কি করে যে ও আমার মনের খবর জানতে পারে, তা ভেবে খুব আশ্চর্য হলাম।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে সেলিনা আবার বলল, তোমাকে একটা অনুরোধ করছি, আজ থেকে কোনোদিন যে কোনো বিষয়ে অর্থাৎ-খাওয়া, পরা ও কোনো কাজের ব্যাপারে আমার কি পছন্দ হয়, কি ভালো লাগে বা কি ইচ্ছা জাগে, কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। কারণ তোমার সবকিছু আমার নিজের চেয়ে অধিক পছন্দ।
বেলা বারটার কিছু আগে একজন পিয়ন এসে আমাদেরকে কোর্টে নিয়ে গেল। কোর্টের কাজ সারতে দেড়টা বেজে গেল।
মামা বললেন, তোমরা বাসায় গিয়ে খেয়ে নাও। আমার ফিরতে দেরি হবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হবার পর সেলিনা বলল, চল, এবার রওনা হওয়া যাক।
দাদুকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলবে না?
খেয়ে উঠেই ফোন করেছিলাম। উনি দশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন।
মামা মামীর সঙ্গে দেখা না করে কি যাওয়া ঠিক হবে?
তোমরা দুজনে আবার আসবে কিন্তু বলে মামীমা ঘরে ঢুকলেন।
আমরা দুজনে তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম।
তিনি দোয়া করলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে সুখী করুন। তারপর বললেন, তোমার মামার খাবার একজন এসে নিয়ে গেছে। উনি কখন ফিরবেন তার কোনো ঠিক নেই
মামীমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রমনা পার্কের লেকের ধারে সেই জায়গায় গেলাম। সেখানে পৌঁছে সেলিনা আমাকে কদমবুসি করল।
আমি তাকে দুহাত দিয়ে ধরে দাঁড় করিয়ে মাথায় ও কপালে চুমো খেয়ে দোয়া করলাম, হে পরওয়ারদিগারে আলম, তুমি আমার প্রেমিকার সমস্ত নেক মকসুদ পুরণ কর। আমি যেন তাকে সুখ শান্তি দিতে পারি সে তওফিক তুমি আমাকে এনায়েৎ কর। তারপর তার ডান হাতটা নিয়ে চুমো খাওয়ার সময় শাহাদাৎ আঙ্গুলে আস্তে করে কামড়ে দিলাম।
সেলিনা একবার কেঁপে উঠে কামড়ে দেওয়া আঙ্গুলটা নিয়ে চুষতে লাগল।
বললাম, এত জায়গা থাকতে এখানে এলে কেন?
এই জায়গাটাকে চিরকালের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। কিছু মার্কেটিং করব, কোথায় যাবে? নিউ মার্কেট, না বায়তুল মোকাররমে?
গ্যানিসে, তার আগে বায়তুল মোকাররমে একবার যাব।
দাদুকে সেই মতো বলে গাড়িতে উঠলাম। বায়তুল মোকাররমে পৌঁছে দোতলার একটি জুয়েলারী-দোকানে ঢুকলাম।
দোকানের ম্যানেজার আমার খুব বন্ধু লোক। কয়েকদিন আগে তাকে দুটো আংটি তৈরি করার অর্ডার দিতে এসে সেলিনার ব্যাপারটা বলেছিলাম।
আমাদেরকে দোকানে ঢুকতে দেখে সালাম দিয়ে বললেন, কি খবর খান সাহেব? সাথে নিশ্চয় নতুন ভাবি?
সালামের উত্তর দিয়ে বললাম, ঠিক ধরেছেন।
তাহলে তো মিষ্টি খাওয়ান উচিত।
সে সব আর একদিন হবে। আজ সময় কম, আপনি আংটি দুটো তাড়াতাড়ি দিন।
ম্যানেজার দুটো ছোট বাক্স এনে কাউন্টারের উপর রাখলেন।
আমি সেলিনাকে বললাম, দুটি বাক্সে দুজনের নাম লেখা দুটি আংটি আছে, বাক্স না খুলে তোমারটা তোমাকে বেছে নিতে হবে। কি, পারবে না?
সেলিনা কয়েক মুহুর্ত আমার মুখের দিকে চেয়ে কি যেন চিন্তা করল। তারপর একটা বাক্স খুলে ফেলল।
আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, যে বাক্সটা খুলল, তাতে তারই নাম লেখা আংটিটা রয়েছে।
আমি আংটিটা নিয়ে তার ডান হাতের অনামিকায় পরিয়ে দিলাম।
সেলিনা অন্য বাক্সটা খুলে নূরজাহান নাম লেখা দেখে বলল, এটা নিশ্চয় আপামণির নাম?
হ্যাঁ বলে ম্যানেজারকে দাম মিটিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী করে জানলে কোনটাতে তোমার নাম লেখা আছে?
তা বলতে পারব না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, আল্লাহপাকের মেহেরবাণীতে আমার প্রেম জয়ী হয়েছে।
তোমার প্রেমের দাম আমি দিতে পারব কিনা জানি না। আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন তোমাকে সুখি করেন।
গ্যানিসে গিয়ে সেলিনা বলল, তোমার পছন্দমতো আমার জন্য কাপড় চয়েস করে দাও।
আমি দোকানের একজন কর্মচারীকে ওর মাপের সালওয়ার কামিজ দেখাতে বললাম, অনেকগুলোর মধ্যে সবুজ ও হলুদ রং এর দুসেট পছন্দ করে বললাম, এই গুলোর মেমো দিন, ছোট বড় হলে চেঞ্জ করে নেব। তারপর সেলিনাকে জিজ্ঞেস করলাম, জরিনার জন্য কিছু কিনবে না?
জরিনা গতকাল আম্মার সঙ্গে নিউমার্কেটে গিয়ে কিনেছে।
ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে মেমো নিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য যেই মানিব্যাগ বের করেছি, অমনি সেলিনা ঝটকরে আমার হাত থেকে মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে কর্মচারিটিকে ঐ কালারের আরও দু সেট দিতে বলল।
আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দোকানের কর্মচারীকে শুধু হলুদ সেটটা দিতে বলে সেলিনাকে বললাম, মানিব্যাগটা দাও।
দেব, তবে এখন নয়। তোমার জন্যেও কাপড় চয়েস কর।
বললাম, আজ নয়, অন্যদিন।
আমি যে একটু রেগে গেছি, তা বুঝতে পেরে সেলিনা তিন সেট কাপড়ের দাম মিটিয়ে দিয়ে বলল, চল, আজ আর কিছু কিনব না। গাড়ির কাছে এসে আমাকে মানিব্যাগটা ফেরৎ দিয়ে বলল, তুমি রাগ করো না। আজ তোমাকে আমি শুধু কাপড় চয়েস করে দিতে এনেছি। অন্য দিন তুমি যা খুশী কিনে দিও, আপত্তি করব না। আর এই সেটটা আজকের আনন্দের দিনে আপামনিকে উপহার স্বরূপ দিলাম বলে একটা কাপড়ের বাক্স আমার হাতে দিল।
তোমার কথা কিন্তু বলতে পারব না।
তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো।
সেলিনাকে বিদায় দিয়ে আমি আবার গ্যানিসে গিয়ে দুটো বাচ্চার দুসেট কাপড় কিনলাম। তারপর মসজিদে আসরের নামায পড়ে ঠাঠারী বাজারে এক বন্ধুর দোকানে গেলাম। সেখানকার কাজ সেরে মাগরিবের নামায পড়ে বাসায় ফিরলাম।