তিনি বলেন,–কোন আসক্তি নাই আমাতে, পরে খেদ হয়, হায় মায়া! কোথায় আমি…(হঠাৎ গলা ফিরাইয়া) ভাল আছেন স্যার, এই এমনই গল্প হইতেছে…হঁহারা কত বড় ঘর! ভঁহাকে স্যার বলিলে আমি ছোট হই না, কোন অন্যায় হয় না…হ্যাঁ বলিতে ভুলিয়াছি, ঐ শালা…এমন চেঁচাইতেছে…দেশ যে উদ্ধার হইল…তাহাতে আর ভুলিব না!
হ্যাঁ একবার আমার বড় সাধ হয় যে আমিও ঐ রূপ মদীয় স্ত্রীর মতন অনুভব লাভ করি, তাহাকে আমার মনোবাসনা বলি, একদিন তিনি ছুটিয়া আসিলেন, তাঁহার কেশভার রুক্ষ অঞ্চল মৃত্তিকায়ে, বসনে রক্তচিহ্ন, হস্তদ্বয় আঠা আঠা, তিনি যেন সন্ন্যাসিনী, চক্ষুদ্বয় প্রজ্জ্বলিত দিব্য,…আমি ঘড়িতে দম দিতেছিলাম–তদ্দর্শনে ঘড়ি রাখিলাম, আঃ সেই হাত আমায় স্পর্শ করিল, সেই স্পর্শ ও গন্ধে এক মহাদুৰ্ব্বিপাক, এক দণ্ডকারণ্য, এক মানস-সরোবর, তাতাথৈ দিয়া উঠিল, এক হংস হত্যা হইল, এক হংস জীবিত হইল, আমি স্রোতাঘাতচকিত নুড়িবৎ, আমি পিপীলিকাবৎ, আমি মেঘবৎ, আমি ব্যাঘ্রবৎ, আমি বিদ্যুৎ, এই প্রথম আমি পুরুষ হইলাম! তাঁহার হস্তগন্ধে আমার চেনা-চেতন সমাসীন হওয়ত অট্টহাস্য করিল! বহির্জগৎ নিৰ্বাপিত হইল। ক্রমে শুনিলাম মদীয় স্ত্রী সন্ন্যাসিনীরূপে খেদোক্তি করিতেছেন, হায় আমি রমণী নই!
এই উক্তি ক্রমশ সকলের, যে যাহারা এখানে, যে যাহারা, ইতস্তত, সকলের অগোচরেই আপন আপন ত্বকে, অন্তরে, কন্দরে সর্বত্রেই অনুরণিত হইল, তৎপ্রভাবে, যুগপৎ সকলেই অনলাকার প্রতি, যে দিব্য প্রভাময়ী, যে অভিজাত, সৌন্দর্যে ময়ূর, যে বিশুদ্ধ, যাহাকে একমাত্র শিশু কিশোররা কামনা করিতে দ্বিধা করে না, শিশুরা আধোস্বরে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশে; আর যে কিশোরদের সেই কামনা ঈদৃশ, যেন ভাই হই! অলোকা আপনারে বিকিরণ করিতে আছে, তাহার অত্যুৎকৃষ্ট লিওঁ সিল্কের কৃষ্ণ আলডিহাইড সবুজের ঘোর পার্পল ফুলকারি গ্রীবাছাড়া খানিক আবক্ষ জুনিয়ার মিস ধরনের ফ্রকে উল্লেখিত আছে।
সেই অলোকা এক আশ্চর্য্য!
এখন সে আপনার কণ্ঠের মুক্তামালায় হাত দিল–তাহার বাহু কি অপরূপ ব্ৰণবিরহিত–টিকার দাগ নাই! সে স্থাপত্যকে অভিনব করিয়াছে! অলোকার অধরদ্বয় এমন, যেমত সে ইহা কহিতে আছে যে আঃ অবশ্যম্ভাবিতা, আমার তোমাতে মতি নাই, অপার করুণানিধি ভগবান আমায় যে ভীতি দিয়াছেন, আমি অলৌকিক সৌভাগ্যবতী, হে নির্ঘাত অবশ্যম্ভাবিতা, তোমাতে আমার লোলুপতা নাই, হে হাসনুহানা, তোমাতে অনবদ্যতা সুচির, তুমি কলমের আঁচড়ে প্রস্ফুটিত হইলেও আমি কণ্টকিত, হে কামিনী তোমাতে মোহিনী মায়া অমোঘ, যুবতীর কবরীতে থাকিলেও আমি ভীত! ভীতিতেই আমি বৈদিক!
এবং তদীয় এবম্ভূত খেদে সেই জন্মরহস্য আমার চক্ষুৰ্বয় সার্সিতে দেখিয়া আরক্তিম বুঝিলাম, কে যেমন আমার অভ্যন্তরে, আমার অভ্যন্তর গঙ্গাতীরে বসিয়া রামপ্রসাদ গাহিতেছে, আনন্দময়ী নিরানন্দ কর না, যে এবং গীত থামাইয়া ঐ গায়ক কহিলেন,–মন্ত্র লও মন্ত্র লও, তোমার স্ত্রী যখন এক রমণীগর্ভস্যুত মৃত সন্তানে চমৎকৃত হয়, ইহাতে যে, আশ্চর্য্য হয় যে, রমণীগর্ভে মৃত্যু প্রবেশ করে, রমণী কি বিস্ময়রহস্য অহহা সত্য! তৎপ্রভাবে যখন তোমার সহধর্মিণী ব্যামোহাবিষ্ট, তখন ইহা কহি। নাই; অহো সত্য! এখন সময় আগত, শীঘ্রই মন্ত্র লও, অতএব…আমরা গুরুর সন্ধান করিতেছি!
.
পুলিশ রিপোর্ট বলে যে, তুমি জানলায় থাকিয়া, তোমার অজস্র কেশরাশিতে তোমার চিরুণী যায় আসে–যেমন তুমি সেই গাড়ী দুইটির মারাত্মক দুর্ঘটনা দেখ, যে দুইটি তোমার জানলার তলা দিয়া প্রায় ৮০ হইতে ১০০ স্পিডে যাইত। যেমন মোটর বাইকের দুর্ঘটনাও দেখিয়াছ, তেমনি তুমি সেই সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দেখিতেছিলে, অথচ তুমি ইতিহাস ভারাক্রান্ত কর নাই। বিলি তুমি সেখানে যাও যেখানে তোমার সম্মুখে পশ্চাতে অগণন খোঁজা, তাহারা কি অভাবনীয় গৰ্ব্বিত, কেন না তোমার দেহরক্ষী তাহারা!…এখন যে তরুণ সম্প্রতি তোমার কারণে আত্মহত্যা করিতে চেষ্টা করিয়াছে তাহাকে কি দেখিবে?
বিলি জানাইল,–আমি তণ্ডুবণে কহিলাম,-মন্দ কি! তরুণ আনীত হইল। যাহারে আমি কখনও, কোন বিবাহ বাড়ীতে, কোন জন্মতিথি, কোনও নিমন্ত্রণে কোনও একজিবিশানে (!) বায়োস্কোপে পথে ঘাটে বাসে ট্রামে কোথাও দেখি নাই–তবে পূৰ্ব্ব তরুণদ্বয় যাহারা আমার কারণে আত্মহত্যা করিতে চেষ্টা করিয়াছে অতএব, তাই সে পরিচিত–যেন আমি মৃদু হাসিলাম, সেই তরুণ কিছু পরিশ্রান্ত! সে আমার প্রতি গভীরভাবে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চাহিয়াছিল, সে সন্ত্রাসে কম্পিত, আশ্চৰ্য্য সেই তরুণ আমাকে কখনও দেখে নাই! আমি কহিলাম,এখন সে যাইতে পারে।
ইহাতে সহচরীবৃন্দ সকলেই আপন আপন অলঙ্কার হইতে অতীব পুরাতন হইয়াছিল, কহিল, আমরা লাভ ম্যারেজ শুনিয়াছি–দৈব দুর্বিপাক শুনিয়াছি, কিন্তু বিলিকে শুনি নাই: যে আর ঐ সহচরীবৃন্দের মধ্যে যাহারা অম্লতা, ঋতুমতী, তাহারা ঐ বিলিকে সম্যক আঘ্রাণ করিল, যাহাতে অনুতাপ নাই, এই সেই রমণী যাহার অস্তিত্ব অনুষঙ্গ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় না। এই রমণী আমাদের আরাধ্যা! ভাগ্যশ আমরা রিখিয়ায় তাই এই রমণীরে সহজে বুঝিলাম!–ইহার পরক্ষণেই ইহারা সকলেই নৃত্যের জন্য উন্মুখ হইয়াছিল।