বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
ফাঁদে পড়ে এবার তার দিয়ে যাও দাম।
এ-মা তাহলে তুমি জেগে ছিলে?
শুধু জেগেই নয়, মহারাণীর সব কার্যকলাপ অবলোকনও করেছি।
সেলিনার মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল। তারপর আস্তে আস্তে বলল, বিবসনা নারীকে দেখা ইসলামে কঠোর ভাবে নিষেধ।
বললাম, হাদিসটা সত্য, কিন্তু নিজের স্ত্রীর বেলায় প্রযোজ্য নয়। এটাও হাদিসের কথা।
যাও, দুষ্টু কোথাকার। ছি, ছি, আমার বুঝি লজ্জা করে না? ছেড়ে দাও কেউ এসে পড়তে পারে।
আসুক গে, আমি তো আর কোনো অন্যায় করছি না। বিনা অনুমতিতে যে আসবে, সেই, বরং অন্যায় করবে।
তোমার দুটি পায়ে পড়ি ছেড়ে দাও লক্ষীটি।
তার আগে মুক্তিপণ চাই।
সেলিনা আমার ঠোঁটে চুমো খেলে আমি আস্তে করে তার ঠোঁটে কামড়ে দিলাম। তারপর ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলাম।
নটি বয় বলে সেলিনা কাপড় ঠিক করতে করতে বলল, বাথরুমে সবকিছু আছে, তুমি গোসল করে নাও, আমি নাস্তা নিয়ে আসি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি গোসল করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি, নাস্তা টেবিলের উপর রেখে সেদিনকার কেনা পাজামা পাঞ্জাবী হাতে করে সেলিনা দাঁড়িয়ে আছে।
তার হাত থেকে সেগুলো নিয়ে পরতে পরতে বললাম, প্রথমে নিউমার্কেটে তারপর আম্মাকে সালাম করতে যাব।
সেলিনা বলল, আম্মা বিয়েতে মত দেয়নি। সেইজন্য এখানে আসেও নি। সেখানে গেলে আবার যদি তোমাকে অপমান করে?
উনি মা, আমাকে যত বড় অপমান করুন না কেন, আমার কর্তব্য আমি করব। ওঁর কোনো দুর্ব্যবহারই আমাকে কর্তব্য থেকে বিরত করতে পারবে না।
নাস্তা খাওয়ার পর জরিনাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নিচে এলাম।
ড্রাইভার দাদু আমাকে সালাম দিয়ে বলল, দুলাভাই কেমন আছেন?
আমি সালামের উত্তর দিয়ে বললাম, ভালো আছি। আপনি কাল এলেন না কেন?
আম্মাকে নিয়ে কাল গুলশানে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম, ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়, তাই আসতে পারি নি।
দাদুকে নিউমার্কেটে যেতে বলে গাড়িতে উঠলাম। মার্কেটে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার সময় সেলিনাকে বললাম, তুমি আসবে না কি?
আমাকে আস্তে করে খামচি কেটে বলল, আমার মতামত জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করেছি না।
বললাম, ভুল হয়ে গেছে। তারপর জরিনার দিকে তাকাতে ও বলল, আপনারা যান, আমি যাব না।
সেলিনাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ব্যাংকে গেলাম। একটা চেক কেটে একাউন্টটেন্ট সাহেবকে বললাম, দেখুন তো এই চেকের পরিমাণ টাকা আমার একাউন্টে আছে কি না?
উনি চেকটা নিয়ে এসে বললেন, আছে।
আমি ক্যাশ করে দিতে বললাম।
কিছুক্ষণ পর একজন এসে টাকাগুলো আমার সামনে রাখল।
আমি টাকাগুলো গুণে নিয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে অলিম্পিয়ায় গিয়ে ফুটস কেক ও মিষ্টি কিনে গাড়িতে উঠে ড্রাইভার দাদুকে বললাম, আপনাদের বাসায় চলুন।
সেলিনা এতক্ষণ কোনো কথা না বলে চুপ করে কি যেন ভাবছিল।
বললাম, তোমাদের বাসায় যাচ্ছি বলে কি তোমার ভয় হচ্ছে? আমার কিন্তু ভয় ডর বলতে কিছু নেই। তবু যখন কিছু বলল না, তখন ভাবলাম, ব্যাংক থেকে এত টাকা তুলেছি বলে হয়তো চিন্তা করছে।
গাড়ি ওদের বাসায় পৌঁছাবার পর ড্রাইভার দাদু নেমে প্রথমে সেলিনার দিকের এবং পরে আমার দিকের দরজা খুলে দিয়ে বলল, নেমে আসুন।
জরিনা সামনে বসেছিল, সে আগেই নেমেছে। আমাদের দেখে জোবেদা ও আরও দুতিন জন মেয়ে এসে দাঁড়াল।
আমি গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিলাম।
জোবেদা সালামের উত্তর দিল।
সেলিনা জরিনাকে সঙ্গে নিয়ে উপরে যাওয়ার সময় জোবেদাকে বলল, তোমরা ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এস।
জোবেদা বলল, চলুন দুলা ভাই।
উপরের বারান্দায় গিয়ে সেলিনাকে ডাকতে বললাম। এমন সময় তাকে আসতে দেখে জোবেদাকে বললাম, তোমরা একটু অপেক্ষা কর তারপর সেলিনাকে বললাম, আম্মার কাছে চল।
সেলিনা আমাকে নিয়ে ধীর পদক্ষেপে একটা দরজার কাছে গিয়ে পর্দা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আম্মা বলে ডাকল।
দেখলাম, উনি জানালার রড ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি সেলিনার একটা হাত ধরে কাছে গিয়ে দুজনে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম।
উনি কোনো কথা না বলে ষ্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে রইলেন।
সেলিনা আমার হাত ধরে বেরিয়ে আসার সময় বলল, আম্মা খুব রেগে আছে। আমার সঙ্গেও কথা বলেনি।
সেলিনার ঘরে এসে দেখলাম, জরিনা ও জোবেদা ছাড়া সবাই চলে গেছে।
সেলিনা তাদের দুজনকে বাইরে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরে একা ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল, এখানে থাকবে, না অন্য কোথাও যাবে?
আজ এখানে থাকব। কালকের কথা কাল ভাবা যাবে। তুমি দাদুকে দিয়ে হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে রাখ। আমি জুম্মার নামায পড়তে যাচ্ছি, ফিরে এসে একসঙ্গে খাব।
মসজিদে নামাযের পর ইমাম সাহেবকে ব্যারিষ্টার সাহেবের কথা বলে নিজের পরিচয় দিলাম। তারপর সেলিনাকে কুরআন শরীফ পড়াবার ব্যবস্থা করে ফিরে এসে দেখি টেবিলের উপর খাবার সাজিয়ে সেলিনা বসে কাঁদছে।
বললাম, তুমি কাঁদছ কেন? আম্মা কি কিছু বলেছেন? জানতো, তোমার চোখের পানি আমাকে কত বিচলিত করে? তোমার চোখের অশ্রুবিন্দু আমার হৃদয়ে সূঁচের মতো বিধে।
সেলিনা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, আজকের দিনে তোমাকে হোটেলের খাবার খাওয়াতে আমার কলজে ফেটে যাচ্ছে।
আমি, তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, হোটেলের খাবার খেতে আমার কোনো দুঃখ নেই। যাও, হাত-মুখ ধুয়ে এস। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। সেলিনাকে চুপ করে থাকতে দেখে চেয়ারে বসিয়ে আবার বললাম, ডেল কার্নেগী তার দুশ্চিন্তাহীন নূতন জীবন বই এর মধ্যে এক জায়গায় বলেছেন, যে কোনো বিপদের সময় মানুষ যদি বিচলিত না হয়ে অতীত ও ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে বর্তমানকে মেনে নিয়ে কর্তব্য ঠিক করে, তাহলে সে একদিন না একদিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবেই। তোমাকে আমি সেই কথা বলছি, কি ছিলে? কি হল? কি হবে? এই সব চিন্তা করলে খুব, মুষড়ে পড়বে। তারচেয়ে সব রকম চিন্তা বাদ দিয়ে এখন স্বামীর সঙ্গে মজা করে পেট পুরে খাও, দেখবে অল ক্লিয়ার। আমার কথায় কাজ হল।