রাবেয়া নামে অন্য মেয়েটি বলল, আর একটু ভালো করে বুঝিয়ে দিন।
একজন খুব গরিব লোক, তার পরনে কোনো কাপড় নেই। তার উপর ইসলামের হুকুম সে যেন উলংগ অবস্থায় বসে নামায পড়ে। তবু নামাযের মাফ নেই। এখন তাকে দেখে যদি সকলে ঐভাবে নামায পড়ে, তাহলে কি দৃশ্যের সৃষ্টি হবে তা চিন্তা করে দেখুন। সারা দুনিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, নারী স্বাধীনতার ফলে লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। পৃথিবীর মধ্যে যে সমস্ত দেশ এই বিষয়ে বেশি অগ্রগামী তারা অর্থনৈতিক দিকে উন্নতি করলেও দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তি থেকে বঞ্চিত। ইসলাম নারীকে দুনিয়ার বুকে সর্ব প্রথম সম্মান দিয়েছে। তার আগে পুরুষেরা নারীকে শুধু ভোগের সামগ্রী মনে করত, তারা উৎপিড়ীতা ও লাঞ্ছিত হত। প্রতিকারের কোনো হাতিয়ার তাদের হাতে ছিল না। কুরআন মজিদের মধ্যে আল্লাহপাক বজ্রনিনাদে ঘোষণা করিয়াছেন, তোমরা নারীকে যতেচ্ছভাবে ভোগ কর না, ইচ্ছামত উৎপীড়ন ও অত্যাচার করো না।
আল্লাহপাকের হাবিব, হযরত মুহাম্মদ (দঃ) বলিয়াছেন-তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে ভালবাস, তাদের সহিত নম্র ব্যবহার কর, তাদের ছোট ছোট দোষগুলো ক্ষমার চোখে দেখ। তাদের প্রতি তোমাদের যেমন হক আছে, তোমাদের প্রতি তাদেরও হক আছে।
তিনি আরও বলিয়াছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে তাহার স্ত্রীর। সহিত উত্তম ব্যবহার করে।
তিনি আরো বলিয়াছেন, যখন কোনো মুসলমান পূণ্য লাভের আশায় তাহার স্ত্রীর জন্য কিছু ব্যয় করে, ইহা তাহার পক্ষে একটি দানের তুল্য হয়।
আর নারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন
তোমরা ইচ্ছামত যত্রতত্র চলাফেরা কর না। যদি কোন কারণ বশতঃ বাইরে যেতে হয়, তবে অন্ধ যুগের নারীদের মত বে আবরু হয়ে না যেয়ে নিজেকে একটা চাদর দিয়ে ঢেকে নিও।
এসব কথা আলোচনা করলে অনেক কথা বলতে হয়। আজকাল অনেক ধর্মীয় কিতাব বাংলায় অনুবাদ হয়েছে এবং হচ্ছে। আপনারা ঐ সমস্ত বই পড়বেন। তাহলে নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আইন সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এখন আমরা একটু বাইরে যাব, আপনারাও গেলে খুশী হব।
জোবেদা বলল, আমরা এখন যেতে পারব না, অন্য এক সময় যাব। তারা বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর জরিনার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমারও কি একই মত?
না, এক্ষুনি আসছি বলে জরিনা ট্রেটেবিল নিয়ে চলে গেল।
সেলিনাকে তৈরি হতে বলে বললাম, অনেকক্ষণ লেকচার দিলাম, কিন্তু কোনো পারিশ্রমিক পেলাম না।
সেলিনা উঠে এসে একটা চুমো খেয়ে বলল, এটা এ্যাডভান্স, ফুল পেমেন্ট রাত্রে।
আসরের নামায পড়ে জরিনাকে নিয়ে আমরা বায়তুল মোকাররমে গেলাম। একটা সেফার্স পেন কিনে তাতে প্রেজেন্টেড বাই দুলাভাই লিখিয়ে জরিনাকে দিয়ে বললাম, আমাদের দেশে বিয়ের মজলিসে খাওয়ার আগে দুলাভাইয়ের হাত তার শালা ধুইয়ে দিয়ে মোটা বখশীস পায়। তুমি আমার হাত না ধোয়ালেও প্রথম খাইয়েছ, তাই খুশি হয়ে দিলাম। তারপর কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে বাসায় ফিরলাম।
রাত্রে খাওয়ার পর্ব শেষ করে শুয়ে শুয়ে একটা গল্পের বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না। সেলিনার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম, স্লিপিং গাউন পরে পাশে শুয়ে আমার গালে হাত বুলাচ্ছে।
আমি উঠে খাট থেকে নেমে চেয়ারে বসে পানি খেতে চাইলাম। সেলিনা খাট থেকে নেমে পানি দিল। পানি খেয়ে সিগারেট ধরিয়ে ব্রীফকেস থেকে টাকাগুলো। বের করে টেবিলের উপর রেখে বললাম, তোমার দেনমোহর বাবদ টাকা। এগুলো নিয়ে তুমি আমাকে দেনমোহরের দাবি থেকে মুক্তি দাও। এই দাবি পরিশোধ না করে স্ত্রীকে সম্পূর্ণ ভোগ করা ইসলামের দৃষ্টিতে উচিত নয়। এগুলো নিয়ে তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকারের পথ করে দাও।
সেলিনা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে বলল, মরে গেলেও আমি এ টাকা নিতে পারব না। তুমি আমাকে মাফ কর। আমার মস্তবড় ভুল হয়ে গেছে; আগেই ভেবে রেখেছিলাম, বিয়ের রাত্রেই তোমাকে দেনমোহরের দাবি থেকে মুক্তি দিয়ে দেব। কিন্তু তোমাকে পেয়ে আনন্দের অতিশৰ্য্যে তা ভুলে গেছি। এই টাকা না নিয়েই আমি তোমাকে ঐ দাবি থেকে মুক্তি দিলাম।
বললাম, দেনমোহর আদায় করার জন্য আল্লাহপাক পুরুষকে হুকুম করেছেন। আমি তার হুকুম পালন করেছি মাত্র। এতে তোমার কাঁদবার বা টাকা না নেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এটা তোমার ন্যায্য পাওনা।
সেলিনা বলল, আল্লাহপাক তো আরও বলেছেন, স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় খুশীর সঙ্গে স্বামীকে এই দাবি থেকে মুক্তি দেয়, তবে সেটা উত্তম ফায়সালা! আমি প্রথম হুকুমের চেয়ে দ্বিতীয়টাকে অধিক পছন্দ করি।
আমি বললাম, তোমার কথা ঠিক, তবে আমি কথাটা প্রথম উত্থাপন করেছি। দ্বিতীয়তঃ তোমার কাছে আল্লাহপাকের ও স্বামীর হুকুম। আর তুমি পরে বলেছ। আমার কাছে আল্লাহপাকের হুকুম ও স্ত্রীর অনুরোধ। এখন তুমিই বিচার কর কে কার কথা শুনবে?
সেলিনা কয়েক সেকেণ্ড কি যেন চিন্তা করল, তারপর টাকাগুলো আমার ব্রীফকেসে তুলে রেখে বলল, আপাততঃ এগুলো এখানে থাক, আমার টাকা আমি কি করব সে কথা আগামীতে ভাবব। তারপর নিজের চামড়ার সুটকেস খুলে কিছু কাগজ পত্র এনে আমাকে দুতিন জায়গায় সিগনেচার করতে বলল।