সেলিনা,
দোয়া নিও। আশা করি ভালো আছ। এই পত্রে আমি তোমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে কতকগুলো শর্ত আরোপ করছি। আমার এই শর্তগুলো ভালভাবে পড়ে স্থির মস্তিস্কে চিন্তা করে আমাকে জানাবে। তোমার উত্তর পাওয়ার পর মতামত জানাব।
১. সারাজীবন তোমাকে খোর-পোশ দিতে পারব না।
২. তোমাকে চিরকাল ঐ বাড়িতে থাকতে হবে। যদিও তোমার গার্জেনরা অত্যাচার করে তোমাকে তাড়িয়ে দেয়, তবুও বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য আমাকে অনুরোধ করবে না।
৩. কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য যে কোনো কারণে আমাকে যখন তখন ডাকা চলবে না। ৪. বিয়ের ব্যাপারটা চিরকাল গোপন রাখতে হবে। আমার বা তোমার কোনো আত্মীয়ের কাছে আমাদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করবে না।
৫. গার্জেনদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যদি কোনো রকম খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হও, তবে আমাকে না জানিয়ে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
৬, বাইরে যাওার সময় বোরখা ব্যবহার করতে হবে।
৭. আমার দ্বারা তোমার যৌন ক্ষুধা নাও মিটতে পারে।
৮, বিয়ের পর ব্যাংকের যে টাকার তুমি স্বত্ত্বাধিকারী হবে, সে টাকা নেওয়ার জন্য আমাকে পিড়াপিড়ী করবে না।
৯, আমার সঙ্গে সব সময় মেজাজ বুঝে চলবে। আমাকে কাছে পেয়ে নিজের ইচ্ছামত কিছু বলতে বা করতে পারবে না।
১০. আমি খুব বদমেজাজী, যদি আমার মতের বিরুদ্ধে চল, তাহলে চাবুক মেরে আমার মতে চালাব।
১১. জীবন যাত্রা যতই দুর্বিসহ হয়ে উঠুক না কেন, কোনো দিন তালাকের কথা উচ্চারণ করবে না।
১২. উপরের, এগারটি শর্তের সবগুলো অথবা যে কোনো একটা শর্ত আরোপ করে কখনও কোর্টে নালিশ করতে পারবে না।
সেলিনা তুমি যদি এই চিঠি পড়ে আমাকে কাপুরুষ ও স্বার্থপর ভেবে ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দাও, তাহলে এর চেয়ে জীবনে পরম পাওয়া আমার কাছে আর কিছু নেই। উপরের মালিকই জানেন, আমি তোমার ভালো চাই, না মন্দ চাই। আমি তোমাকে এখনও বলছি উপরের শর্তগুলো পড়ে তোমার মত বদলান উচিত। কারণ এর ফলে তোমার ও আমার দুজনেরই ভালো হবে। তোমার জহির ভাইয়ের সঙ্গে যাতে বিয়ে না হয় তার ব্যবস্থা করে অন্য কোনো সুন্দর স্বাস্থবান ও চরিত্রবান ছেলের সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে ইনশাআল্লাহ পারব। এই পত্র পড়ে তোমার শুভবুদ্ধির উদয় হোক আল্লাহপাকের দরবারে সেই দোয়া করে শেষ করছি। আল্লাহ হাফিজ।
ইতি—-
কিছুদিন আগে সেলিনা আমাকে একটা ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিল, এটা আমাদের তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়াদের। উনি একজন দারোগা। আব্বার এক মক্কেলের কেসের ব্যাপারে ইনকোয়ারী করেছিলেন বলে রাজ সাক্ষী হয়েছিলেন। সেই থেকে আব্বার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। আমাকে উনি ও ওঁর স্ত্রী খুব ভালোবাসেন। ওঁদের একমাত্র মেয়ে জোবেদা আমার সহপাঠী ও প্রিয় বান্ধবী। এটা তাদেরই নাম্বার। যদি কোনো কারণে আমাকে দরকার হয়, তবে এই নাম্বারে ডায়েল করে বলবেন, জোবেদার বান্ধবীকে চাই। তাহলে যেই ফোন ধরুক না কেন, আমাকে ডেকে দেবেন। কারণ আপনার ও আমার ব্যাপারটা ওঁরা জানেন। আমি ওঁদেরকে এ রকম ভাবে ফোন আসার কথা বলে রেখেছি। দারোগার ফোন নাম্বার বলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সেলিনা নিজেদের ফোন নাম্বার না দিয়ে অন্যের নাম্বার কেন দিল তা বুঝতে পেরেও কি উত্তর দেয় শোনার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের নাম্বার দিলে না কেন?
সেলিনা মাথা নিচু করে উত্তর দিল, আমার প্রেমিক তা জানেন।
এই পত্র লেখার পর প্রায় দশ বার দিন তার সঙ্গে যোগযোগ না হওয়ায় একদিন ঐ নাম্বারে ফোন করলাম। দুবার রিং হওয়ার পর একজন বয়স্ক মহিলা বলে মনে হল রিসিভার তুলে বললেন, হ্যাল্লো, এটা দারোগা সাহেবের বাসা, কাকে চান?
প্রথমে ওঁর গলার ভারী আওয়াজ শুনে ভড়কে যাই। পরে আমতা আমতা করে বললাম, দয়া করে জোবেদার বান্ধবীকে একটু ডেকে দিতে পারেন?
আচ্ছা ধরুন বলে উনি রিসিভারটা পাশে রেখে হেঁকে বললেন, জোবেদা, তোর বান্ধবীকে কে যেন ফোনে ডাকছে।
আমি সব কথা শুনতে পেলাম।
প্রায় দুতিন মিনিট পর একটা মেয়ে রিসিভার তুলে হ্যালো, আমি সেলিনা বলছি বলে একটু হেসে উঠল।
আমি বললাম, আপিন সেলিনা নন, জোবেদা।
আমার কথা শুনে যে ফোন ধরেছিল সে আরও একটু জোরে হেসে উঠে বলল, নে ধর, তোর হবু বর নকল ধরে ফেলেছে।
সেলিনা বলল, কি যা তা বকছিস? উনি শুনতে পেলে খুব রেগে যাবেন।
আমি যে তাদের সব কথা শুনতে পাচ্ছি সেদিকে কারুরই খেয়াল নেই। সেলিনা ফোন ধরে আস সালামু আলায়কুম বলে বলল, আজ আমার কি সৌভাগ্য হতভাগীকে এতদিন পর ফোন করেছেন।
আমি ওয়া আলায়কুম আস সালাম বলে বললাম, কাল সকাল ৯টায় দোকানে আসবে। তারপর ফোন ছেড়ে দিলাম। ভাবলাম, ফোন নাম্বার জানা থাকলে লাইন কেটে গেছে মনে করে ফোন করত।
পরের দিন সকালে সাহেবের গাড়ি আমাকে নিউমার্কেটের গেটে পৌঁছে দিয়ে গেল। আমি গেটের বাইরের দোকান থেকে সিগারেট কিনছি, এমন সময় সেলিনা আমাকে সালাম দিল। আমি সালামের জওয়াব দিয়ে তাকে দোকানে আসতে বলে চলে আসি। আকবর নামে একটা ছেলে দোকানের ফাইফরমাস খাটে। সে দোকান ঝাঁট দিয়ে কলসি নিয়ে খাবার পানি আনতে গেল। আমি আগরবাতি জ্বেলে চেয়ারে বসলাম। তখন পর্যন্ত আমার সহকর্মীরা কেউ আসেনি।