু মনে করব না।
আমাকে এবার যে ছুটি দিতে হবে? কিন্তু হাসি মুখে। বিদায় বেলায় কান্না আমি পছন্দ করি না।
ছুটির কথা শুনে সেলিনার চোখে পানি এসে গেল। ওড়না দিয়ে চোখ মুছে বলল, আজ নয় পরশু, তবে কয়েকটা সর্ত আছে।
মহারানীর সর্তগুলো শুনতে চাই।
প্রথম- আবার কবে এই দাসি তোমার দেখা পাব?
দ্বিতীয় বলার সাথে সাথে তার হাতে একটা ভঁজকরা কাগজ দিয়ে বললাম, আমি আমার প্রিয়তমার সমস্ত সর্ত জানি। তাই সে যখন বাইরে গিয়েছিল তখন তার সর্তগুলোর উত্তর লিখে রেখেছি। তুমি এই পত্র মোতাবেক কাজ করলে আমরা উভয়েই সুখী হব।
সেলিনা আমার সামনের চেয়ারে বসে কাগজটা খুলে পড়তে লাগল।
প্রিয়তমা, তোমাকে এই চিঠি লিখতে মন চায়নি। তবু কর্তব্যের খাতিরে লিখলাম। কারণ মন এক জিনিস আর কর্তব্য অন্য এক জিনিস। আমার কাছে মনের বাসনার চেয়ে কর্তব্য বড়। আমি প্রতি বৃহস্পতিবার দিনগত রাত্রে আসব। যদি কোনো কারণবশত আসতে না পরি, তবে পরের দিন সকালে আসব। বোরখা ছাড়া বাইরে কোথাও যাবে না। জীবনে কোনোদিন মিথ্যা বলবে না। শরীয়তের কারণ ছাড়া নামায রোযা ত্যাগ করবে না। ইডেন কলেজেই এ্যাডমিশন নিতে পার। আমি যে সমস্ত বইয়ের লিষ্ট করে দিয়েছি, সেগুলো পড়ে আদর্শ নারী হওয়ার চেষ্টা করবে। সব রকম বই পড়ার অনুমতি দিলাম। তবে ধর্মীয় বই পুস্তক বেশি পড়বে। আমর হুকুম ছাড়া যেখানে খুশি যাওয়া চলবে না।
তুমি যদি আমার প্রাপ্য মর্যাদা আমাকে দাও, তাহলে জীবনে কোনোদিন আমার কাছ থেকে রূঢ় ব্যবহার পাবে না। যদিও আমি জানি আমার প্রেমিকা স্ত্রী কোনোদিন আমার অমর্যদা করবে না, তবু খামখেয়ালির বশবর্তী হয়ে লিখলাম। ছেলেবেলা থেকে আমি বড় খামখেয়ালি। সেই জন্য সঙ্গিরা স্কুল লাইফে আমাকে খামখেয়ালি সম্রাট মহম্মদ বিন তুঘলুক বলে ডাকত। যৌন মিলনে আমার পূণ স্বাধীনতা থাকবে। তোমার প্রেম যখন আমাকে টানবে তখন আমার সময়ের জ্ঞান থাকবে না। গিয়ে যদি তোমাকে না পাই, তাহলে ভীষন রেগে যাব। আর রেগে গেলে আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তখন খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলতে পারি। এমন কি চাবুক মেরে তোমার শরীর থেকে গোস্ত তুলে নিতেও দ্বিধাবোধ করব না।
কী খুব অনুশোচনা হচ্ছে নাকি? নিশ্চয় তোমার মনে হচ্ছে, আচ্ছা পাগল লোকের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছি রে বাবা? বিয়ের পর দুদিন যেতে না যেতে চাবুক মারার ভয় দেখাচ্ছে?
এখন বুঝতে পারছ, আমি কি স্বভাবের লোক। বিয়ের দুদিন পর কোনো স্বামী যে তার স্ত্রীকে এইসব কথা লিখতে পারে না, তা আমি জানি। মন চাইল তাই লিখলাম। এটাকেও তুমি আমার একটা খামখেয়ালী মনে করতে পার।
আশা করি, আমার চরিত্র সম্বন্ধে তোমার মোটামুটি ধারণা হয়েছে। এখন আমি আমার প্রেমিকা সহধর্মিণীর কাছ থেকে জীবন যাত্রার সহযোগীতা কামনা করে শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
তোমার খামখেয়ালী প্রিয়তম স্বামী।
সেলিনা চিঠিটা দুবার পড়ল। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার প্রেমকে দুবছর ধরে পরীক্ষা করেও কি, তোমার সন্দেহ মিটেনি? তুমি যে চরিত্রের লোক হওনা কেন, আমার কাছে আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) পরে তোমার স্থান। অন্যায় করলে যত কঠিন শাস্তি তুমি দাওনা কেন, আমি তা মাথা পেতে নেব। তোমার কাছে সুখ পেয়ে যেমন শান্তি পাব, দুঃখ পেয়েও তা সইতে পারব। মনে কোনো রকম অনুশোচনা আসবে না। তুমি দুদিন পরে চলে যাবে। এসব কথা বাদ দিয়ে আমাকে তোমার সেবা করতে দাও।
বললাম, আজ পর্যন্ত তোমাকে যত রকমের পরীক্ষা করেছি, সবগুলোতেই ফুলমার্ক পেয়ে পাশ করেছ। পরীক্ষার ফলাফলে খুশি হয়ে আমার মন তোমাকে কিছু দিতে চাইছে। তুমি এখন আমার কাছে কিছু চাও। সাধ্যের মধ্যে হলে এক্ষুনি দেব। আর তার বাইরে হলে সারাজীবন ধরে তা দেওয়ার চেষ্টা করব।
কোনো চিন্তা ভাবনা না করে তৎক্ষণাৎ সেলিনা বলল, আমি শুধু তোমার প্রেম চাই। প্রেম ছাড়া তোমার কাছ থেকে আমি আর কিছুই চাই না।
তাকে খুব আদর করে বললাম, দেব, সমস্ত মন প্রাণ উজাড় করে তোমাকে প্রেম দেব। জান, মাঝে মাঝে খুব চিন্তা হয় তোমার এত গভীর প্রেম আল্লাহপাক আমার ভাগ্যে কতদিন রেখেছেন?
সেলিনা বলল, তুমি বুঝি এই সব চিন্তা কর? আর কখনও ঐ রকম চিন্তা করবে না। বরং আমারই কেবল মনে হয় তোমার প্রেমের তুলনায় আমারটা কত নগণ্য।
৬. বিয়ের প্রায় পাঁচ ছয় মাস পর
বিয়ের প্রায় পাঁচ ছয় মাস পর থেকে সেলিনা মাঝে মাঝে শহরের বড় বড় হোটেলে রুম ভাড়া করে ফোনে আমাকে হোটেলের নাম ও রুম নাম্বার দিয়ে যেতে বলত। আমি যদি বলতাম, কি দরকার ছিল এত টাকা খরচ করার, বাসায় তো কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। সেলিনা উত্তর দিত আমার প্রিয়তম খামখেয়ালি, তাই আমিও খামখেয়ালিনি হয়েছি। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর এমন দিত যে, আমাকে হার মানতে হত। কিন্তু হেরে গিয়েও খুব আনন্দ পেতাম।