আমি সিগনেচার করছি এমন সময় পনের ষোল বছরের একটি মেয়ে এসে বলল, আব্বা, আপনাদের নাস্তা খাওয়ার জন্য আম্মা ডাকছেন।
মেয়েটিকে দেখিয়ে মামা বললেন, আমার বড় মেয়ে জোহরা, এবারে ম্যট্রিক দেবে।
জোহরা আমাকে হাত তুলে তাসলিম বলল।
আমি তার প্রতিউত্তর দিলাম।
আমরা ডাইনিং রুমে গিয়ে বসলাম। একটু পরে সেলিনা এসে মামার পাশে বসল। একজন মহিলা আমাদের খাওয়াবার জন্য এলে সেলিনা বলল, মামীমা।
আমি সালাম দিয়ে বললাম, নাস্তা খেয়ে এসেছি, আমাকে সামান্য কিছু দিন।
মামীমা সালামের জওয়াব দিয়ে দুটো মিষ্টির সঙ্গে কলা ও আপেলের কয়েকটা ফালি দিলেন।
নাস্তার পর সেলিনা মামাকে জিজ্ঞেস করল, আমাদেরকে আর দরকার হবে?
মামা বললেন, এত তাড়া কিসের? তোমরা এখন গল্প কর। বেলা বারটার দিকে একজন পিয়ন এসে তোমাদের ডেকে নিয়ে যাবে। এগুলো এফিডেভিট করার সময় তোমাদেরকে দরকার হবে। আর দুপুরে তোমরা এখানে খাবে।
আমরা ড্রইং রুমে এসে বসলাম। জোহরাও সঙ্গে এসেছিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কয় ভাই বোন?
দুই বোন এক ভাই। আমিই বড়। ওরা স্কুলে গেছে। আপনারা আসবেন, তাই আম্মা আমাকে আজ স্কুলে যেতে দেননি।
হঠাৎ সেলিনা বলল, তুমি সিগারেট খাচ্ছ না কেন?
আসবার সময় কিনতে ভুলে গেছি।একটা দশ টাকার নোট বের করে জোহরার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললাম, কাউকে দিয়ে এক প্যাকেট সিজার্স সিগারেট ও একটা ম্যাচ আনিয়ে দিতে পার?
অফ কোর্স বলে জোহরা যেই টাকাটা আমার হাত থেকে নিতে গেল, সেলিনা তখন তার হাতটা টেনে নিয়ে আট আনা পয়সা দিয়ে বলল, শুধু একটা ম্যাচ, সিগারেট লাগবে না। তারপর টাকাটা আমাকে ফেরৎ দিল।
জোহরা বেরিয়ে যেতে বললাম, সিগারেট লাগবে না এ কথার অর্থ?
সেলিনা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট মূর সিগারেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, আসার সময় মৌচাক মার্কেট থেকে তোমার জন্যে কিনেছি।
মূর সিগারেট বেশ দামী। খাওয়ার সময় একটা সুগন্ধ ছড়ায়। আমি খেতে খুব ভালবাসি। অতদামী সিগারেট খেয়ে টাকা অপচয় করা পছন্দ করি না। তাই সব সময় না খেয়ে মাঝে মধ্যে খাই। জোহরা ম্যাচ দিয়ে চলে গেল।
সেলিনা একটা চেয়ার টেনে এনে আমার সামনে বসল।
সিগারেট ধরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যে এই সিগারেট খেতে ভালবাসি, তা জানলে কেমন করে? এই সিগারেট তো তোমার সামনে কোনো দিন খাইনি।
একদিন নিউমার্কেটে তোমাকে এই সিগারেট খেতে দেখেছিলাম। সে সময় এর গন্ধটা আমার খুব ভালো গেলেছিল। তাতেই বুঝেছি তুমি এই সিগারেট ভালবাস।
আজকের দিনে তুমি যদি অনেক দামী কোনো জিনিস প্রেজেন্ট করতে, তা হলেও বোধ হয় এতটা আনন্দিত হতাম না। সিগারেট ধরিয়ে জোরে টান দিয়ে সমস্ত ধোঁয়া ওর মুখের উপর ছাড়লাম বিরক্ত করার জন্য। কিন্তু ওর মুখে বিরক্তের কোনো চিহ্ন দেখলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, সিগারেটের ধোঁয়াতে তোমার অসুবিধে হয় না?
হাসিমুখে সেলিনা জবাব দিল, সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধটা আমাকে মোহিত করে দেয়।
তাহলে একটা টেষ্ট করে দেখবে কি?
বাবা না, আমার দ্বারা তা সম্ভব নয়।
একটা কথা বলি শোন, তোমাকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য বিয়ের ব্যাপারে যেসব শর্ত লিখে চিঠি দিয়েছিলাম, তাতে যখন কোন কাজ হল না তখন সেটা রেজেষ্ট্রি করার আর দরকার নেই। যতক্ষণ ওটা থাকবে ততক্ষণ আমি আমার বিবেকের কাছে অপমান বোধ করব। মামার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে নষ্ট করে ফেল।
চিরকাল ওটা আমি সঙ্গে রাখব। আমার জীবদ্দশায় অথবা মৃত্যুর পর আমার কোনো আত্মীয় যেন তোমার বিরুদ্ধে কোনো বিষয় নিয়ে কোর্টে নালিশ করতে না পারে।
তার যুক্তি শুনে আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না। বললাম, ঐ দলিলটা থাকলে তোমার ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমি যদি কোনো দিন তোমাকে বিট্রে করি, তাহলে তুমি কোনো রকম ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
আমি নিশ্চিত, যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো, ততদিন কেউ কাউকে বিটে করতে পারব না।
এত নিশ্চয়তা পেলে কোথা থেকে?
আমার প্রেমের কাছ থেকে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি যা চিন্তা করেছি তা মিথ্যা হয়নি।
ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে একমাত্র আল্লাহপাক ওয়াকেফহাল। মানুষ নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়তে যেয়ে অনেক সময় বিফল হয়।
আমি তকদির বিশ্বাস করি। সাধ্যমত তদবীর করে যাব। ফলাফল উপর ওয়ালার হাতে।
এবার জিজ্ঞেস করলাম, ডিগ্রীতে এ্যাডমিশন নেবে নাকি?
তুমি যা বলবে তাই করব।
যা বলব তা যদি তোমার মতের বিপরীত হয়, তাহলে তো এখন থেকে মনোমালিন্য শুরু হবে।
কখনও না। যেদিন থেকে তোমাকে ভালবেসেছি, সেদিন থেকে নিজের কামনা বাসনা নিজের কাছে খারাপ লেগেছে। নিজস্ব সবকিছু ত্যাগ করে তোমার মতে চললে ইহকাল ও পরকালে যে সুখ শান্তি পাব, সে কথা আমার প্রেম অনেক আগেই আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার এখন কি করতে বা কি খেতে ইচ্ছা করছে? তার উত্তরে বলব, আমার প্রেমিকের যা যা ইচ্ছা করবে আমারও তাই।
না, তার কথা শুনে চিন্তা করলাম, এত গভীর প্রেম ও কেমন করে পেল? কে তাকে এত শিক্ষা দিল? মনে করলাম জিজ্ঞেস করব নাকি, বিকেলে কোনো প্রোগ্রাম। আছে কিনা?
ঠিক এমন সময় সেলিনা বলে উঠল, বিকেলেও তোমাকে ছাড়ছি না। প্রথমে পার্কে যাব, তারপর কিছু কেনাকাটা করব।